কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
জন্মসূত্রে আপনি তো বাংলার লোক নন। তাহলে কোথায় জন্ম আপনার?
কেরলের ত্রিচূড়ে আমার জন্ম। জন্মসূত্রে আমি কেরলের লোক।
কেরল থেকে কলকাতায় কীভাবে?
পাঁচ-ছয় বছর বয়সে আমি কলকাতায় চলে আসি, বাবার কাজের জন্যে। তারপর থেকে এখানেই আছি।
আপনার কি ভাই-বোন আছে?
আমরা দুই ভাই। ভাই এখন মুম্বইয়ে থাকে।
পড়াশোনা কোথায়?
আমি কলকাতায় এসে স্কুলে ভর্তি হই। আমার কলেজ ছিল জেভিয়ার্স। কলেজে পড়তে পড়তেই আমি জেলে চলে যাই। বাকিটা তো সবাই জানে।
জেলে কতদিন ছিলেন?
প্রায় ন’বছর।
জেল থেকে বেরিয়ে কী করলেন?
জেল থেকে বেরিয়ে আমি একটা ক্লিনিং এজেন্সি শুরু করি। বিভিন্ন অফিস, বাড়ি পরিষ্কার করার কাজ করতাম।
শিবপ্রসাদ-নন্দিতার সঙ্গে আলাপ কী করে?
শিবুদা-নন্দিতাদি জেলে যে সব রিফর্ম-থেরাপি হয়, সেই সব নিয়ে রিসার্চ করছিলেন। আমি তখন জেল থেকে বেরিয়ে সবে এজেন্সি শুরু করেছি। শিবুদাদের বলি, এই রকম কাজ করছি। শিবুদা একদিন বলেন, এসো। তোমার এজেন্সি দিয়ে আমাদের অফিস পরিষ্কার করে দিয়ে যাও। সেই সময়, ‘বাল্মীকি প্রতিভা’য় অভিনয় করতাম। যার পরিচালক ছিলেন অলকানন্দা রায়। শিবুদা-নন্দিতাদিকে আমি একদিন ওই নাটকের শো দেখতে আমন্ত্রণ জানাই। ওঁরা এসেওছিলেন। এইভাবেই আলাপ আর কী!
এরই ফলশ্রুতি কি ‘মুক্তধারা’য় কাজ করা?
খানিকটা সেরকম-ই । শিবুদা একদিন আমাকে বলেন, আমরা ‘মুক্তধারা’ নামের একটা ছবি করছি। তুমি ওই ছবিতে অভিনয় করবে? আমি তো ফিল্মে অভিনয় কখনও করিনি। শিবুদা বলেন, তোমাকে কিছু করতে হবে না। আমরা ওয়ার্কশপ করিয়ে নেব। প্রায় ৪৫ দিন ধরে ওয়ার্কশপ চলে। নাচ থেকে নানা দৃশ্য সবটাই ওখানে করানো হয়।
মুক্তধারায় সাফল্য পেয়ে কেমন লাগছিল?
২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত, মানুষের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করার যে চেষ্টা করে গিয়েছি, ‘মুক্তধারা’ সেই কাজটা করে দিয়েছিল। লোকে আমাকে চিনতে শুরু করে। অটোগ্রাফ নিতে থাকে। নিঃসন্দেহে এটা খুবই ভালো অভিজ্ঞতা।
কিন্তু মুক্তধারার পর আপনাকে পর্দায় আর সেরকম সফলভাবে দেখা গেল না কেন?
কাজ তো করেছি। কিন্তু কয়েকটা সমস্যা হচ্ছিল। প্রথমত, আমার কিছু কেস পেন্ডিং ছিল। দ্বিতীয়ত, আমার চারদিকের কিছু লোক আমার রাতারাতি বিখ্যাত হওয়াটা মেনে নিতে পারছিল না। তাদের ব্যবহার আমাকে খুব বিস্মিত করে। এতটাই আঘাত পাই যে স্থির করে ফেলি, আর সিনেমাই করব না। তারপর, প্রায় ছয় মাস কোনও কাজ করিনি। সেই সময়টায় অনেক ভেবেছি। শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারি, সিনেমায় কাজ করতে আমার যেমন আনন্দ হয়, আর কিছুতেই তেমনটা হয় না। তখন আমি দক্ষিণ ভারতে গিয়ে একটা ছবিতে অভিনয় করি। কিন্তু ভালো লাগেনি। ফলে, ফিরে আসি আবার। সেই সময়টায় আমি যা যা অফার পেয়েছি, করেছি। একেবারেই ভেবে দেখিনি। ‘রাজকাহিনী’, ‘যোদ্ধা’ এই সময়েই করেছি। কিন্তু ‘মুক্তধারা’র সাফল্যটা ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছিল। ফলে আমি একটু অন্যভাবে ভাবনাচিন্তা করতে থাকি। দেড় বছর আগে, একটা একেবারে অন্যরকম প্রজেক্ট আরম্ভ করি।
প্রজেক্টটা কী? খুলে বলবেন?
