দুর্ঘটনা আর আঘাত যোগ আছে; সতর্ক হোন। মানসিক উত্তেজনায় লাগাম দিন, বাক বিতণ্ডা এড়িয়ে চলুন। ... বিশদ
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ছয় মাস পর থেকে এই গল্পের সূত্রপাত। মুসলিম অধ্যুষিত একটি গ্রামে পিরজাদা হোসেনের নেতৃত্বে ‘ছোটা বাবরি মসজিদ’ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সংখ্যালঘু হিন্দুরাও পেশিশক্তির আস্ফালনে পিছিয়ে থাকতে রাজি নয়। সম্মিলিত সীমিত আর্থিক সামর্থ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রামমন্দির নির্মাণ অসম্ভব জেনেই তারা শিবলিঙ্গের পাশে পৃথক বেদি বানিয়ে রাম-সীতার পুজো প্রচলন করার সিদ্ধান্ত নেয়। শ্রীরামচন্দ্রের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে ‘রাম-রাবণের পালা’ আয়োজিত হয়। অপাপবিদ্ধ শৈশবের দুই ধ্বজাধারী পলাশ ও সোফি পেশাদার অভিনেতাদের মঞ্চের বাইরের রূপ দেখতে সাজঘরে ঢুকে হতবাক হয়ে যায়। মঞ্চের শত্রু রাম-রাবণ একসঙ্গে পরম হৃদ্যতায় ধূমপানে ব্যস্ত। সীতার রূপধারী পুরুষ অভিনেতাটিও সুখটানে নিয়োজিত। তারাই দুই শিশুর কাছে ফাঁস করে দেয় জীবনের আদি রহস্য, ‘আমরা সবাই সবার বন্ধু, পেটের টানে শত্রু সাজি।’
অগ্নিগর্ভ রাজনৈতিক পটভূমিতে শৈশবের বন্ধুত্বকে নানা অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। শিশুসুলভ সারল্যে তারা যখন মসজিদ প্রতিষ্ঠার জন্য জমানো বালি দিয়ে ঝুলন সাজানোর চেষ্টা করছে, তাদের অভিভাবকরা তখন অস্তিত্বের সংগ্রামের নানা ফন্দি-ফিকির আঁটতে ব্যস্ত! জাগতিক হিসেব-নিকেশে অনভ্যস্ত এক পাগল মসজিদের মাটিতেও পড়ে থাকে, আবার খাদ্যের লোভে যাত্রা প্রাঙ্গণেও হাজিরা দেয়। বড়দের শেখানো জগৎকে ঝাপসা ভাবে অনুভব করার চেষ্টা করে চলে দুই শিশু, ‘জাহান্নাম মেলা দূর, সে কঠিন জায়গা। আব্বা বলে, ইবলিসদের জায়গা।’ বাস্তবানুগ অভিনয়, বাহুল্যবর্জিত দৃশ্যভাবনা এই ছবির সম্পদ। পর্দায় ম্যাজিক দেখিয়েছেন পরিচালক। ছবি জুড়ে অসংখ্য সফল দৃশ্যকল্প এবং সমকালীন বাস্তবতার সঙ্গে নিবিড় যোগসূত্র ছবিটিকে ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। মূলত দুই শিশুর চোখ দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত আর্থ-সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রহসনের অনবদ্য একমেবাদ্বিতীয়ম ব্যাখ্যা খুঁজে পেয়ে মুগ্ধ হতেই হয়।