গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
তখন সন্ধে। নিউ আলিপুরের একটি বনেদি বাড়িতে পা দিতেই নজরে এল ড্রইংরুমে রাখা ক্যামেরার সামনে তিন দিকে তিনটি সোফায় বসে আছে প্রায় গোটা মুখোপাধ্যায় পরিবার। মাঝের সোফায় মধ্যমণি শৈলেনবাবু, তাঁর বাঁদিকে বড় ছেলে অনিমেষ (অনির্বাণ ভট্টাচার্য), বাঁদিকের সোফায় সেজো ছেলে গৌতম (সঞ্জীব সরকার), ছোট ছেলে রাজেন (বিশ্বনাথ বসু), তাঁদের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে আছেন বড় বউমা ঝরণা (সোমা চক্রবর্তী), অকাল প্রয়াত মেজো ছেলে ও বউমা’র মেয়ে রমা (দেবলীনা কুমার) সহ অন্য নাতি-নাতনিরা। আর সবার মাঝে চাকর পঞ্চানন। সে-ই প্রস্তাব দেয়, ছুটির সকালটায় সকলে যখন একসঙ্গে বড়কর্তার ঘরে জড়ো হয়েছেন তখন এক রাউন্ড চা হলে কেমন হয়? প্রস্তাব শুনে সবাই হইহই করে উঠল। কিন্তু চায়ের রকমফের শুনে পঞ্চাননের মুখের অবস্থা হয় বাংলার পাঁচের মতো। শৈলেনবাবুর ‘নর্মাল টি’। কারণ তাঁর সুগারও নেই, প্রেশারও নেই। অনিমেষের দুধ চা, চিনি ছাড়া। গৌতমের লিকার চা চিনি দিয়ে, রাজেনের লিকার চা চিনি ছাড়া, বড় বউমা ঝরণার চাই দুধ-চিনি সহ আদা দেওয়া চা। রমার ব্ল্যাক কফি, কারওর চাই গ্রিন টি, কারওর আবার লেবু দেওয়া লিকার চা। ফোয়ারার মতো ফিরিস্তি শুনে চোখের নিমিষে ভ্যানিস হয়ে যায় পঞ্চানন।
এ তো ‘গল্প হলেও সত্যি’! অস্বীকারও করছেন না পরিচালক-প্রযোজক থেকে শুরু করে অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও। ছবির নামের মধ্যেও রয়েছে তপন সিংহর কালজয়ী ছবিটির ছায়াপাত। ছবির নাম ‘গল্প যদি সত্যি হয়’। ‘তবে রিমেক নয়, অনুপ্রেরণা। তপনবাবুর ছবিটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই গল্প যদি সত্যি হয় তৈরির পরিকল্পনা করা,’ বলেন প্রথমবার বড় পর্দায় পরিচালনা করতে আসা শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। একা নয়, একান্নবর্তী পরিবারে ফিরে গিয়ে বারো ঘর এক উঠোনের গল্প বলতে চান শুভেন্দু। তাঁর মতে, ‘নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির কুফল আমরা দেখে নিয়েছি। মন চাইছে একসঙ্গে থাকতে। পারছি না। বাঙালির আবার যৌথ পরিবারে ফিরে যাওয়া উচিত। তাতেই মঙ্গল।’
আবার অমঙ্গলের আশঙ্কাটা পুরোপুরি উড়িয়ে না দিয়েও বর্ষীয়ান অভিনেতা মনোজ মিত্র বললেন, ‘অনেকদিন একা থেকে মানুষ এখন বুঝতে পারছে একসঙ্গে থাকলে অনেক প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে সহজে লড়াই করা যায়।’ একান্নবর্তী পরিবারে বড় হওয়া বিশ্বনাথ বসু প্রতি বছর হাপিত্যেশ করে বসে থাকেন কখন দুর্গাপুজো আসবে আর গ্রামের বাড়িতে সবাই একসঙ্গে পাত পেড়ে খেতে বসবেন। রাজেন এ ছবিতে বেহালা বাজায়। স্বপ্ন দেখে। ‘তবে আমি মিথ হয়ে যাওয়া ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্রটার দিকে ফিরেও তাকাইনি। ওটা বৃথা চেষ্টা। পারব না। আমি নিজের মতো করে চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি আজকের সময়ের নিরিখে,’ বলেন বিশ্বনাথ। মালদার মানুষ সঞ্জীব সরকার শহরে এসেছিলেন নাটকের টানে। সেই কবে। সঞ্জীবের কাছে, ‘একান্নবর্তী পরিবার একটা বটবৃক্ষের মতো।’ পলাশ অধিকারী একজন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট অর্থাৎ অন্য স্বর নকল করে কথা বলতে পারেন। পুতুলের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর পুতুলও কথা বলে। ভেন্ট্রিলোকুইজিমের পাশাপাশি অভিনয়টাও নিয়মিত করেন পলাশ। ‘মিলিয়ে দেওয়ার পথটাকে সহজ করে দেয় পঞ্চানন’, নিজের অভিনীত চরিত্রটি নিয়ে এমনই উপলব্ধি পলাশের। নিবেদনে অফবিট মিডিয়া অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট।