কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সূচনা। ব্যবসায়ীদের উন্নতির আশা রয়েছে। বিদ্যার্থীদের সাফল্যযোগ আছে। আত্মীয়দের সঙ্গে মনোমালিন্য দেখা দেবে। ... বিশদ
‘উফফফ গাধা! নিবারণের খুনটা শেষ খুন নয়। শেষ খুনটা আজকে হবে। আজ ২২শে শ্রাবণ না?’
প্রবীর রায়চৌধুরী ওরফে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মুখে এই সংলাপ শুনে উল্টোদিকের কাঠের চেয়ারে দড়ি দিয়ে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বাঁধা অভিজিতের সঙ্গে সঙ্গে নড়ে বসেছে প্রেক্ষাগৃহের সিটে বসা দর্শকও। তবে কি...
কিন্তু না। হিসেব পাল্টে গেল শেষ দৃশ্যে ।
‘তোমা হতে বহুদূরে
অজস্র মৃত্যুরে পার হইয়া আসিলাম...
হে বন্ধু বিদায়’
আবৃত্তি করতে করতে নিজেকেই গুলি করে শেষ খুনের হিসেব মিলিয়েছিল ২২শে শ্রাবণের সিরিয়াল কিলার। ২০১১-য় সেই দৃশ্যে ফ্রিজ করে এন্ড ক্রেডিটে চলে গিয়েছিলেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
কাট ২:
রিয়াল/ রিল দুই দিকেই কেটে গিয়েছে ৯টা বছর। নতুন দশকের শুরুতেই ‘২২শে শ্রাবণে’র সিক্যুয়েল/ স্পিন অফ। ঠিক যে জায়গায় ছেড়ে গিয়েছিলেন, সেখান থেকেই পরিচালক শুরু করেছেন ‘দ্বিতীয় পুরুষ’-এর গল্প। আগেরবার ছিল ‘হু ডান ইট’ আর ‘হোয়াই ডান ইট’-এর খেলা। এবারে তিনি দাবার বোর্ড সাজিয়েছেন শুধুমাত্র ‘হোয়াই ডান ইট’-এর উপর ভর করেই।
নয় বছরে ‘সিরিয়াল কিলার স্পেশালিস্ট’ অভিজিৎ পাকড়াশি (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) পরিণত হয়েছে অনেকটা। বদল এসেছে তার কথাবার্তা, চালচলন, কনফিডেন্স— সবেতেই। এখন আর মদ খেয়ে বেসামাল হয়ে বেসিনে বমি করে না সে। তদন্তে অধস্তন রজতকে (গৌরব চট্টোপাধ্যায়) শিক্ষকসুলভ কনফিডেন্সে বুঝিয়ে দেয় ‘পর পর একই প্যাটার্নে খুনি খুন করলেই তাকে সিরিয়াল কিলার বলা যায় না।’ আর তাই ২৫ বছর পরে কলকাতার চায়না টাউনের অলি-গলিতে যখন আবার একই প্যাটার্নের খুনের পুনরাবৃত্তি তখন জেল থেকে সদ্য ছাড়া পাওয়া খোকার গায়ে প্রথমেই ‘সিরিয়াল কিলার’ লেবেল সেঁটে দিতে চায় না অভিজিৎ। রজতকে নিয়ে নেমে পরে ‘হোয়াই ডান ইট’এর জট ছাড়াতে।
ছবি যখন ‘২২শে শ্রাবণ’এর স্পিন অফ, তখন প্রতি মুহূর্তে দর্শকের মনে তুলনা আসবেই। আগের মতো এবারও কি সাসপেন্স উঠল তুঙ্গে? অমৃতা কি এই ন’বছরে বিরিয়ানি ছেড়ে ডাল ভাতে মন দিতে পেরেছে পুরোপুরি? এ সব প্রশ্ন তো আছেই। সঙ্গে যোগ হয়েছে কিছু নতুন কৌতূহল। আর সেটা বিশেষ করে ছবির ট্রেলার বেরনোর পর থেকে ‘খোকা’কে নিয়ে যাবতীয় হইচইকে ঘিরে।