সমাজের স্টিগমাটাইজড লোকদের নিয়ে আমি কাজ করছি। আমাদের প্রথম কাজ ছিল, ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে। এরপর, যৌনকর্মীদের নিয়ে। এই জন্য কালীঘাট, সোনাগাছিতে গিয়ে থিয়েটার থেরাপি করেছি। ওদের দিয়ে নাটক করিয়েছি। বেশ কয়েকটা শোও হয়েছে। এই মুহূর্তে, আমরা ড্রাগ-অ্যাডিক্টদের নিয়ে কাজ করছি। যারা নেশা ছাড়তে আসে, তাদের নিয়ে থিয়েটার করছি। এই মাসেই মঞ্চস্থ হওয়ার কথা। আমরা উইথড্রল সিম্পটমের ওপর জোর দিচ্ছি। অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গিয়েছেন, তাঁরা আসছেন আমাদের সঙ্গে কাজ করতে।
সিনেমার কথায় ফিরি। আপনার প্রিয় ছবি কোনটা? ছোটবেলা থেকে ছবি দেখতেন?
খুব সিনেমা দেখতাম। অমিতাভ বচ্চন আমার প্রিয় অভিনেতা। ওঁর ছবিগুলোর সঙ্গে নিজেকে খুব রিলেট করতে পারি। ‘অগ্নিপথ’ প্রায় ১০০ বার দেখেছি। ওখানে অমিতাভের সঙ্গে তাঁর মায়ের যেমন সম্পর্ক ছিল, আমারও খানিকটা সেরকম। আমি যে কেসে জেলে যাই, সেটা পরে হাইকোর্ট থেকে ডিসমিস হয়ে যায়। আর দুটো কেসে আমি জামিনে ছিলাম। মা তখন বলত, কেরল বা মুম্বই চলে যাও এবং নতুন করে জীবন শুরু করো। আমি রাজি হইনি। আমি মাকে কথা দিয়েছিলাম এই শহরে থেকেই হারানো সম্মান ফেরত দেব। মা দু’মাস সময় নেয় ভাবার জন্য। তারপর জানায়, কলকাতায় থাকো তবে বাড়িতে থাকতে পারবে না। সেইভাবেই আমি জীবন শুরু করি। মা এখন আমার সঙ্গেই থাকে। বাবা মারা গিয়েছেন।
এখনকার হিন্দি ছবির অভিনেতাদের মধ্যে কাকে ভালো লাগে?
নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি আর ইরফান খান। তবে ইরফান অনেকটাই স্টিরিওটাইপ হয়ে গিয়েছেন। রণবীর সিংকেও আমার দারুণ লাগে। ও খুব এক্সপেরিমেন্ট করে কাজ নিয়ে।
আপনার স্ত্রী মৌমিতার কথা একটু শুনি। কোথায় পরিচয় আপনাদের?
আমাদের শিলিগুড়িতে প্রথম দেখা। ও খুব সাহসী মেয়ে। একাধারে চিকিৎসক এবং লেখক। আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নেওয়া তো সহজ নয়। ও কিন্তু ওর বাড়ির লোককে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছিল। আমার লড়াইটাকে ও খুব ভালোবাসে।
বিয়ের আগে আর কারও প্রেমে পড়েননি?
আমি নিজেকে তৈরি করতে ব্যস্ত ছিলাম । প্রেম নিয়ে মাথা ঘামাতে পারিনি। আর কুড়ি থেকে ঊনত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত তো জেলেই কাটিয়েছি। কখন আর প্রেম হবে!
গোত্র-তে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
নন্দিতাদি আমাকে ডাকেন। কিন্তু হাতে সময় বেশি ছিল না। মাত্র কুড়িদিনের মধ্যে ওয়ার্কশপ, কাজ শেখা সব করতে হয়েছে।
এখানে আপনার চরিত্রটির নাম কী?
তারেক আলি। সে অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসা লোক। এমন এক মহিলা এই বাড়ির মালিক, যিনি খুবই জাঁদরেল। তাঁর কথাই শেষ কথা। সব পাড়াতে যেমন একজন হিটলার মাসিমা থাকেন, তেমনই ইনি। এই বাড়িতেই ঝুমা পাল বলে একটি মেয়ে আসে। বাকিটা ছবি দেখলে জানতে পারবেন।
ভবিষ্যতে আমরা অভিনেতা নাইজেলকে পাব নাকি উদ্যোগপতি নাইজেলকে?
আমি মোমেন্টে বাঁচি। তাই ভবিষ্যতে কী হবে, ভাবি না। প্রতিটি দিন-ই আলাদা। তাই অতীত বা ভবিষ্যৎ আমাকে ভাবায় না।
অদিতি বসুরায় ছবি: দীপেশ মুখোপাধ্যায়