কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
শুরু থেকেই কঙ্গনা স্পষ্টবাদী। অদম্য তাঁর সাহস। তাই চোদ্দো বছরের কেরিয়ারে বিতর্ক তাঁর চিরসঙ্গী হয়েই থেকেছে। অনেকে বলেন ইন্ডাস্ট্রিতে ‘আউটসাইডার’ বলেই তিনি এত সহজে অপ্রিয় সত্য কথা ফাঁস করতে পারেন। বিগত কয়েক বছরে স্বজনপোষণ বিতর্ককে প্রায় একার কাঁধে টেনে নিয়ে গিয়ে বারবার বলিউডের অন্ধকার দিকটি জনসাধারণের সামনে তুলে ধরেছেন কঙ্গনা। সাহস জুগিয়েছেন বাকিদেরও। ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে হৃতিক রোশন থেকে শুরু করে আদিত্য পাঞ্চোলি বা অধ্যয়ন সুমনের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ করেছেন। আর সুশান্তের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে তো বিগত কয়েক মাসে ট্যুইটারে একাধিক সেলিব্রিটি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন পর্দার ‘ঝাঁসির রানি’। অতীত হাতড়ালে দেখা যায় কখনও তিনি ছিনিয়ে নিচ্ছেন পরিচালকের ব্যাটন তো কখনও প্রকাশ্যে সাংবাদিককেই দুষছেন। দিনে দিনে বাড়িয়েছেন শত্রু সংখ্যা। নামের সঙ্গে উপরি পাওনা হিসেবে জুটেছে ‘মানসিক সমস্যা’র তকমা। তাঁকে নাকি ‘আত্মহত্যা’র পরামর্শও দেওয়া হয়েছে! তাঁর ওয়াই ক্যাটাগরির সুরক্ষা বলয় লাগাতার মৃত্যু হুমকি রুখতে পারবে কিনা তা নিয়ে হয়তো কঙ্গনার নিজেরও সংশয় রয়েছে। আজকে সত্যিই ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর বন্ধুর সংখ্যা কম। ভবিষ্যতে হয়তো আরও কমবে। কেউ বলছেন কেরিয়ারে প্রচারের আলো টানতে সবটাই তাঁর কৌশল মাত্র। ফলে ক্রমাগত বিতর্কের জালে ঢাকা পড়েছে তাঁর প্রশংসিত ছবি বা জাতীয় পুরস্কারের খেতাব।
ভারাক্রান্ত হৃদয়ে গত সোমবার মুম্বই ছেড়ে আবার মানালিতে নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন কঙ্গনা। আর তাঁর এই অপ্রত্যাশিত ‘রণ ছোড়’ পদক্ষেপ আজকে তাঁর কেরিয়ারকেই বড়সড় প্রশ্ন চিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। মুম্বইকে ‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর’এর সঙ্গে তুলনা করে শিবসেনার আক্রমণের মুখে পড়েছেন তিনি। ভাঙা হয়েছে অভিনেত্রীর অফিস। আর যে ইন্ডাস্ট্রি থেকে লক্ষ্মী উপার্জন করছেন, যে শহরে থেকে তাঁর প্রতিপত্তি ,আজ সেই মুম্বইয়ের দিকেই আঙুল তোলায় মুম্বইকররাও এখন কঙ্গনার উপরে বিরক্ত। অভিনেতা প্রকাশ রাজ পর্যন্ত কঙ্গনাকে ট্যুইটে বিদ্ধ করে লিখেছেন, ‘ঝাঁসির রানির চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলে কঙ্গনা যদি নিজেকে রানি ভেবে ফেলেন, তাহলে শাহরুখ খানও অশোক বা রণবীর সিংও বাজিরাও।’ কঙ্গনা নিজে একসময় মাদকাসক্তির কথা স্বীকার করেছিলেন। তাহলে কোন যুক্তিতে তিনি রণবীর সিং, ভিকি কৌশল বা রণবীর কাপুরের মাদক পরীক্ষার দাবি করেন এই মর্মেও উঠছে প্রশ্ন। কেন তাহলে কঙ্গনার মাদকসেবন নিয়েও তদন্ত হবে না, তা নিয়েও বিতর্ক দানা বাঁধছে। সব মিলিয়ে আগামী দিনে তাঁর লড়াই যে আরও কঠিন হতে চলেছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
দেখা যাক এখন কী কী ছবি রয়েছে তাঁর হাতে? কঙ্গনার শেষ ছবি ‘পঙ্গা’ সমালোচকমহলে প্রশংসিত হলেও এই ছবিকে যে কোণঠাসার চেষ্টা করা হয়েছিল, তা কঙ্গনা নিজেই অভিযোগ করেছেন। প্রয়াত তামিল নেত্রী জয়ললিতার বায়োপিক ‘থালাইভি’র কাজ এখনও অনেকটা বাকি। ‘তেজস’ এর কাজ শুরু হতে পারে আগামী ডিসেম্বরে। এই ছবিতে তাঁকে একজন এয়ার ফোর্স পাইলটের ভূমিকায় দেখা যাবে। এছাড়াও রয়েছে ‘ধক্কড়’ যেখানে কঙ্গনা থাকবেন অ্যাকশন অবতারে। কিন্তু সূত্রের খবর, এখন তাঁর সঙ্গে অনেকেই নাকি কাজ করতে চাইছেন না। তাঁকে কোণঠাসা করতে বড় বড় প্রযোজনা সংস্থা নাকি ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করছে। আর এ কথা সত্যি হলে অবশ্যই ভবিষ্যতে কঙ্গনার ছবির সংখ্যা কমবে।
মহেশ ভাট ক্যাম্পের ‘গ্যাংস্টার’ ছবি দিয়ে রুপোলি পর্দায় তাঁর হাতেখড়ি। ‘ফ্যাশন’, ‘কুইন’ ও ‘তনু ওয়েডস মনু রিটার্নস’-এর জন্য তিন বার জাতীয় পুরস্কার জয়। কঙ্গনা বলেন, তিনি ইন্ডাস্ট্রির ‘ক্যাম্প’ রাজনীতির বিরুদ্ধে। বরং বলা যায় আধুনিক নারীকেন্দ্রিক হিন্দি ছবির নতুন সংজ্ঞা তৈরিতে তাঁর প্রভাব অনেকটাই। ইন্ডাস্ট্রির সতীর্থদের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন বলে স্বাভাবিকভাবেই অনেকে তাঁকে এড়িয়ে চলেন। ফলে সাম্প্রতিক ইস্যুতেও কঙ্গনা কার্যত বান্ধবহীন। ইদানীং শোনা যাচ্ছে, ‘মেন্টাল’ কঙ্গনার ভবিষ্যৎ নাকি রাজনীতির ময়দান। মানালির বাড়িতে বসে আপাতত কি ভবিষ্যতের ঘুঁটিই সাজাচ্ছেন তিনি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও তো ফিরে আসা যায়। তাই কঙ্গনা রানাওয়াত ভবিষ্যতের ফিনিক্স হয়ে উঠতে পারবেন কিনা সেটাই এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন।