কোনও কিছুতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভাববেন। শত্রুতার অবসান হবে। গুরুজনদের কথা মানা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুফল ... বিশদ
সেই অর্থে তিনজনেরই প্রথম বাংলা ছবি। উত্তেজনা হচ্ছে নিশ্চয়ই।
সৌম্য: গতে বাঁধা প্রেমের গল্প নিয়ে এই ছবি নয়। সুযোগ পেয়েছি এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না।
সুস্মিতা: খুশি তো হয়েছিই, এককথায় স্বপ্নপূরণ। আমাদের মতো নতুনদের উপর এই বিশ্বাস রাখার জন্য অনিন্দ্যদাকে ধন্যবাদ।
শ্বেতা: প্রথমবার বড়পর্দায় সুযোগ। আমাদের তিনজনের জীবনেই এটা অন্যতম মাইলফলক।
ভ্যালেন্টাইনস ডে’র আগে ছবিটা মুক্তি পাচ্ছে। স্কুল-কলেজে আপনাদের কাছে এই দিনটার গুরুত্ব কীরকম ছিল?
সুস্মিতা: একদমই স্পেশাল ছিল না। কারণ কোনও একটা নির্দিষ্ট দিনে ভালোবাসাকে সেলিব্রেট করতে হবে— এটা আমি মানি না ।
সৌম্য: সত্যি বলতে স্কুলে আমার কাছে ভ্যালেন্টাইনস ডে’র তুলনায় সরস্বতী পুজোর গুরুত্ব অনেক বেশি ছিল। এই দুটো দিনের অর্থ আমার কাছে একদম আলাদা।
শ্বেতা: আমি বহরমপুরের মেয়ে। মফস্সলে এই দিনটা সেলিব্রেট করার সুযোগ অনেকটাই কম ছিল। মনের মধ্যে ভয়টা বেশি কাজ করত।
সৌম্য ও শ্বেতা আগে অভিনয় করেছেন। মডেলিং থেকে সিনেমায় এলেন সুস্মিতা। এই দু’জন আপনাকে কতটা সাহায্য করেছেন?
সুস্মিতা: ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পর আমি মডেলিং শুরু করি। প্রথম ছবি বলে একটা টেনশন ছিলই। ওরা সাহায্য না করলে হয়তো আমি অভিনয় করতে পারতাম না।
সুস্মিতা, প্রথম ছবিতেই সাহসী দৃশ্য এবং তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কথাও হচ্ছে।
সুস্মিতা: সৌম্য সাহায্য না করলে হয়তো ওই দৃশ্যগুলো ভালো করে শ্যুট করতে পারতাম না। যতটা সহজ হতে পারব, অনিন্দ্যদা (পরিচালক) ততটাই এগতে বলেছিলেন। সত্যি বলছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় এখনও পর্যন্ত সেরকম নেগেটিভ বা অশালীন কমেন্ট আমার চোখে পড়েনি।
সৌম্যর প্রথম ওয়েব সিরিজ নিয়েও কম জলঘোলা হয়নি। ট্রোলিং সামলাতে সুস্মিতাকে কোনওরকম টিপস দেননি?
সৌম্য: আমি কোনও পরামর্শ দিইনি। আমরা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। তাই মনে হয় ও নিজেই সেটা সামলে নিতে পারবে।
আচ্ছা পরিচালক হিসেবে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় কতটা কড়া?
সুস্মিতা: আমি প্রচুর বকা খেয়েছি। কিন্তু তাতে আমি বেশ খুশি। কারণ শেখার সুযোগটা পেয়েছি।
সৌম্য: বকা আমিও খেয়েছি। পাবলো চরিত্রটা কী কী করতে পারে সেটা না পাওয়া পর্যন্ত উনি আমাকে ছাড়তেন না। শ্যুটিংয়ের শেষদিন কেমন হয়েছে জিজ্ঞাসা করতে অনিন্দ্যদা বলেছিলেন যে, ‘বকলস’ উপন্যাসটা যেভাবে লিখেছিলাম সেটাই আমি শ্যুটে পেয়েছি।
শ্বেতা: অনিন্দ্যদার সহজভাবে পর্দায় গল্প বলার ধরনটা এখানেও রয়েছে। তাই পুরো বিষয়টাই আমার কাছে সহজ হয়ে গিয়েছিল।
সুস্মিতা তো ছবির স্মৃতি ধরে রাখতে কাঁধে ট্যাটু করিয়েছেন। সৌম্য-শ্বেতা সেরকম কিছু করেছেন নাকি?
সুস্মিতা: ছবির স্মৃতি তো বটেই। সেই সঙ্গে আমি একজন সারমেয়প্রেমী। তাই জানুয়ারিতে ট্যাটুটা করিয়েছিলাম।
সৌম্য: প্রথম ছবি মানে প্রথম ভালোবাসা। আমি সাধারণত শপিং করি না। পাবলো চরিত্রটার জন্য অনেকগুলো জামা কিনেছিলাম। সেগুলো বাড়িতে তুলে রেখেছি। সেটে যে চিরুনিটা ব্যবহার করতাম সেটাও সঙ্গে রেখে দিয়েছি।
শ্বেতা: অনিন্দ্যদা শ্যুটিংয়ের আগে আমাকে যে চিত্রনাট্যটা দিয়েছিলেন, তার শেষ পাতায় লিখেছিলেন, ‘ মনটা কাচের মতো, নাম তাই আরশি...’। এটা আমার কাছে চিরকাল রেখে দেব।
পরিবারের সবাই কী বলছেন?
সুস্মিতা: আমি কুলটিতে বড় হয়েছি। বাবা-মা ওখানেই থাকেন। টিভিতে ট্রেলার আর ছবির গান দেখে মা কেঁদে ফেলেছিলেন।
সৌম্য: শ্যুটিং শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে হঠাৎ লকডাউন হয়ে গেল। ওই সময়টায় বাড়িতে বসে প্রচণ্ড চিন্তা হতো, মনখারাপ হতো। বাবা-মায়ের বয়স হয়েছে। ওঁদের কাছে সব কিছু বলতে পারতাম না। কিন্তু ঘরের মধ্যে একাকী অনেকবার ভেঙে পড়েছি।
শ্বেতা: টিভিতে ট্রেলার দেখার সময় মা উত্তেজিত হয়ে ভিডিও কল করেছিলেন। বাবা থাকলে আমি নিশ্চিত, তিনিও প্রচণ্ড খুশি হতেন।
আপনাদের বয়স কম। ইন্ডাস্ট্রিতে এসে অনেকটা লড়াই করে জায়গা করে নিতে হয়েছে। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির স্বজনপোষণ নিয়ে আপনাদের কী মত?
সুস্মিতা: ইন্ডাস্ট্রি কেন, সব জায়গাতেই ভালো-খারাপ থাকে। আমি সেটার মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু জানতাম, ঠিক কী করতে চাই। বাবা দু’বছর সময় দিয়েছিলেন। ভাগ্যক্রমে সেই সময়টা এখনও শেষ হয়নি (হাসি)।
সৌম্য: আমার পরিবারে কেউ কখনও অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেননি। মা এখনও বলেন যদি একটা সরকারি চাকরি পেয়ে যাই। তিনশোর বেশি অডিশন দিয়েছি। পাঁচশো টাকা দৈনিক পারিশ্রমিকে অভিনয় শুরু করেছিলাম। অনেক খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে। কখনও আমাকে নির্বাচনের করেও না জানিয়েই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এই অভিজ্ঞতাগুলো জীবনে এগতে সাহায্য করে।
শ্বেতা: আমি আবার স্ট্রাগল নিয়ে সেইভাবে মাথা ঘামাই না। সব কাজেই তো স্ট্রাগল থাকে।
শ্বেতার কথা প্রসঙ্গেই পরের প্রশ্ন। ইন্ডাস্ট্রি সম্বন্ধে বাইরের মানুষের অন্যরকম ধারণা থাকে। নতুনদের কিছু বলতে চান?
সৌম্য: প্যাশনকে অনুসরণ করলেও সাফল্য অধরা থাকতে পারে। তাই ব্যর্থতার জন্যও মনকে তৈরি করতে হবে। রণে ভঙ্গ দিলে চলবে না।
সুস্মিতা: একদম ঠিক। একটাই কথা বলব, স্বপ্ন দেখতে ভুলো না।
শ্বেতা: অভিনয় তো শিল্প। তাই সততা এবং ভালোবাসা থাকলে মনে হয় তাকে কেউ আটকাতে পারবে না।