সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় জটিলতা বৃদ্ধি। শরীর-স্বাস্থ্য দুর্বল হতে পারে। বিদ্যাশিক্ষায় বাধা-বিঘ্ন। হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য আফশোস বাড়তে ... বিশদ
আসলে এই ‘গুমনামি’ নামটা লক্ষ্য করা দরকার। সুভাষ বোসের অন্তর্ধানকে কেন্দ্র করে ছবিটি তৈরি হয়েছে। সেই জন্যেই ‘গুমনাম’ শব্দটা নামের মধ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ ‘মিসিং’। আর এই ছবি সুভাষচন্দ্রের বায়োপিক নয়। তথাকথিত বিমান দুর্ঘটনার পর তাঁর জীবনে কী ঘটেছিল, এই নিয়ে তিন রকম তত্ত্ব মোটামুটি ভাবে প্রচলিত। মুখার্জি কমিশনও এই তথ্যই দেয়। এই তিনটি হল – প্লেন ক্র্যাশ, রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলা এবং গুমনামি বাবা নাম নিয়ে দেশে ফিরে আসা। এক একজন এবং এক এক শ্রেণী, এক-এক থিওরিতে বিশ্বাস করেন। কেউই জানেন না, ঠিক কী হয়েছিল। এই মিসিং পর্বটাই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে তাঁর বাড়ি দেখানো হয়েছে কিন্তু তাঁর স্ত্রী বা অন্যান্য ব্যক্তিগত ব্যাপার কিছু নেই। এটা তাঁর অন্তর্ধানকে কেন্দ্র করে তৈরি। ট্রেলারটা দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
ছবিটি তাহলে শুরু হচ্ছে কোন জায়গা থেকে?
গান্ধীজির সঙ্গে সুভাষের রাজনৈতিক মতবিরোধের সময় থেকে ছবির শুরু।
সুভাষচন্দ্রের বায়োপিক না হলেও এই ছবিতে প্রায় সব চরিত্রই ঐতিহাসিক। তাঁদের কীভাবে নির্বাচন করা হয়েছিল?
এই ছবিতে গান্ধীজি থেকে অনেক নামকরা জাতীয় রাজনীতিকের চরিত্র আছে। ফলে খুবই শক্ত ব্যাপার ছিল প্রতিটি অভিনেতাকে নির্বাচন করা। এক্ষেত্রে বলে রাখি, গান্ধীজি ও নেহরুর চরিত্রে যে দুজন কাজ করেছেন তাঁরা এই দুটি রোলেই শুধু কাজ করেন। এই গান্ধীজি-ই মুন্নাভাই এমবিবিএস-এ কাজ করেছিলেন। এছাড়া মেকআপ-এর বিরাট ভূমিকা আছে ছবিতে।
আপনার মেকআপ করতে কতক্ষণ লাগত?
আমার তো চরিত্রের রেঞ্জ অনেকটা। চরিত্রের সাতান্ন-আটান্ন বছর থেকে ষাট-পঁয়ষট্টি আবার প্রায় পঁচাশি থেকে নব্বই বছর বয়স দেখানো হয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা লেগে যেত ।
অভিনয় করার আগে হোমওয়ার্ক কীভাবে করেছেন?
ব্যক্তিগতভাবে অনেকের সঙ্গেই দেখা করেছি। মুখার্জি কমিশনের কাজে যুক্ত ছিলেন এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে ছবিতে এই এপিসোডের মধ্যে আমি নেই। পুরোটাই অনির্বাণের পার্ট।
সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবারের অনেকেই তো আপত্তি তুলেছেন এই ছবি নিয়ে...
হ্যাঁ। ওঁরা ভাবছেন গুমনামি বাবাকে নেতাজি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে ছবিটা। ছবিটাকে ঘিরে তাই প্রচুর বিতর্ক হচ্ছে। আমরা শুধু বলব, ছবিটা আগে ওঁরা দেখুন। তারপর প্রতিক্রিয়া দিন। খুবই স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে নির্মিত ছবিটি। সেন্সরও হয়েছে সাধারণ নিয়মেই। এমন একজন মানুষকে নিয়ে এই ছবি, যিনি আমাদের জাতীয় নেতা, আন্তর্জাতিক স্তরের ব্যক্তিত্ব। সৃজিতও অত্যন্ত দায়িত্বসম্পন্ন পরিচালক। যা যা ইতিহাসের পাতায় আছে বা রিসার্চের পাতায় আছে, তার কিছু কিছু অংশকে তুলে, নতুন করে কিছু কিছু প্রশ্ন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য হল জনসাধারণ যেন আবার এই প্রশ্নগুলো তোলেন। আমরা সবাই জানতে চাই নেতাজি সুভাষের মতো একজন ব্যক্তিত্বের শেষ জীবনে কী ঘটেছিল?
