শুভম বসু: বন্ধ সিনেমা হল। এই সুযোগে অনলাইন স্ট্রিমিং সাইটগুলোর রমরমা। কিন্তু, সেখানকার স্মার্ট ও ঝা চকচকে উপস্থাপনের বাড়বাড়ন্ত একঘেয়েমি আনতে বাধ্য। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে কাস্টিং ডিরেক্টর হানি ত্রেহান পরিচালিত প্রথম ছবি ‘রাত আকেলি হ্যায়’ ফার্স্ট ডিভিশনে উত্তীর্ণ। স্মার্ট হওয়ার হাতছানি উপেক্ষা করে নিও নোয়া জ্যঁরের ব্যাকরণ মেনে একটি খাঁটি ‘হু ডান ইট’ তৈরি করেছেন তিনি। রহস্য রোমাঞ্চ, গোয়েন্দা সিরিজ ভক্তদের যা ভালো লাগবেই।
উত্তরপ্রদেশের কানপুর ও মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রের মধ্যেই ঘোরাফেরা করেছে ১৪৯ মিনিটের এই ছবির গল্প। শহরের প্রৌঢ় ‘বাহুবলী’ রঘুবীর সিং (খালিদ ত্যাব্জি) দ্বিতীয় বিয়ের রাতে রহস্যজনকভাবে খুন হন। তদন্তভার যায় ইনস্পেক্টর জটিল যাদবের (নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি) কাঁধে। পরিবার থেকে পুলিস— সবার সন্দেহ খুন করেছে রঘুবীরের রক্ষিতা তথা সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী রাধা (রাধিকা আপ্তে)। সেই কি খুনি? নাকি খুন করেছে অন্য কেউ? এই প্লটকেই ধ্রুবক করে ছবির বাকি অংশ সাজিয়েছেন স্মিতা সিং। তাঁর গল্প, চিত্রনাট্য ও সংলাপ একবারও খুনির আভাস পর্যন্ত দেয়নি। এর জন্য অবশ্যই প্রশংসা প্রাপ্য তাঁর। তবে ২ ঘণ্টা ২৯ মিনিটের ‘হু ডান ইট’ টানটান রাখতে কিন্তু আরও বেশ কিছুটা রোমাঞ্চের প্রয়োজন ছিল। স্মিতা ও হানির নম্বর এখানে কিছুটা কাটতেই হচ্ছে। পরিচালক হানি ত্রেহান বলিউডের বিখ্যাত কাস্টিং ডিরেক্টর। কাজ করেছেন বিশাল ভরদ্বাজ, অভিষেক চৌবের মতো পরিচালকদের সঙ্গে। তাঁদের টেকনিক ভালোই রপ্ত করেছেন পরিচালক। কিন্তু, এই ধরনের ছবি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল উপাদান ‘রোমাঞ্চ’ রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ফলে গতি রুদ্ধ হয়েছে। গত বছর আন্তর্জাতিক সিনে মহলে হইচই ফেলে দেওয়া ‘নাইভস আউট’ ছবিটির নির্যাসও মিলেছে ‘রাত আকেলি হ্যায়’-তে। তবে পরিচালক, চিত্রনাট্যকারের বিরুদ্ধে টুকলির অভিযোগ তোলার সুযোগ নেই।
চিত্রনাট্যের ফাঁক ফোঁকড় কিছুটা হলেও ঢেকে গিয়েছে অভিনয় গুণে। অভিনেতা নির্বাচনে আসল বাজিটি মেরেছেন পরিচালক। কাজে এসেছে দীর্ঘদিন কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা। কার্যত প্রত্যেক অভিনেতাই মানানসই। পরিশীলিত অভিনয় দিয়েই ছোট শহরের এক পুলিস অফিসারকে কীভাবে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ করে তোলা যায়, দেখিয়ে দিলেন নওয়াজ। তাঁর বিপরীতে রাধিকা আপ্তের থেকেও চোখ ফেরানো যায় না। হলফ করে বলা যায়, এই চরিত্র করতে গেলে অনেক জাঁদরেল অভিনেত্রীকেই মুশকিলে পড়তে হতো। বিশেষ করে নওয়াজের সঙ্গে এক ফ্রেমে থাকাটা বেশ ঝুঁকির। কিন্তু, রাধিকা সেই কাজটি করেছেন স্বভাবিক অভিনয় দিয়েই। ফলে কোথাও তাঁকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি। রাধিকা ও নওয়াজের একসঙ্গে ক্লোজ আপ শটগুলো উঠতি অভিনেতাদের কাছে ‘বর্ণপরিচয়’-এর মর্যাদা পাওয়া উচিত। পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতাদের মধ্যে চোখে পড়েছেন শ্বেতা ত্রিপাঠী, পদ্মাবতী রাও, ইলা অরুণ ও আদিত্য শ্রীবাস্তব। তিগমাংশু ধুলিয়াও নিরাশ করেননি। পরিচারিকা চুন্নির চরিত্রে রিয়া শুক্লাও বেশ ভালো।
ছবির সম্পাদনা আরও টানটান হতেই পারত। এমন বেশ কিছু দৃশ্য রয়েছে যা দর্শকের বিরক্তির কারণ হতে পারে। সেগুলোকে ছেঁটে ছবির দৈর্ঘ্য কমপক্ষে আরও মিনিট দশেক কমানো যেত। সেক্ষেত্রে চিত্রনাট্যের আগলও এতটা আলগা লাগত না। মেঘদীপ বসু ও স্নেহা খানওয়ালকারের সঙ্গীত মোটের উপর জুতসই। চমক রয়েছে ছবির সিনেমাটোগ্রাফিতে। প্রথম সিকোয়েন্সই চমকপ্রদ। এই ছবি রুপোলি পর্দায় দেখতে পেলে সিনেমাটোগ্রাফির ক্ষেত্রে সুবিচার হতো। দর্শকদের উপদেশ, সম্ভব হলে ছবিটি ঘরের আলো নিভিয়ে স্মার্ট টিভিতে দেখুন। চর্মচক্ষু স্বস্তি পাবে।