পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
দিন কয়েক আগেই দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন পার্নো মিত্র, ঋষি কৌশিক, রূপাঞ্জনা মৈত্র, অনিন্দ্য পুলক সহ একঝাঁক টলি অভিনেতা। এই পদক্ষেপ যদি সিঁদুরে মেঘ হয় তাহলে রবিবার ২১ শে জুলাই শহীদ দিবসের মঞ্চে টলিউডের আংশিক উপস্থিতি এই বিভাজনের দিকেই নির্দেশ করছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, আগে শাসকদলের তরফে টলিউডের শিল্পীদের হাজির করার ‘দায়িত্ব থাকত’ প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতার উপর। এখন তিনি জেলে থাকায় লাটাইয়ের সুতো আলগা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, দলের পাশাপাশি তৃণমূল ঘনিষ্ঠ তারকাদের মধ্যেও এই নিয়ে নাকি একপ্রস্থ কথা হয়েছে। একদল মনে করছেন এটা কোনও চ্যালেঞ্জই নয়, তো অন্যপক্ষ মনে করছেন এই যোগদানের পিছনে ভুল বোঝানোর রাজনীতি চলছে।
অভিনেতা-বিধায়ক চিরঞ্জিত শিল্পীদের বিজেপিতে যোগদানকে কোনওভাবেই অশনি সংকেত বলে মানতে নারাজ। তাঁর সাফ কথা, ‘যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, তাঁরা তো অভিনেতা হিসেবে অসফল। হাতে কাজ নেই, তাই অন্য শিবিরে যোগ দিয়ে ভাগ্য পরীক্ষার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। এটা তাঁদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমরা একেবারেই চিন্তিত নই।’ দলের মধ্যে কি কোনও কথা হয়েছে? উত্তরে ভয় দেখানোর রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে বারাসতের বিধায়ক বললেন, ‘আমাদের চিন্তা অন্য জায়গায়। আজকে প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণার মতো ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির অভিনেতাকে ইডি তলব করেছে। তাঁরা যাতে বিজেপিতে যোগ দেন, সেই জন্যই কি এরকম ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ? এটা আমাদের কাছে চিন্তার বিষয়। ভয় দেখিয়ে আরও কিছু নামকে বিজেপি দলে টানতে চাইছে কিনা সেটা আমাদের দেখতে হবে।’ এই প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য শতাব্দী রায়ের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া,‘উল্লেখযোগ্য কোনও মুখ বিজেপিতে যোগ দেয়নি বলেই আমরা চিন্তিত নই।’
অভিনেতা সোহম শাসক দলের সদস্য। তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ এই অভিনেতার কটাক্ষ, ‘এটা কোনও ভয়ের কারণ নয়। কারণ যাঁরা গিয়েছেন, তাঁরা আমাদের দলের কোনও পদাধিকারী ছিলেন না। তাছাড়া ক্ষমতার লোভেই তো এই যোগদান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে ইন্ডাস্ট্রিকে আগলে রেখেছেন, সেটা আগের কোনও সরকার তো পারেনি। আমার মতে, ডাল ভাত ছেড়ে বিরিয়ানির লোভে গা ভাসানোটা অর্থহীন।’ সেইসঙ্গে বিজেপি সমর্থিত দলের বিরুদ্ধে সোহমের আক্রমণ, ‘এদের কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই নেই। ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য তাঁরা ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছেন। এটা একেবারেই কাম্য নয়।’
দীর্ঘদিন ধরেই টলিউডে ফেডারেশন (ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কাস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া) এর নামে অভিযোগ উঠছে। এই সংগঠনের বিরুদ্ধে বিজেপি সমর্থিত সদ্য জন্ম নেওয়া দুই সংগঠনের অভিযোগ, ফেডারেশনে নাকি সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের একচ্ছত্র রাজত্ব চলে।
স্বরূপবাবুর দাদা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস পিছন থেকে যাবতীয় কলকাঠি নাড়েন। এই অবস্থায় শিল্পীদের বিজেপিতে যোগদান কতটা আশঙ্কাজনক? ফোনে স্বরূপবাবু স্পষ্ট জানালেন, ‘ফেডারেশন একটি অরাজনৈতিক দল। ব্যক্তিগত আদর্শ থেকে যে কেউ বিজেপিতে যোগ দিতেই পারেন। তবে আমার মতে, কিছুদিন পর ঠিক বোধোদয় হবে এবং তারপর আবার সবাই ফিরে আসবেন।’ তৃণমূল ঘনিষ্ঠ পরিচালক অরিন্দম শীল অবশ্য শিল্পীদের বিজেপিতে যোগদানের তুলনায় সদ্য গজিয়ে ওঠা সংগঠনগুলোর উদ্দেশ্য নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত। ‘ফেডারেশন বা আর্টিস্ট ফোরাম কিন্তু দীর্ঘদিনের ঐক্যের ফল। কাজ করতে গিয়ে আমরা রাজনৈতিকভাবে সরকারের সাহায্য পেয়েছি বলে বারবার আমাদের উপর রাজনৈতিক রং চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আদতে কিন্তু আমাদের কোনও রং নেই। কাজ করতে গিয়ে কখনও সেখানে আমরা রাজনীতিকে ঢুকতে দিইনি। কোনও নতুন সংগঠন এত সহজে এবং এত তাড়াতাড়ি সেই জায়গা দখল করতে পারবে বলে মনে হয় না’ বক্তব্য অরিন্দমের। বোঝাই যাচ্ছে শাসকদলের ঘনিষ্ট শিল্পী থেকে শুরু করে দলীয় তারকা সদস্যরা টলিউডে বিজেপি প্রভাবকে এত তাড়াতাড়ি পাত্তা দিতে রাজি নন। এখন টলিপাড়ার ক্ষমতার আসন দখলে আগামী দিনে দুই শিবিরের যুযুধান স্ট্র্যাটেজি কী হতে চলেছে সেটাই যে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।