বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
তিনটি মাত্র চরিত্র। সময়, সমাজ ও শঙ্কর। বাকিরা অনুঘটক, ঘটনা-প্রবাহের গতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন মাত্র। নাম-ভূমিকায় পরিচালনার দায়মুক্ত কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিনয় দেখা অনেকটা অধিনায়কত্বের দায়মুক্ত শচীন তেন্ডুলকরের ব্যাটিং দেখার মতোই সুখপ্রদ অভিজ্ঞতা। ছবির সিংহভাগ জুড়ে শঙ্করের পরনে লুঙ্গি-গেঞ্জি-গামছা। গেঞ্জিতে বুকের ওপর বাঘের ছবিসহ ক্যাপশন, ‘বাঘমার্কা দিয়াশলাই, এক কাঠিতে রোশনাই।’ বাস্তবিকই সমগ্র ছবিটিকে কৌশিক একাই রোশনাই করেছেন! অভিনেতা হিসেবে এখনও পর্যন্ত এটি তাঁর শ্রেষ্ঠ পারফরম্যান্স।
অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের পর্যটন ও হৈ-হুল্লোড় বর্জিত পরিচালক-সত্তা এ ছবির আরও একটি চমক। নিসর্গের বদলে এ ছবিতে তিনি জীবনকে খুঁজে বেড়িয়েছেন। বিশ্বায়নের মেঘলা আকাশের নীচে কতকগুলো অসহায় মানুষের অর্থনৈতিক লড়াই তো নিমিত্তমাত্র। তাদের জীবনের প্রতিটি অভ্যাস ও অধিকারের উপর তাদের সীমাহীন ভালোবাসাই নিহিত আছে সেই আর্থিক প্রয়াসের মর্মস্থলে। আধুনিক শপিংমলের ব্যয়বহুল ও সুচিন্তিত বিপণন-কৌশলগুলিকে শঙ্কর নিজের সীমিত ক্ষমতা নিয়েও অন্ধের মতো অনুকরণের চেষ্টা করেছে শুধু নিজের দোকান বাঁচাতে নয়। খরিদ্দারদের সঙ্গে নিজের দীর্ঘদিনের একাত্মতা ও সংস্রব ক্রমশ লঘুতর হয়ে ওঠার অবসাদ তাকে গ্রাস করেছে।
বিশ্বায়নের বাজার-অর্থনীতির অনিবার্য পরিণতি নৈতিক চরিত্রের পচন ও অসীম নিঃসঙ্গতা। এই উপসর্গে কোনও না কোনওভাবে আক্রান্ত ছবির প্রতিটি চরিত্র। মৃত বাবানের মানসিক ভারসাম্যহীন প্রৌঢ় পিতার সংলাপটি তারই ইঙ্গিতবাহী, ‘এত পচা গন্ধ কীসের? কী পচছে?’ মিথ্যাচার, দ্বিচারিতা ও স্ববিরোধিতায় পূর্ণ এক মধ্যবিত্ত বাঙালি শিক্ষকের ভূমিকায় অনবদ্য অঞ্জন দত্ত। বিপদে পাশে দাঁড়ানোর মানুষগুলো যখন একে একে হারিয়ে যায়, তখন মাঝরাতে প্রতিবেশিনীর সাহায্যের আর্তি থেকে নিস্তার পেতে অবলীলায় ঘরের জানালা বন্ধ করে দেন এই সম্ভ্রান্ত মানুষটি। কলাকুশলীরা সবাই নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। আর পি টেকভিশন নিবেদিত এ ছবির সঙ্গীত পরিচালক কবীর সুমন। ‘জন হেনরি’ গানে তিনি বাংলার গণসঙ্গীতের লুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। শীর্ষ রায়ের সিনেমাটোগ্রাফি ছিমছাম। সঞ্জীব দত্তের সম্পাদনায় বৈপরীত্যের একতার সৌন্দর্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তবে, শুধুমাত্র সামাজিক ছবি হিসেবেই ‘শঙ্কর মুদি’ শিল্পরসোত্তীর্ণ হতে পারতো। অনিকেত ‘একটি রাজনৈতিক ছবি’ বানাতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। তবে সেই প্রয়াস এ ছবিতে কোনও নতুন মাত্রা বা উৎকর্ষ যোগ করেনি।
প্রিয়রঞ্জন কাঁড়ার