কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
রুবি সংলগ্ন এক আবাসনের ৪২তলার ফ্ল্যাট এই মূহূর্তে ছবির আঁতুরঘর। সৌমিত্রর ছবির নাম মায়াকুমারী। আহীর আর পর্দার মায়াকুমারীকে শট বোঝাতে ব্যস্ত সৌমিত্র। হঠাৎই কানে এল কাট। পরিচালক সৌমিত্রকে নির্দেশ দিলেন আর এক পরিচালক অরিন্দম শীল। শব্দটা কানে আসতে আসল বিষয়টি পরিষ্কার হল। আসলে এটা ছবির মধ্যে ছবি। বাংলা সিনেমার একশো বছরের বর্ণময় ইতিহাসকে শ্রদ্ধা জানাতে পরিচালক অরিন্দম শীল তৈরি করছেন ‘মায়াকুমারী’। এক বা একাধিক কাল্পনিক অথবা ইতিহাস আশ্রিত চরিত্রের হাত ধরে সেই ইতিহাস বর্ণিত হবে। দেবলীনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘ছায়া দেবীর গল্প’ থেকে গল্পসূত্র সংগ্রহ করে মায়াকুমারী তৈরি করছেন অরিন্দম।
পরিচালকের কথায়, ‘চেয়েছিলাম ২০১৯ সালের ৮ নভেম্বর মায়াকুমারী মুক্তি পাক। কারণ ওইদিন বাংলা সিনেমার একশো বছর পূর্তি হল। কিন্তু গল্প থেকে চিত্রনাট্য তৈরি করে কাজ শুরু হতে দু’বছরের বেশি সময় লেগে গেল। মূল গল্পের আমূল বদল হয়েছে। এখন ছবিটায় এগারোটা গান রয়েছে। তাই এটিকে একদিকে যেমন মিউজিক্যাল বলা চলে, অন্যদিকে তেমনই প্রেম, রহস্য, সামাজিক অবিচার, পুরনো নতুন সিনেমার গল্প মিলেমিশে এখন এটা আমার একটা নতুন সৃষ্টি হতে চলেছে।’ বাংলা সিনেমাকে, তার ইতিহাসকে যেভাবে দেখেছেন সেটাই ছবির মাধ্যমে তুলে ধরতে চাইছেন তিনি।
বাংলা সিনেমার সেকালকে পুনর্নির্মাণ করতে হাতে আঁকা ছবি, ভিএফ এক্স সবেরই ব্যবহার থাকছে। চিত্রনাট্য লিখেছেন শুভেন্দু। ছবির গল্প অনুসারে কালার টোনের বদল থেকে মেকআপে প্রস্থেটিকের ব্যবহারসহ ছবি জুড়ে থাকছে বহু চমক। তবে সবচেয়ে বড় চমক-এই ছবিতে প্রথমবার জুটি বাঁধছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও আবির চট্টোপাধ্যায়। চল্লিশের দশকের বিখ্যাত নায়িকা মায়াকুমারী হঠাৎ নিজেকে লোকচক্ষুর অন্তরালে সরিয়ে নেন এবং সঙ্গীত পরিচালক স্বামীর সঙ্গে শহরের বাইরে কার্যত নির্বাসনে চলে যান। লোকমুখে কথিত বাংলা ছবিতে প্রথম চুম্বন দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য দর্শক সমালোচক মায়াকুমারীর নিন্দায় মুখর হয়। তাতেই রুপোলি জগৎ ত্যাগ করেন নায়িকা। আজ আহীরকে নিয়ে ছবি তৈরির সময় মায়াকুমারীর জীবনের অন্য এক রহস্যের সন্ধান পায় সৌমিত্র। এ
এই মায়াকুমারীর ভূমিকায় রয়েছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। আর আহীর ও কাননকুমারের দ্বৈত চরিত্রে আবির। সৌমিত্রর চরিত্রটি করছেন ইন্দ্রাশিস রায়। শট শেষে আবির বললেন, ‘বাংলা সিনেমার সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁদের সকলের জন্য এই ছবিটা আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য। দ্বৈত চরিত্রে আমি আগেও কাজ করেছি। যদিও এটা সম্পূর্ণ আলাদা। একটা চরিত্র চল্লিশের দশকের আর অন্যটা আজকের। কাননের চরিত্রটা করার জন্য পুরনো বাংলা সিনেমা নিয়মিত দেখছি। একটু নাটকীয়তা, সংলাপে ভালো বাংলার প্রয়োগ করার চেষ্টা করছি। বাকিটা পরিচালক যা বলবেন।’
অরিন্দমের মায়াকুমারী ঋতুপর্ণা হলেও সৌমিত্রর মায়াকুমারী অবশ্য অরুণিমা ঘোষ। শটের ফাঁকে বললেন, ‘ছবিতে আমি একই সঙ্গে মায়াকুমারী আর অরুণা। দুটো চরিত্রের অভিনয়শৈলী সম্পূর্ণ আলাদা। সেটা আমার কাছে খুব চ্যালেঞ্জিং।’ সৌমিত্রর নির্মীয়মান ছবির সহকারী পরিচালক সৌরসেনী মৈত্র। বললেন,‘এই ছবিতে কাজ করতে গিয়ে ক্যামেরার পিছনের অনেক কাজ শিখতে পারছি। তাই ক্যামেরার পিছনে থাকা কলাকুশলীদের প্রতি এই ছবিটা আমার শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।’ সৌমিত্রর ছবির চিত্রগ্রাহক অম্বরীশ ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘চরিত্রটায় যে খুব বেশি ওঠা পড়া আছে বা অনেক রসদ রয়েছে, তা কিন্তু নয়। তবে এই কম রসদেও চরিত্রটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে সেটা ফুটিয়ে তোলাই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি।’ ছবির সুরকার বিক্রম ঘোষ। মায়াকুমারীকে মিউজিক্যাল করার দায়িত্বে হৈমন্তী শুক্লা, মনোময় থেকে শোভন, ইমনসহ প্রায় গোটা বাংলা সঙ্গীত জগৎ। প্রযোজনায় ক্যামেলিয়া।