বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
শ্বাসকষ্ট বা সিওপিডি থাকলে ওষুধপত্রের সঙ্গে খুব সহজ সমাধান হিসেবে ইনহেলার ধরিয়ে দেওয়ার রীতি নতুন নয়। যুগ যুগ ধরেই রোগীদের এই অভ্যেসে অভ্যস্ত করে তোলা হচ্ছে। বাড়াবাড়ি হলে ইনহেলার নেওয়া ছাড়া গতিও থাকে না। তবে যে কোনও অসুখকেই যদি প্রাথমিক অবস্থায় আটকে দেওয়া যায়, তাহলে তার সঙ্গে লড়াই অনেক সহজ হয়। তাই শ্বাসকষ্ট বা সিওপিডি-র সমস্যা দেখা দেওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে যোগব্যায়াম শুরু করলে ইনহেলারের কোনও প্রয়োজন পড়ে না। যাঁরা দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ ইনহেলার ব্যবহার করছেন, যোগব্যায়াম তাঁদের ক্ষেত্রেও খুব ফলপ্রসূ। নিয়ম মেনে ব্যায়াম করলে তাঁদেরও ইনহেলার ব্যবহারের প্রয়োজন অনেকটা কমে যায়। তবে যোগাসন একটি অভ্যেস। এক দিনে ফল মেলে না। তবে কেউ যদি মনে করেন খুব বাড়াবাড়ি অবস্থায় হঠাৎ একদিন যোগাসন করলেই সুস্থ হয়ে ওঠা যাবে, তা ভ্রান্ত ধারণা। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ব্রঙ্কোডায়ালেটরের ওষুধপত্র দরকার। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা প্রয়োজন। তবে এই রোগীই যদি একটু সুস্থ হওয়ার পর নিয়মিত কিছু বিশেষ ব্যায়াম ও প্রাণায়াম শুরু করেন, তাহলে অবশ্যই তাঁর এই ইনহেলার নির্ভরতা অনেক কমবে।
ইনহেলারের কাজ আদতে ফুসফুস ও ব্রঙ্কাসে অক্সিজেনের বাড়তি জোগান দেওয়া। এই ডিভাইসটি যে কাজ করে, নানা আসন ও প্রাণায়াম ঠিক একই কাজ করে, তাও আবার কোনওরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া। যেমন ধরুন, যখন দমটা আটকে রেখে কুম্ভক করা হয়, তখন ফুসফুসের অক্সিজেন শোষণ করার ক্ষমতা প্রায় ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। শ্বাস নিয়ে কুম্ভক করলে অক্সিজেনের শোষণ বাড়ে ২০ শতাংশ। সাধারণত প্রাকৃতিক নিয়মে ফুসফুসের নীচের দিকে অক্সিজেন এমনিই অনেক কম পৌঁছয়। একে ‘মিসম্যাচ অব দ্য ভেন্টিলেশন অ্যান্ড পারফিউশন’ বলে। অনুলোম-বিলোম, ভ্রামরি, নেতি, ধৌতি-সহ নানা ব্যায়াম করেও এই প্রতিকূলতাকে অনেকটা জয় করা যায়। ফলে শ্বাসের ঘাটতি কমবে, ইনহেলার প্রয়োজন পড়বে না। সাধারণত, শ্বাসকষ্টে ভোগেন যাঁরা, তাঁদের প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম কমজোরি হয়। মধ্যচ্ছদা বা ডায়াফ্রামের পেশিও দুর্বল হয়। ব্যায়াম করে সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে প্যারাসিমপ্যাথেটিকের চেয়ে বেশি কার্যকর করে তুলতে পারলে ও ডায়াফ্রামের পেশিকে শক্তিশালী করলে ফল মেলে হাতেনাতে।
কী কী আসন করব
নিয়মিত ‘নেতি’, কিছু সহজ প্রাণায়াম ও কয়েকটি ব্যায়ামের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