এত রিসার্চ, এত ডকুমেন্টেশন-এর কথা শুনে মনে হচ্ছে যেন গুমনামি ফিচার ফিল্ম নয়, ডকুমেন্টরি। অতিরিক্ত তথ্যের কচকচিতে তাই হয়ে যাবে না তো ব্যাপারটা?
এই ধরনের রিয়েল লাইফ ছবির ক্ষেত্রে ডকুমেন্টেশন তো খুব স্বাভাবিকভাবেই থাকবে। নেতাজি সুভাষ বসুর চরিত্র তুলে ধরতে গিয়ে পরিচালক কোনওভাবেই ইতিহাসকে অস্বীকার করতে পারবেন না। এই তথ্যগুলোকে কীভাবে চিত্রায়িত করলে তা ফিচার ফিল্ম হিসেবে পরিবেশিত হবে, তা নির্ভর করে পরিচালকের দক্ষতার ওপর। আমি আবারও বলব, ছবিটা দেখুক সবাই। তারপর মতামত দিক।
আপনার ছেলে মিশুক কী বলছে গুমনামি নিয়ে?
মিশুক খুব আগ্রহ নিয়ে ট্রেলার দেখেছে এবং তারপর গুগল করে জানার চেষ্টা করেছে নেতাজির জীবনের নানা ঘটনা। এই যে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা নেতাজিকে নিয়ে আবার আগ্রহ প্রকাশ করা শুরু করেছে গুমনামি-র জন্য, এটা আমার খুব ভালো লাগছে। আজকালকার বাচ্চারা তো প্রশ্ন করে না, ওরা গুগল করে। আশা করছি নতুন করে ওরা নেতাজির অন্তর্ধান নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা শুরু করবে গুমনামি দেখার পর। এটাই হবে আমাদের সার্থকতা।
সব ছবিই তো গুমনামি-র মতো রিয়েল নয়। উপন্যাস বা গল্প থেকেই বেশিরভাগ ছবি তৈরি হয়। আপনি সেগুলো পড়েন?
পড়তে তো হয়ই। তবে ইদানীং আমার পড়ার ধরন পাল্টে গিয়েছে। আগে যেমন শুধু পড়ার জন্যই পড়তাম এখন পড়ি ছবির গল্প খোঁজার জন্য। বাংলা ছবি কিন্তু ক্রমশ সাহিত্য-নির্ভর হয়ে পড়ছে বেশি করে। গত কয়েক বছরের বাংলা ছবির উত্তরণের গ্রাফ দেখলে বোঝা যাবে – কাকাবাবু, মিতিন মাসি, মনের মানুষ –সবই জনপ্রিয় বাংলা উপন্যাস থেকে এসেছে। উপন্যাস, বাংলা ছবির একটা খুব বড় স্তম্ভ। শুধু আজ নয়, বহুদিন থেকেই। এখন অনেক পরিচালক নিজের গল্পও বলেন। তাতে কোনও অন্যায় নেই। আমি নিজেও উত্তমকুমার ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণের মহালয়ার ব্যাপারটা নিয়ে ‘মহালয়া’ ছবির প্রযোজনা করেছি। সেখানে উত্তমকুমার ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণের পরিবারের সদস্যরা এমনকী পঙ্কজকুমার মল্লিকের বাড়ির লোকেরাও আমার সঙ্গে ছিলেন। সেটা তো এই ধরনেরই ঐতিহাসিক ছবি ছিল।
এবার একটা সাম্প্রতিক কালের বহুচর্চিত ঘটনায় আসি। মিস্টার ক্লিন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে ইডির দপ্তরে হাজিরা দিতে হল। বাঙালি শুনতে চায়, আপনার বক্তব্য।
আমি ক্লিন না আনক্লিন সেটা ঈশ্বর জানেন। কিন্তু আমি নিজে জানি আমি কী। একটা নিয়মের মধ্যে ওরা আমাকে ডেকেছিল। যাঁদের ব্যাপারে ওরা ডেকেছিল- তাঁদের সঙ্গে আমি কাজ করেছিলাম। ভারতের নাগরিক হিসেবে আমার যা দায়িত্ব, আমি তাই পালন করেছি। কাগজপত্র দেখিয়েছি। এইটুকুই।
চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল আপনাকে। একেবারে বিনা নোটিসে। কী বলবেন?
