সোহম কর: বাংলার শীত মাঝেমধ্যেই বসন্তের মতো আচরণ করে। কিন্তু বাঙালির এক হার্টথ্রবের জীবন জুড়ে বসন্তসেনাদের আধিপত্য। তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। রবিবার ৮৬ বছরে পা দিলেন চিরতরুণ অভিনেতা। আর এই দিনটাকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল সৌমিত্রর বায়োপিকের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় পর্দার প্রথম ‘ফেলুদা’ সৌমিত্রর বায়োপিক হচ্ছে এ খবর আগেই প্রকাশিত হয়েছে। তখন থেকেই আগ্রহ ছিল কে এই অভিনেতার তরুণ বয়সের চরিত্রে অভিনয় করবেন, তা নিয়ে। এদিনে জানা গেল সেই গুরুভার কাঁধে তুলে নিয়েছেন যিশু সেনগুপ্ত। অ্যাকাডেমির সাজঘরে সৌমিত্রর জন্মদিনেই সে কথা ঘোষণা করলেন পরিচালক।
অভিনেতাদের মধ্যে একমাত্র সৌমিত্রর নামই উত্তমকুমারের সঙ্গে একত্রে উচ্চারণ করতে পছন্দ করে বাঙালি। জন্মদিনের দিন সকালে তিনি দৌড়েছিলেন শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। অসুস্থ স্ত্রী দীপা চট্টোপাধ্যায়কে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হল। ক্লান্তিকে যেন তিনি বারবার বলেন, দরজার বাইরে দাঁড়াও, এখনই এসো না। রবিবার বিকেল চারটে নাগাদ পৌঁছলেন অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে। দুপুরে মঞ্চস্থ হয়েছে তাঁর রচিত এবং নির্দেশিত নাটক ‘সবজান্তা’। সন্ধ্যায় লীলা মজুমদারের ‘বাতাসবাড়ি’র নাট্যরূপ পাঠ করেন। অ্যাকাডেমির সাজঘরে যেন এক তরুণ রিহার্সালে ব্যস্ত। রয়েছেন কন্যা পৌলোমী বসু। ‘স্বপ্নসন্ধানী’ থিয়েটারের দলের তরফে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছার ফুল দেওয়া হল। কেক নিয়ে আসা হল। অসংখ্য চিত্রসাংবাদিক উপস্থিত। সৌমিত্র ফ্ল্যাশ দিয়ে ছবি তোলা খুব একটা পছন্দ করেন না। কিন্তু এদিন তাঁর মুখে প্রাণবন্ত হাসি। পরমব্রত, দুলাল লাহিড়ী, মেয়ে পৌলোমী— সবার সঙ্গে কেক কাটলেন নিজে। তবে নিজে কেক খাবেন না। অগত্যা মুখের সামনে কেক নিয়ে শুধু পোজ দিলেন। পরিচালক, প্রযোজকদের সঙ্গে সেলফিও তুললেন তিনি। ব্যস! এটুকুই। এবার তিনি রিহার্সাল করবেন।
পরমব্রত সাংবাদিকদের নিয়ে অন্য ঘরে চললেন। একটাই কথা বারবার বলছিলেন, আমার শুধু ভয়, সৌমিত্রজেঠু যেন বিরক্ত না হন। ছবির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অভিযান’। চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক স্বয়ং, পদ্মনাভ দাশগুপ্ত এবং শুভেন্দু সেন। প্রযোজনা করছেন রতন শ্রী নির্মাণ এবং পরমব্রতর সংস্থা রোডশো ফিল্মস। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ছবির শ্যুটিংও শুরু হয়ে যাবে। মূলত নয়ের দশক থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই ছবির প্রেক্ষাপট হিসেবে দেখানো হবে। পরমব্রতর কথায়, ‘এই বিশেষ ঘোষণার জন্য আজকের দিনটাকেই বেছে নিয়েছিলাম। আমার আসলে বায়োপিক কথাটা অদ্ভুত লাগে। এটা আসলে ওঁর জীবনটাকে ফিরে দেখা। এই মানুষটাকে ফিরে দেখা। সৌমিত্রজেঠু নিজে অভিনয় করবেন। ওঁর জীবনটা খুবই বৈচিত্র্যময়। অনেক চরিত্র আসবে। সেই বিষয়গুলো নিয়ে শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে।’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের যুবক বয়সের চরিত্রে অভিনয় করতে চলেছেন যিশু সেনগুপ্ত। ‘আমার সঙ্গে সৌমিত্রজেঠুর সম্পর্কটা একেবারে বন্ধুর মতো। সম্প্রতি এই ছবি করার জন্য যে কাজগুলো করতে হয়েছে, তার ফলে সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। বাংলা সিনেমায় উনি একজন মহীরূহ। গোটা রিসার্চের কাজটা আমেরিকাবাসী শুভেন্দু সেন শুরু করেছিলেন। তিনি সৌমিত্রজেঠুর গদ্যসংগ্রহ ইংরেজিতে অনুবাদ করছেন। শুভেন্দু সেনের রিসার্চ, গদ্যসংগ্রহ এবং গত চার মাসে সৌমিত্রজেঠুর সঙ্গে আমার মেলামেশার অভিজ্ঞতা— এই তিনটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই রিসার্চ হয়েছে’, বলছিলেন পরমব্রত। একটি বিশেষ ভূমিকায় তিনি নিজেও অভিনয় করছেন। এর বেশি কিছু এখনই জানাতে চাইছেন না পরিচালক। তাঁর কথায়, সত্যজিত্ রায়, মৃণাল সেন, শিশিরকুমার ভাদুড়ী চরিত্রগুলো ছবিতে থাকবে। এদিকে, এদিনই শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায় পরিচালিত তথা সৌমিত্র অভিনীত নতুন ছবি ‘বেলাশেষে’র ফার্স্টলুকও সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশ করা হয়।