কর্মপ্রার্থীরা বেশ কিছু সুযোগের সংবাদে আনন্দিত হবেন। বিদ্যার্থীরা পরিশ্রমের সুফল নিশ্চয় পাবে। ভুল সিদ্ধান্ত থেকে ... বিশদ
ক্রমে ক্রমে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অবিনাশ বুঝতে পারে পৌরাণিক চরিত্র রাবণের সঙ্গে কোথাও না কোথাও যেন সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে এই খুনের নির্দেশ। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, দম্ভ, ঈর্ষা, ভয়, বুদ্ধি, সচেতনতা এবং ঘৃণা— এই হল মানুষের দশটি আবেগ বা দুর্বলতা। এই আবেগ জয় করেই রাবণ হয়ে উঠেছিলেন মহাজ্ঞানী! রাবণের দশটি মাথা এই দশটি আবেগেরই রূপক। অথচ এই রূপকের সঙ্গে খুন হওয়া মানুষগুলির সম্পর্ক কোথায়?
ইতিমধ্যে মুম্বই থেকে বদলি নিয়ে দিল্লি ক্রাইম ব্রাঞ্চে যোগ দেয় ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন ইনস্পেক্টর কবীর সাওয়ান্ত (অমিত সাধ)। সঙ্গে আসে সাব ইনস্পেক্টর প্রকাশ কাম্বলে (হৃষীকেশ যোশী)। প্রীতপাল সিংয়ের খুনের ঘটনার তদন্ত করার ভার পড়ে কবীরের উপর। কবীর আর প্রকাশের সঙ্গে সত্যান্বেষণে যোগ দেয় দিল্লি ক্রাইম ব্রাঞ্চের সাব ইনস্পেক্টর জয়প্রকাশ (শ্রীকান্ত ভার্মা)। এই টিমের সঙ্গে অবিনাশ নিজেকেও যুক্ত করে ফেলতে সক্ষম হয়। তারপরেই শুরু হয় এক অদ্ভুত মানসিক টানাপোড়েনের খেলা।
কবীর কি এবারও সফল হবে খুনিকে ধরতে? সম্ভব হবে সিয়াকে উদ্ধার করা? সেই উত্তর জানতে হলে দেখতে হবে অ্যামাজন প্রাইম-এর ওয়েব সিরিজ ‘ব্রিদ: ইনটু দ্য শ্যাডোজ’।
‘ব্রিদ’ ফ্র্যাঞ্চাইজির ওয়েব সিরিজের মূলমন্ত্র তিনটি অক্ষর— ‘সন্তান’। অথচ তিন অক্ষরের একটি শব্দের সঙ্গে যেন জড়িয়ে থাকে এক পৃথিবী আবেগ। তাই বলে সন্তানের ভালোর জন্য, সন্তানের প্রাণবায়ুটুকু ধরে রাখার জন্য বাবা-মা কি সব কিছু করতে পারে? এমনকী করতে পারে খুনও?
বারবার এই শ্বাসরোধী প্রশ্নের মুখে আমাদের ঠেলে দেয় ‘ব্রিদ’ সিরিজ।
‘ব্রিদ’ ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রথম সিজন শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। কাহিনীর বুনোট দুর্বল হলেও ব্রিদ-এর প্রথম সিরিজটি মাধবনের অভিনয়ের জোরে পাশ মার্ক নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। তবে দ্বিতীয় মরশুমে ‘ব্রিদ: ইনটু দ্য শ্যাডোজ’ও কিছু ফাঁকফোঁকড় এড়াতে পারেনি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সিরিজ জুড়ে অহেতুক রাবণের অনুষঙ্গ কেন টানা হল তা বোঝা গেল না। বাচ্চা হারানোর পর যে তিন মাস কেটে গিয়েছে তা অভিষেক বচ্চন না বললে দর্শকের মনে হতো দিন তিনেক গড়িয়েছে! এমন কেন হবে? তাছাড়া ওয়েব সিরিজ নির্মাতারা কি বাচ্চাদের খুব বোকা ভাবেন? এক বছর ধরে সিয়া বুঝতেই পারল না কোন ব্যাড অ্যাঙ্কেল তাকে ঘরে বন্দি করে রেখেছে? এমনটা হয়? আর এর ফলেই সিরিজটির পরিণতিও দর্শক আগে থেকে অনুমান করে ফেলতে পারেন। অন্যদিকে আভার কি সারাবছরই নাইট ডিউটি থাকে? অফ ডে নেই? প্রশ্ন আর বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয়। আরও আছে।
লেখিকা নাতাশা হোটেল রুম থেকে বেরিয়ে রাতবিরেতে রাস্তায় এসে দেশলাইয়ের খোঁজ কেন শুরু করল? জয়পুরে অবিনাশের কোথায় ক্লিনিক তা জানতে চাইল না কেন কবীর? ক্রাইমব্রাঞ্চের সিস্টেম হ্যাক করা এতই সহজ? অবিনাশের ফেলে আসা জীবনের কাহিনী হঠাৎ আকাশ থেকে কেন পড়তে শুরু করল তা বোঝা গেল না! এসব প্রশ্ন দূরে সরিয়ে রেখে আসা যাক অভিনয়ের প্রসঙ্গে। এই ওয়েব সিরিজ দিয়েই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অভিষিক্ত হলেন অভিষেক বচ্চন। তাই বলে ১২টা এপিসোড জুড়েই তাঁর অসহ্য আন্ডার অ্যাক্টিং সহ্য করতে হবে? বিশেষ করে নিত্যা মেনন আর অমিত সাধ যখন অভিনয়ে অভিষেককে দশ গোল দিয়েছেন! তাছাড়া এতগুলো এপিসোড কোথাও কোথাও দর্শকের ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিয়েছে বইকি। বিশেষ করে লেখিকার রোড ট্রিপ এককথায় অসহ্য হয়ে উঠেছে। এমনকী, জেবা রিজভির মতো একটি চরিত্রের আমদানি করে কী লাভ হল বোঝা গেল না!
তাই বলে কি ভালো কিছু নেই? আছে। প্রথমত, শৈশবে ভালোবাসা সহানুভূতি না পেলে তা কীভাবে মানসিক সমস্যার জন্ম দেয় তা খুব সুন্দরভাবে বোঝা গিয়েছে। এছাড়া মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার যে একটি অসুখ তাও স্পষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে জনসন ও রনসনের মতো জয়প্রকাশ ও প্রকাশ কাম্বলের জুটি বেশ মজাদার লেগেছে। বিশেষ করে ভাষাগত প্রভেদ নিয়ে দুই সাব ইনস্পেক্টরের কথোপকথন সিরিজের দমবন্ধ ভাব অনেকটাই কাটিয়েছে।
ইনটু দ্য শ্যাডোজ-এর কাহিনীসূত্র আগের সিরিজের ব্রিদ-এর তুলনায় কিছুটা হলেও পোক্ত। তাই ‘শাটার আইল্যান্ড’, ‘দ্য সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্ব’, ‘আইডেন্টিটি’র মতো সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার মুভি দেখার অভিজ্ঞতা না থাকলে ধীরে সুস্থে সময় কেটে যাবে নিশ্চিত।