গৌড়ীয় নৃত্য একটি বাঙালি ঐতিহ্যগত সুপ্রাচীন নৃত্যকলা যা প্রাচীন বঙ্গের রাজধানী গৌড়ে সৃষ্ট। নৃত্যশিল্পী মহুয়া মুখোপাধ্যায় অক্লান্ত পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় এর পুনর্নির্মাণ করেন। তিনি দীর্ঘকাল গবেষণা চালিয়ে এই নৃত্যধারাকে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন তাঁর স্বামী কণ্ঠসঙ্গীত শিল্পী পণ্ডিত অমিতাভ মুখোপাধ্যায় ও সুযোগ্য পুত্র অয়ন মুখোপাধ্যায়, যিনি একাধারে যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী ও সুপ্রতিষ্ঠিত গৌড়ীয় নৃত্যশিল্পী । সম্প্রতি এই সংস্থার পঁচিশ বছর পূর্তি উৎসব পালিত হল রবীন্দ্রসদনে। প্রথমে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমির উপস্থাপনায় ও অশোক চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘গোল্ডেন গ্লোরি’ তথ্যচিত্রটি দেখানো হয়। 
নৃত্যানুষ্ঠানের শুরুতে ছিল মহাভারতের একটি শ্লোক নিয়ে রচিত নৃত্য। পরিবেশনায় ছিলেন সংস্থার ছাত্রছাত্রীরা। এই নৃত্যধারায় শিব, গণেশ ও বিষ্ণু এই তিন দেবতার প্রাধান্য সবথেকে বেশি। গণেশ বন্দনা, বলরাম আলাপচারী, দশাবতার পরপর কিছু দলগত নৃত্য পরিবেশিত হয়। ‘পুতনা মোক্ষ’ পরিবেশন করেন রাচেল প্যারিস। তাঁর  অসাধারন নাটকীয় উপস্থাপনা দর্শকদের উচ্ছসিত প্রশংসা পায়। এরপর শিব নবরস উপস্থাপনা করেন মহুয়া মুখোপাধ্যায়। তাঁর সাবলীল পদসঞ্চালনা ও অভিনয় দর্শকদের আপ্লুত করে। গড়ফা মিত্রায়নের কিছু নিবেদন যেমন রাধা বন্দনা, আলাপচারি, হরিহর স্তুতি ইত্যাদি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নৃত্য পরিকল্পনায় বনানী চক্রবর্তী এবং সঙ্গীত নির্দেশনায় ছিলেন অমিতাভ মুখোপাধ্যায়। সবশষে পরিবেশিত মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদ বধ’ কাব্য অনুসরনে একটি নৃত্যনাট্য। সঙ্গীত পরিচালনা করেন শুভদীপ চক্রবর্তী ও অয়ন মুখোপাধ্যায়। 
রাবণের ভূমিকায় অয়ন মুখোপাধ্যায়, মন্দোদরীর চরিত্রে শতাব্দী আচার্য্য চক্রবর্তী, চিত্রাঙ্গদা ও বাসন্তীর ভূমিকায় পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মেঘনাদ চরিত্রে সৌম্য ভৌমিক ছিলেন। বিভীষণ, রাম ও লক্ষ্মণ চরিত্রে ছিলেন যথাক্রমে শুভদীপ চক্রবর্তী, গণেশ দাস ও কৌশিক সাউ । কণ্ঠদান করেন পণ্ডিত অমিতাভ মুখোপাধ্যায়।

সোমা গুহ
ছবি: প্রতিবেদক