এটা নিয়ে আমি অনেক কথা বলে ফেলেছি। দুঃখের জায়গা একটা যে আছেই, অস্বীকার করার উপায় নেই। আমাকে একবার কেন কেউ জিজ্ঞেস করলেন না সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, এই ব্যাপারটায় কষ্ট হয়।
রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল এই ঘটনার পরে?
হ্যাঁ হয়েছিল। ও তো আমার খুবই প্রিয়। আমি নিজেই ওকে ডেকে বসিয়ে দিতাম সেরকম হলে।
আজকাল ডিপ্রেশন নিয়ে সেলিব্রিটিরা মুখ খুলছেন। আপনার কখনও ডিপ্রেশন হয়? কীভাবে তার থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে পান?
ডিপ্রেশন তো হবেই। একে এড়ানো যায় না। তবে জীবনের নানা পথ পেরতে পেরতে ডিপ্রেশন কাটানোর রাস্তা খুঁজে পাওয়া যায়। আজ থেকে কুড়ি-বাইশ বছর আগে ডিপ্রেশন হলে, যেভাবে ভাবতাম বা রিঅ্যাক্ট করতাম, এখন সেভাবে করি না। এসব জীবনই শিখিয়ে দেয়। আমি তিন-চার শিফটে কাজ করা লোক। সেই আমিই ডিপ্রেশনের কবলে পড়ে প্রায় এক বছর ঘর থেকে বেরতে পারিনি। আগে যে সব কারণে ডিপ্রেশন হতো – এখন আর সেসব কারণে আমি মনখারাপ করবই না। এখন আমি অনেক পরিণত ডিপ্রেশন হ্যান্ডেল করার ক্ষেত্রে।
স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হয় নিশ্চয়ই?
কার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হয় না, বলুন তো? মান-অভিমান কোন পরিবারে হয় না? মিডিয়া আমাদের ঝামেলার কথা লেখে বলেই, আমাদের ঝগড়া প্রকাশ্যে আসে। আমি তো বলব, একটা পার্টিকুলার মিডিয়া হাউজের পরোক্ষ হাতের কারণেই আমার দ্বিতীয় বিয়েটা ভেঙে যায়। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে অন্য মানুষ ঢুকে পড়লে খুবই মুশকিল। সেই ভার সামলানোর সময় সাধারণ মানুষ পায় – কিন্তু আমরা পাই না। এটা আমাদের প্রফেশনের ট্র্যাজেডি।
দেবশ্রীর (চুমকি) সঙ্গে এখন কথাবার্তা হয়?
নাহ! ওই একটি মানুষের সঙ্গেই এখনও কথা হয় না। বাকিদের সঙ্গে হয়।
অর্পিতার সঙ্গে আজও আপনার কেমিস্ট্রির কথা সর্বজনবিদিত। রহস্যটা কী?
আমরা দু’জনেই এখন ম্যাচিওরড এবং আমাদের দু’জনের যৌথ দায়িত্বে আমাদের ছেলে মিশুক বড় হচ্ছে। অর্পিতার একটা বড় গুণ হচ্ছে, ও তার স্বামীর কাজ ও রোম্যান্টিক ইমেজ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং এটা ও খুব এনজয়ও করে। আমিও এখন নানা রকম সম্পর্ক হ্যান্ডেল করতে শিখে গিয়েছি।
নানারকম সম্পর্ক? তার মানে নতুন প্রেম আসছে মাঝে মাঝে আপনার জীবনে ?
না রে ভাই! এখন প্রেম-টেম আমার মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। আর বয়স তেমন না হলেও ইদানীং ইন্ডাস্ট্রি আমাকে একটা কাকা-জ্যাঠা মার্কা হাবভাব ধরিয়ে দিয়েছে। নায়িকারা এখন আমাকে প্রণাম করে। রচনা যেমন আমাকে স্টেজে দেখলে, এসে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করবেই। আর ছোটগুলো তো কোলে এসে বসে যায়। এতে অবশ্য আমার সবচেয়ে সুপারহিট নায়িকা খুব রেগে যান। তিনি বলেন একেবারে পায়ে হাত দেওয়ার কী দরকার! আরে বাবা, তারা আমাকে যদি প্রণাম করে – আমি কি আটকাতে পারি? (হাসি)
এখন জীবন থেকে কী চাওয়ার আছে?
আমি চাই প্রতিদিন যেন আমার একজন করে নতুন ফ্যান তৈরি হয়। সে যদি একটা বাচ্চাও হয় – তাই সই। আজকের জেনারেশনও যেন আমার কাজকে ভালোবাসে।
অদিতি বসুরায়