থ্রিলার হিসেবে এই ছবির প্রথমার্ধ বেশ ঢিমেতালে। বিরতির পর বরং গতি পেয়েছে চিত্রনাট্য। প্রথম ছবির মতোই এই ছবিরও জিয়নকাঠি লুকিয়ে সেই ফেস-অফ’এ। এখন সেই ফেস-অফ দেখে দর্শক চমকে উঠবেন, না অন্তমিলের হিসেবে গরমিল খুঁজবেন সেটা তাঁদের ওপর। আর পরিচালক শেষ বলে ছয় মারতে পারলেন কিনা সেটাও এর উপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল।
এই ছবির মূল কাণ্ডারি অভিজিৎ। একদিকে দক্ষ পুলিস অফিসারের শক্ত চেহারা, অন্যদিকে অমৃতার (রাইমা সেন) সঙ্গে দাম্পত্য জীবনে অহরহ কলহের বিষণ্ণতা— সবটাই পরমব্রতর অভিনয়ে সমান বিশ্বাসযোগ্য। এই ছবিতে দু’জন ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। অনির্বাণ ভট্টাচার্য আর ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়। ১৫-১৬ বছর বয়সি খোকা চরম নৃশংসতায় একটার পর একটা খুন করে নিজের সই রেখে যায়, এই ভূমিকায় ঋতব্রতর অভিনয় এতটাই সাবলীল যে তাঁকে দেখে ভয় করবেই। আর ততটাই গা শির শির করিয়ে দেবেন খুন করে ছাদে পায়চারি করতে করতে ‘তু হাঁ কর ইয়া না কর তু হ্যায় মেরি কিরণ’ গুনগুন করতে থাকা অনির্বাণ ভট্টাচার্য। সূর্য (আবির চট্টোপাধ্যায়) আর অমৃতা সিক্যুয়েলের তাগিদে ফিরেছেন ঠিকই, কিন্তু ওইটুকুই। বিরিয়ানির স্বাদ তাই অধরাই থেকে যাবে। গৌরব চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর প্রেমিকার চরিত্রে ঋদ্ধিমা ঘোষ চট্টোপাধ্যায় মানানসই হলেও বিশেষ কিছু করার ছিল না। আর এক পুলিস অফিসারের চরিত্রে বাবুল সুপ্রিয়র অভিনয়ও বড্ড চড়া। বরং এদের চেয়ে অনেক বেশি করে ‘দ্বিতীয় পুরুষ’-এ রয়ে গিয়েছে প্রবীর রায়চৌধুরীর ছাপ। পরিচালক বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রবীরের মৃত্যুর নয় বছর পরেও তাকে বাদ দিয়ে ‘জিয়া নস্ট্যাল’ সম্ভব নয়।
চিত্রনাট্যে বেশ কিছু ফাঁক ফোকর থাকলেও ছবির স্ট্রং পয়েন্ট সংলাপ। এবারের পাঞ্চলাইনগুলো প্রায় সবটাই বসেছে অভিজিতের মুখে। আধো আলো- আধো ছায়া মাখা ট্যাংরার অলি-গলিতে চেজ সিকোয়েন্স আর খুনের দৃশ্য সৌমিক হালদারের ক্যামেরার কারিকুরিতে দেখতে বেশ লাগবে। কিন্তু অনুপম রায়ের সুরে ছবির গান ছাপ ফেলেতে পারেনি। তাই সিক্যুয়েলের শেষে ‘শীতের বোতাম আটকে নিয়ে সঙ্গী হবে কে’র চেয়ে আজও এগিয়ে থাকবে ‘এই বুঝি তল পেলে ফের হারালে’।
শীতের ছুটি, সাসপেন্স, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, স্পিন অফ – এই চারের কম্বিনেশনের প্রভাবে বক্স অফিসের স্কোর কী দাঁড়াল সেটা সময় বলবে। আর ইতিমধ্যে দর্শকও খুঁজে নেবেন মেনুতে তাঁদের প্রিয় ডিশ কোনটা— ভাত-ডাল, বিরিয়ানি নাকি চিকেন চাউমিন আর চিলি ফিশ?