গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
১৯৭০ সালে সত্যজিত্ রায়ের ক্যালকাটা ট্রিলজির প্রথম ছবি ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ মুক্তি পেয়েছিল। অন্য দু’টি ছবি ‘সীমাবদ্ধ’ ও ‘জন অরণ্য’। ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’তে সত্যজিতের সিনেম্যাটিক ভাষা এক অন্য উত্কর্ষে পৌঁছেছিল। অনেক চলচ্চিত্র সমালোচকের কাছে তা হয়তো ‘পথের পাঁচালি’র থেকেও অনেকাংশে এগিয়ে। ষাটের দশকের শেষের দিকে কলকাতার টালমাটাল অবস্থা চমত্কারভাবে ফুটে উঠেছিল ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’তে।
সত্যজিত্ রায়ের জন্মশতবর্ষে পুনের ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভ অব ইন্ডিয়া (এনএফএআই) তাঁর বেশ কিছু ছবি ন্যাশনাল ফিল্ম হেরিটেজ মিশনের আওতায় পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এনএফএআই-এর ডিরেক্টর প্রকাশ মাজদাম বলছিলেন, ‘আমাদের তালিকার শীর্ষে ছিল ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’। ছবিটি অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় পাওয়া যেত। খুব সম্ভবত নয়ের দশকের শেষের দিকে ছবির একটা ট্রান্সফার করা হয়েছিল, যা আমরা দেখতে পাই। পুনরুদ্ধার করার প্রথম পদক্ষেপ হল আসল ক্যামেরা নেগেটিভ খুঁজে বের করা। আসল ক্যামেরা নেগেটিভ হল সেই সম্পাদিত ফিল্ম নেগেটিভ যা শ্যুটিংয়ের সময় পরিচালকরা ব্যবহার করেন।’ এই নেগেটিভ খুঁজে পেতে কয়েক মাস আগে কলকাতায় এসেছিলেন প্রকাশ। কলকাতায় এসে তিনি ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র প্রযোজক পূর্ণিমা দত্তর সঙ্গে দেখা করেন। ‘গত ৫০ বছর ধরে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে তিনি এই ছবির ক্যামেরা নেগেটিভ রেখে দিয়েছেন। সবচেয়ে আনন্দের কথা হল, এত বছর বাদেও নেগেটিভগুলো যথেষ্ট ভালো অবস্থায় রয়েছে’, বলছিলেন প্রকাশ।
খুব যত্নের সঙ্গে সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সেই নেগেটিভগুলো কলকাতা থেকে পুনেতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এনএফএআইয়ের দপ্তরে একটি আন্তর্জাতিক মানের ফিল্ম স্ক্যানার রয়েছে। সেখানে ৪কে রেজুলেশনে ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ স্ক্যান (ডিজিটাইজড) করা হয়েছে। এই ডিজিটাইজেশনের মধ্যে রয়েছে পুনরুদ্ধার পর্ব। এই পর্বটাই অনেকখানি সময়সাপেক্ষ। নেগেটিভের মধ্যে থাকা স্ক্র্যাচ, নোংরা সরানো হয়। তার সঙ্গে কালার কারেকশন সহ অন্যান্য বিষয়গুলো এর মাধ্যমেই করা হয়। ‘আশা করা যায়, আগামী মাসের মধ্যে ছবির পুনরুদ্ধার সম্পূর্ণ হবে। তখন গোটা পৃথিবীর দর্শক এই ছবির ভালো প্রিন্ট দেখতে পাবেন। ঠিক যেমন আজ থেকে ৫০ বছর আগে মুক্তি পাওয়ার সময় দেখা গিয়েছিল। আমি পূর্ণিমা দত্তর কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ’, বলছিলেন প্রকাশ।
এছাড়াও সত্যজিত্ রায় পরিচালিত ‘সোনার কেল্লা’, ‘হীরক রাজার দেশে’ এবং সুকুমার রায়কে নিয়ে একটি তথ্যচিত্রেরও পুনরুদ্ধার শুরু করেছে এনএফএআই। এই ছবিগুলোর প্রযোজক ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। শুধু তাই নয় ওয়েস্টবেঙ্গল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনও দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্র শতবর্ষ ভবনে বহু দুষ্প্রাপ্য ছবির পুনরুদ্ধারের কাজ করছে।