বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
স্বামী রাজীব, দুই সন্তান বাপ্পা-বাবান আর প্রৌঢ় শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে মল্লিকার মধ্যবিত্ত সংসার। সে সংসারে সুখও আছে,অ-সুখও আছে। উদ্বেগ আর উপাচারের সঙ্গে অবধারিতভাবে আছে স্বামী-স্ত্রী’র চোয়াল কষা লড়াইও। রাজীব একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর সংস্থায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ, মল্লিকা একটি অফিসের সামান্য কর্মী। কাজে আর কর্তব্যে ব্যস্ত দুই মানুষ ঘুম থেকে উঠেই ছুটে চলেছে। যাতে চাকাটা না মাটিতে বসে যায়। ছুটি নেই। তাই বাপ্পা-বাবানের জীবনে খোলা আকাশও নেই। সুতরাং, ওদের কাছে বাবা-মায়ের চেয়ে দাদু-ঠাকুমাই সব। বাঙালি জীবন থেকে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়া একান্নবর্তীতার নুড়ি-পাথর নিয়ে বাপ্পা-বাবান একা একা খেলা করে। সারা দিন, সারা বেলা।
‘ভীষণভাবে আজকের দিনের সমস্যা। কারণ, এখনকার বেশিরভাগ পরিবারে দাদু-দিদিমা নেই। সেই বাচ্চাগুলো ছন্নছাড়ার মতো বড় হচ্ছে। অথচ এর থেকে বেরনোরও কোনও উপায় দেখতে পাচ্ছি না।’ উদ্বিগ্ন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। ছবির রাজীব। নিজের ছোটবেলায় বাবা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে খুব একটা কাছে পাননি শাশ্বত।
সেই আক্ষেপ মিটিয়েছেন গৃহবধূ মা ও ঘুরতে ভালোবাসা দাদামশাই। তাই একাকিত্ব কোনওদিন গ্রাস করেনি শাশ্বতকে। ছোটবেলার দিকে মুখ ফিরিয়ে অভিনেতার স্মৃতিচারণ, ‘দীঘা, পুরী, দাজির্লিং সবই ওই দাদামাশাইয়ের হাত ধরে ঘোরা। কারণ তিনি নিজে ঘুরতে ভালোবাসতেন। কখনও-সখনও বাবা এসে যোগ দিতেন। আমার ছোটবেলায় ছুটি নিয়ে তাই কোনও ক্রাইসিস ছিল না।’ কলেজে প্রথম যৌবনের ধর্ম মেনে উধাও হওয়ার দিনগুলোও শাশ্বতর কেটেছে বেশ। কিন্তু এখন বেজায় মুশকিল। ফলে শ্যুটিং থেকে দু’তিন দিনের অবকাশ পেলেই দে ছুট। ‘বউ, মেয়ের সময় হলে হল, না হলে একাই বেরিয়ে পড়ি যেখানে দু’চোখ যায়,’ অকপট অভিনেতা।
বাপ্পা-বাবানের অবশ্য ছুটির বয়স। চিত্রনাট্যে ওরা ঋতু আন্টি আর শাশ্বত আঙ্কেলকে বেশি কাছে না পেলেও চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ‘বাপ্পা’ অঙ্কনকুমার মল্লিক আর ক্লাস ওয়ান-এর ‘বাবান’ সাত্যকি কর, দুজনেই বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায় দেদার। ঋতুপর্ণার সঙ্গে অঙ্কনের এটি দ্বিতীয় ছবি। সাত্যকির প্রথম।
ঘটনাচক্রে শাশ্বত-ঋতুপর্ণা জুটির এটি তৃতীয় ছবি। আগের ছবি ‘পার্সেল’ এখনও মুক্তি পায়নি।
তবে কলকাতা চলচিত্র উৎসবে এবার পুরস্কৃত হয়েছে। এছাড়াও আছেন প্রদীপ মুখোপাধ্যায় ও সুদীপা বসু। ছবির সুরকার জয় সরকার। গান গেয়েছেন নচিকেতা, রূপঙ্কর, ইমন ও মোহন সিং খাণ্ডোরা।
পরের মরসুমে গরমের ছুটিতেই ‘ছুটি’র মুক্তি নিয়ে আশাপ্রকাশ করে মুরারী বললেন, ‘কর্মব্যস্ততা থাকবেই। তার মধ্যেই সন্তানের দিকেও বাবা-মায়েদের নজর দিতে হবে। এই সামান্য ভারসাম্যটুকু বজায় রাখার বার্তাটা পৌছে দিতে পারলেই বুঝব আমার ছুটি সার্থক।’
ছবি: ভাস্কর মুখোপাধ্যায়