বিমাসূত্রে ধনাগম হতে পারে। প্রেম-প্রণয়ে আনন্দ। কাজকর্মে অগ্রগতি ও সুনাম। ... বিশদ
মধ্যরাতে মাঝগঙ্গায়। অদূরেই মেদুর কুয়াশা শরীরে মেখে শ্বাস ছাড়ছে প্রায় শুনশান রবীন্দ্রসেতু। দিনভর যানবাহন আর জনতার ভার সামলে। ছমছমে লৌহ কাঠামোর সেই ভৌতিক অস্তিত্বকে দুয়ো দিয়ে কল্লোলিনীর দিকের চুড়োর ফাঁক গলে উঁকি দিচ্ছে প্রতিপদের প্রায় পূর্ণ চাঁদ।
হঠাৎ কেঁপে গেল পা। দুলে উঠল শরীর। দু’কুল ছাপানো ঘোলাটে কালো জোয়ারের জলে তুফান তুলে তখন চক্কর কাটতে শুরু করেছে অনুপমা। ছোট্ট জলপরী। আর তাঁর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থর থর করে কাঁপছে ত্রস্ত তরণী এম ভি ডিজায়ার। তারই কোলে, সাজানো সেটে সবেমাত্র শেষ হয়েছে রথীনবাবুর পঞ্চাশতম বিবাহবার্ষিকীর কেক-উৎসব। অভ্যাগতরা মগ্ন নৈশ আহারে। বিলাসবহুল জলযানের ছাদে। অনুপমার ঘূর্ণিপাক নিয়ে তাঁদের কোনও মাথা ব্যথা নেই। অতিথিদের মন ও মুখ ডিনারের প্লেটে। হাত বা চোয়াল থামানোর উপায় নেই, তা সে যতই অনুপমায় আন্দোলিত হোক আনন্দ-তরণী। কারণ, ছুটন্ত অনুপমার ডেকে মাইক হাতে দাঁড়িয়ে আছেন বাংলা সিনেমার সংসারে সদ্য পা রাখা পরিচালক অভিজিৎ সেন। তাঁরই নির্দেশে হাত-পা-মুখ-মাথা নেড়ে চলেছেন অতিথি সেজে থাকা কুশীলবরা। আর সেই ‘অ্যাকশন’কে ক্যামেরায় বন্দি করছেন ডিওপি সুপ্রিয় দত্ত।
গঙ্গার বুকে এভাবে গোটা চারপাক চক্কর খাওয়ার পর মাইকে ‘প্যাক আপ’ ঘোষণা করলেন অভিজিৎ। ঘড়িতে তখন রাত ১২.২০। শেষ হল অতনু রায়চৌধুরী প্রযোজিত ছবি ‘টনিক’-এর কলকাতা পর্বের প্রথম দিনের (রাতের বলাই ভালো) শ্যুটিং। যা শুরু হয়েছিল ঠিক রাত ৮.২০-তে, হাওড়ার ঘুসুড়িতে বাঁধাঘাট সংলগ্ন বসন্ত সিংহ’র জেটি থেকে। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শকুন্তলা বড়ুয়া, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, সুজন মুখোপ্যাধ্যায়, কনিনীকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো রুপোলি তারকা সহ প্রায় পঞ্চাশ জন জুনিয়র আর্টিস্ট আর জনা সাতেক খুদে শিল্পী ও তাদের বাবা-মা’দের নিয়ে, ঝাঁকুনি দিয়ে জল তোলপাড় করে এম ভি ডিজায়ারের জোড়া প্রপেলার ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে। তক্কে তক্কে এম ভি অনুপমাও। আরও একপ্রস্ত শ্যুটিং ইউনিট নিয়ে। ডিজায়ারের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে।
ঘটনা-দৃশ্য সামান্যই। অতি সাবধানী ও নিয়ম বাতিক ছেলে সুজনের (পার্থ) শাসনে লঞ্চের কক্ষে গুটিসুটি বসে আছেন পরাণবাবু। অথচ তিনি এসেছেন তাঁরই বন্ধু বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর (রথীন) পঞ্চাশতম বিবাহবার্ষিকীতে সপরিবারে আমন্ত্রিত হয়ে। স্বামীর গোমড়া মুখ দেখে স্ত্রী শকুন্তলাদেবী (উমা) বলেন, ‘কি গো তোমার বন্ধুর বিবাহবার্ষিকী। চল।’ উত্তরে অভিমানে ঝাঁঝিয়ে ওঠেন পরাণবাবু, ‘কারও পৌষ মাস, কারও হাহুতাশ।’ আসলে ছেলে বাবাকে লঞ্চের ডেকে যেতে বারণ করেছে। গঙ্গার হাওয়ায় ঠান্ডা লেগে যাবে। ছেলের এই অতিরিক্ত নজরদারি আর শাসন একদম পছন্দ নয় পরাণবাবু ওরফে জলধরের। এদিকে, বাইরে লঞ্চের ডেকে জোরদার পার্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। তাতে শামিল বউমা কনিনীকাও (রানি)। চলন্ত লঞ্চের নানা দিক থেকে দৃশ্যগুলি ‘টেক’ করছেন ‘মুন্নাভাইএম বি বি এস’ ছবিতে রাজকুমার হিরানির সহপরিচালক অভিজিৎ। বস্তুত এটিই ‘টনিক’-এর প্রথম দৃশ্য। কর্পোরেট ছেলের অনুশাসন না মানতে পেরে একদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান জলধর ও উমা। প্রৌঢ় দম্পতির সেই অজ্ঞাত অভিযানের শ্যুটিং সদ্য শেষ হয়েছে উত্তরবঙ্গের নানা লোকেশনে। সেখানেই জলধর-উমার সঙ্গে আলাপ হয় এক প্রাণবন্ত যুবকের। এই দম্পতির বদ্ধ জীবনে মুক্ত বাতাস বয়ে নিয়ে আসে বাধ্য ছেলে দেব। হ্যাঁ, এই ছবির অন্যতম আকর্ষণ এই সুপারস্টারই। স্টারডম ইমেজ ভাঙা দেবের নিতান্ত সাদামাঠা এক ছেলের চরিত্রে গ্ল্যামারহীন অভিনয়। তাহলে কি দেবই ছবির অব্যর্থ ‘টনিক’? হাসেন অভিজিৎ। প্রশ্নটি পাশ কাটিয়ে ‘দিদি নম্বর ওয়ান’, ‘সা রে গা মা পা’-এর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর বলেন, ‘আসলে সমাজে কোনও অসুখ নেই, অসুখ যা আছে আমাদের মনের মধ্যে। কখনও কখনও হয়তো আমরা সেটা বুঝতে পারি না।’ দেব অভিনীত চরিত্রটির নাম কী? কিছুতেই মুখ খুললেন না এনএসডিতে নাসিরুদ্দিন শাহ’র কাছে ওয়ার্কশপ করে আসা পরিচালক। শুধু জানালেন,‘পরাণদা আর দেবই এই ছবির বিশল্যকরণী।’
গোমড়ামুখো পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য উত্তেজিত অন্য কারণে। ‘কবে যে কোথায়’ সিরিয়ালের জন্য তাঁর থাইল্যান্ডে সমুদ্রের উপর শ্যুটিং করার স্মৃতি উসকে উঠছে বারবার। গৌতম সেনের ‘পাখি’ করার সময় একবার মাঝগঙ্গায় শ্যুটিং করতে হয়েছিল বিশ্বজিৎবাবুকে। তবে মাঝরাতের অভিজ্ঞতা তাঁর এই প্রথম। বহু আগে নৌকোতে একবার শ্যুটিং করলেও রাতদুপুরে গঙ্গার উপর চলন্ত লঞ্চে এই প্রথম শ্যুটিং করলেন শকুন্তলা বড়ুয়াও। সুজন-কনিনীকাও সমান উত্তেজিত, এই প্রথম গঙ্গাবক্ষে সিনেমার শ্যুটিং করে।
ইতিমধ্যে ‘লক্ষ্মীছানা’ নীলকাকুর (সুজন) সঙ্গে বেশ ভাব হয়ে গিয়েছে রূপকথা কুণ্ডুর। ক্লাস ওয়ানের ছাত্রীটি অভিনয় করছে পার্থ-রানির কন্যার চরিত্রে। লঞ্চ-পিকনিকে তার সঙ্গীও জুটেছে অনেক। সকলের সঙ্গে ক্লান্তিহীন উৎসাহে জীবনে প্রথম ক্যামেরার সামনে শট দিল সে। ‘প্যাক আপ’ বললেই যে পিকনিক মাঝপথে থেমে যায়, সেটাও রূপকথা জানল সেই রাতে। কারণ, তখনও কনি আন্টির সঙ্গে ডিনার করার শট দিচ্ছিল রূপকথা। সেটাও তো পুরো খাওয়া হল না। রূপকথার সরল যুক্তি, ‘কাল তো স্কুল ছুটি। আর একটু পিকনিক হতেই পারত। ভাল্লাগে না।’