কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
২০১৪ সালে প্রদীপ সরকার পরিচালিত ‘মর্দানি’র হাত ধরে দু’বছরের বিরতি কাটিয়ে ফিরেছিলেন রানি মুখোপাধ্যায়। সেই ছবির গল্পকার ছিলেন গোপী পুথরান। এবার গল্প লেখার পাশাপাশি পরিচালকের দায়িত্বেও তিনি। প্রথম ছবিটি ছিল নারীপাচার নিয়ে, দ্বিতীয়টি নারী নির্যাতন। কিন্তু, সাধারণ ছন্দে গল্প না বলে ধর্ষকের মনস্তত্বকে সাধারণ মানুষের সামনে নিয়ে এসেছেন গোপী। আবার সাব প্লট হিসেবে এসেছে নারী স্বাধীনতার বিষয়ও। যেখানে স্বয়ং ডিএসপি মনে করেন, একাধিক পুরুষ বন্ধু থাকলে ধর্ষণই ভবিতব্য। স্বয়ং আইজি বলে ওঠেন, সফল মেয়েদের নম্র হওয়া উচিত। একুশ শতকে দাঁড়িয়ে এই মধ্যযুগীয় পুরুষতান্ত্রিকতার স্বাদ দেবেন বলেই হয়তো নির্মাতারা ছবির প্লট এনে ফেলেছেন উত্তর ভারতে।
‘মর্দানি ২’ শুরু হয় ধর্ষককে দিয়ে। এই লালসা কেন তা ধর্ষকের মুখ থেকে বলিয়ে নিয়েছেন পরিচালক। ছবির অনেকাংশ জুড়েই পেশায় সিরিয়াল কিলার ও নেশায় ধর্ষক সানি। এমন একটি নেতিবাচক চরিত্রে ভয় পাইয়ে দেওয়ার মতো অভিনয় করেছেন বিশাল জেঠুয়া। এই প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেওয়া ভালো, ‘মর্দানি’-তে নেতিবাচক চরিত্রে তাহির রাজ ভাসিনও চমকে দিয়েছিলেন। কিন্তু সিক্যুয়েলে বিশাল অনেকটাই এগিয়ে। কৃতিত্ব অবশ্য অনেকটাই গল্পকার তথা পরিচালকের। ছবির প্রথম ভাগে ধর্ষক সানিকে লার্জার দ্যান লাইফ দেখানো হয়েছে। প্রথম ভাগে পর্দায় রানি মুখোপাধ্যায়ের থেকেও বেশি সময় পেয়েছেন বিশাল এবং একটি দৃশ্যেও হতাশ করেননি তিনি। মানসিক বিকৃতি থেকে পেশাদার খুনি হিসেবে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা, সব ক্ষেত্রেই ফুল মার্কস পাবেন ছোটপর্দার অতিপরিচিত এই অভিনেতা। ‘মর্দানি’-র শিবানী শিবাজি রায় রূপী ‘টাফ কপ’ রানি মুখোপাধ্যায় এই ছবিতে আরও অনেক পরিণত। প্রতিক্রিয়া থেকে পদক্ষেপ সবকিছুতেই অনেক অনেক বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে তাঁকে। অপরাধীকে ধরতে তাই পুরুষ ‘ইগো’-র সামনে মাথা নোয়াতেও পিছপা হয়নি স্বয়ংসম্পূর্ণা শিবানী। আর এতেই জিতে গিয়েছেন রানি। জিতে গিয়েছে নারী। একটি মাত্র দৃশ্যে যিশু সেনগুপ্ত মানানসই। তবে রাজেশ শর্মার চরিত্রটি এনে নারী স্বাধীনতার দার্শনিক বক্তৃতায় ভরপুর ‘গ্যালারি প্লে’-র সিক্যুয়েন্সটি বাদ দিতেই পারতেন পরিচালক। সম্ভবত সিনেমা হলে হাততালির লোভ সামলাতে পারলেন না।
বিষয় নির্বাচন, চরিত্রের রূপায়ণ, অভিনেতাদের পারফরম্যান্স ‘মর্দানি ২’-কে ডিভিডেন্ড দেবে ঠিকই তবে গল্প ও চিত্রনাট্যের বুনট কিন্তু পোক্ত নয়। দ্বিতীয় ভাগে অনেক সময়ই মনে হয়, পাটিগণিতের সরল হিসেবে অঙ্ক মিলছে। দুরন্ত প্রথম ভাগের পর আলগা দ্বিতীয় ভাগ তাই একটু অস্বস্তিদায়ক বটে। ক্লাইম্যাক্সও ততটা জমাটি নয়। তবে ধর্ষক সানিকে শাস্তি দেওয়ার আশায় বসে থাকা দর্শক অবশ্য সেই ফাঁক তেমন খুঁজে পাবেন বলে মনে হয় না। জিষ্ণু ভট্টাচার্যের সিনেমাটোগ্রাফি, মনীষা বলদাওয়ার সম্পাদনা ভালোই। তবে জন স্টুয়ার্ট এডুরির আবহসঙ্গীত লাগসই নয়। ভিএফএক্স ও মেকআপ অবশ্য ছবির কারিগরি দিকের মান রক্ষা করেছে।
‘মর্দানি’-তে সরাসরি গণপিটুনিকে ‘লোকপাল বিল’ ও ‘খরচা পানি’-র নাম দিয়ে ন্যায্য প্রমাণ করা হয়েছিল। সিক্যুয়েলে সেই পথে হাটেননি পরিচালক। এখানে ক্লাইম্যাক্সে সযত্নে বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। হায়দরাবাদে ধর্ষণে অভিযুক্ত চারজনের এনকাউন্টার নিয়ে যখন আড়াআড়ি বিভক্ত দেশ। তখন একটি বলিউড ছবির এমন পরিণত আচরণ প্রশংসনীয়।