সোহম কর: আজ আকাশ দেখার দিন। নীল আকাশে সাদা মেঘের গলি দিয়ে রং-বেরঙের ঘুড়িদের উড়ে বেড়ানোর দিন। আজ বিশ্বকর্মা পুজো। বিশ্বকর্মা পুজো মানেই দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি। এ বছর আবার মহালয়া দোসর। তবে মলমাসের চক্করে দুগ্গামায়ের জন্য অপেক্ষাটা এবার বেশ লম্বা। অন্যান্য বছর এখন থেকেই যে প্রশ্নটা বাঙালির মনে উঁকি দেয়, পুজোয় কি বৃষ্টি হবে? এবার প্রশ্নটা অন্য। করোনা ভাইরাস আর কতদিন থাকবে? বাংলার ভাগ্যাকাশে করোনার ভ্রুকুটি কতদিন থাকবে সেটা তো সময় বলবে, কিন্তু বাঙালির ছাদ থেকে আজ ‘ভোকাট্টা’ শব্দে পাড়ার অলিগলি মুখরিত হতেই পারে। যেমন মুখরিত হতো সঙ্গীতশিল্পী অনুপম রায়ের ছোটবেলা। ‘ঘুড়ি ওড়ানোর অনেকগুলো পর্যায় আছে। একটা হল, যখন কেউ ঘুড়ি ওড়াতে পারে না, কিন্তু প্রচুর ঘুড়ি-লাটাই কেনা হয় এবং সেগুলো নিয়ে সারাটা বিকেল ছাদে উঠে ওড়ানোর চেষ্টা চলে। ঘুড়ি উড়ছে না বলে একটা মারাত্মক হতাশা তৈরি হয়। এই অবস্থার মধ্যে আমাকে বহুদিন কাটাতে হয়েছে। তখন আমার বন্ধুরা দারুণ ঘুড়ি ওড়াতে পারে। সেই নিয়ে বাড়িতে ঝামেলা করছি। বাবাকে বলছি সাহায্য করার জন্য,’ বলছিলেন অনুপম। তারপর একটা সময় এল যখন অনুপম ঘুড়ি ওড়াতে শিখে গেলেন। তখন ক্লাস সিক্স কি সেভেনে পড়েন তিনি। ‘এরপর হল প্যাঁচ কাটা। আমি প্যাঁচ লড়তে পারতাম না। মাঞ্জা দেওয়া সুতোতে আমার হাত কেটে যেত। এদিকে সাদা সুতোতে ওড়ালেই, লোকে আমার ঘুড়ি কেটে দিয়ে চলে যেত। একবার ঠিক হল, আমিও মাঞ্জা দেব। বাড়িতে কাচের টুকরো নিয়ে এসে, খাটের ছত্রীতে সুতো বেঁধে অনেক চেষ্টা-চরিত্র চলল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুরো বিষয়টাই ভেস্তে গেল। হাত কেটে বসে থাকলাম,’ ছেলেবেলার স্মৃতি উজ্জ্বল অনুপমের মনে।
এভাবেই চলতে থাকে অনুপমের সাদামাটা ঘুড়ি-জীবন। তখন সাদা সুতোতে ঘুড়ি ওড়ানো ছাড়া আর কিছুই হয়ে উঠছে না এই গায়কের পক্ষে। ‘আমি বুঝে গেলাম প্যাঁচ দেওয়া আমার কম্ম নয়। ইলেভেন বা টুয়েলভে যেরকম শান্তির দূতেরা সাদা পতাকা ওড়ায়, আমিও তেমন সাদা সুতোতে ঘুড়ি ওড়াতে থাকলাম। আমার দাবি ছিল একটাই কেউ যেন আমার ঘুড়ি না কাটে। অফ সিজনে ছাদে গিয়ে ঘুড়ি ওড়াতাম কারণ তখন আকাশে কেউ থাকত না। মনের আনন্দে অনেক দূর ঘুড়ি ওড়ানো যেত,’ বলছিলেন গায়ক। বিশ্বকর্মা পুজোর সময় নানা রকমের ঘুড়ি কিনে ওড়ানোর মধ্যে আলাদা একটা উন্মাদনা ছিল। অন্যের ঘুড়ি কেটে গেলে সবাই যখন সেই ঘুড়ির পিছনে দৌড়ে যেত অনুপমও সেই দৌড়ে বেশ কয়েকবার পা মিলিয়েছেন। ‘ফিরিয়ে দেওয়ার গান’ বলে অনুপম একটি গান লিখেছিলেন। সেখানে একটি লাইন ছিল, ‘আমাকে ঘুড়ি ভেবে ওড়াস না, নরম আঙুল কেটে যাবে’। ‘এটা তো আসলে প্রেমের গান। একজন ঘুড়ি ওড়াচ্ছে আর একজন ঘুড়ি হয়ে গিয়েছে। যে ওড়াচ্ছে, সে সম্পর্কটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। ছোটবেলার কোনও নির্দিষ্ট স্মৃতি এর সঙ্গে নেই,’ বলছিলেন অনুপম। তবে এই বছর ঘুড়ি ওড়ানোর কোনও পরিকল্পনা নেই। এখন আর ছেলেবেলার সেই উন্মাদনাও নেই অনুপমের।