নেতি: বৌদ্ধতন্ত্রে হঠযোগের অন্যতম অভ্যেস এটি। হালকা গরম জলে সামান্য নুন মিশিয়ে নিন। এবার এক নাক দিয়ে সেই জল নিয়ে সামনের দিকে একটু ঝুঁকে ঘাড় কাত করে অন্য নাক দিয়ে সেই জল বের করে দেওয়ার নামই নেতি। এতে নাসারন্ধ্র পরিষ্কার হয়।
বমনধৌতি: যাঁরা নিয়মিত ইনহেলার ব্যবহার করেন, তাঁদের জন্য এই ধৌতিবিদ্যা খুব কার্যকর। সকালে ঘুম থেকে উঠে বিশুদ্ধ পানীয় জল একটু গরম করে চার গ্লাস খান। মিনিট পাঁচেক বিশ্রাম করে গলায় আঙুল দিয়ে বমি করে দিন। এতে প্রায় অনেকটা জল সঙ্গে বুক ও পেটের কফ ও নানা টক্সিন বেরিয়ে যাবে। একে বলে বমনধৌতি। এতে শুধু শ্বাসকষ্ট বা সিওপিডি-র রোগীরা ভালো থাকেন তা-ই নয়, নানা ধরনের বাত, গ্যাস-অম্বলের রোগীরাও এতে খুব উপকার পান। ম্যাক্সিলারি সাইনাস থাকলে, নাকে পলিপ থাকলেও এই বমনধৌতি খুব কার্যকর। তবে হার্টের অসুখ থাকলে বা পেটে আলসার থাকলে ধৌতি করবেন না।
বুকের পেশির সংকোচন প্রসারণ: বজ্রাসনে বা চেয়ারে বসে মাটির সমান্তরালে তুলে দিতে হবে। এবার শ্বাস নিতে নিতে হাত দুটো মুঠো করে দু’দিকে ছড়িয়ে পিঠের দিকে নিয়ে যেতে হবে। আবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে হাত সামনের দিকে আনুন। ১০ বার করুন একটি সেটে।
অনুলোম-বিলোম: শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে যেসব প্রাণায়াম সবচেয়ে ভালো কাজ দেয়, তার মধ্যে অনুলোম-বিলোম অন্যতম। অনুলোমের ক্ষেত্রে এক দিকের নাক বন্ধ থাকবে। প্রথমে মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দিয়ে ডান দিকের নাকের ছিদ্র চেপে ধরে, বাঁ দিক দিয়ে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার কাজ করতে হবে। একই কাজ করতে হবে বাঁ দিকের নাকের বেলায়। পরে বাঁ দিকের নাকের ছিদ্র চেপে ধরে, ডান দিক দিয়ে শ্বাস গ্রহণ ও বর্জনের অভ্যেস করতে হবে। বিলোমের বেলায় দুই নাক দিয়েই একই সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই শ্বাস নেওয়া প্রয়োজন।
ভ্রামরি প্রাণায়াম: পদ্মাসন বা সুখাসনে বসুন। বুড়ো আঙুল ও তর্জনী জুড়ে হাতের তালুকে মাটির দিক করে দুই হাঁটুর উপর রাখুন। সোজা হয়ে বসে চোখ বন্ধ করে পুরো শরীরের আরামদায়ক অবস্থায় রাখুন। তর্জনী ও মধ্যমা দিয়ে কানের গহ্বর বন্ধ করে দিন বা কর্ণগহ্বরের পাশের মাংসল অংশ চেপে কান বন্ধ ধরুন। এবার নাক দিয়ে স্বাভাবিক উপায়ে জোরে শ্বাস নিন। শ্বাস ছাড়ুন ধীরে ধীরে। ছাড়ার সময় ভ্রমরের মতো গভীর, একটানা মৃদু গুঞ্জন করতে হবে মুখ দিয়ে। এতে কানের ভিতর একটি কম্পন তৈরি হবে। ভ্রামরি প্রাণায়ামে বুকে সহজে কফ জমে না। শ্বাসকষ্টের কষ্ট কমে।
পেট ও বুকের শ্বাসের ব্যায়াম: পেটের উপর দুটো হাত রেখে শ্বাস নিতে নিতে পেটকে ফোলান, শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পেটকে ভিতরের দিকে ঢোকান। এতে পেটে শ্বাসের মিশ্রণ ভালো হয়। একই কাজ বুকের উপর হাত রেখে করতে হবে। শ্বাস ছাড়ার সময় বুক উপরের দিকে উঠবে। শ্বাস ছাড়ার সময় বুক ভিতরের দিকে ঢুকবে। এতে বুকের খাঁচা বড় হয়, অক্সিজেন বেশি যায়।