কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
গায়ে রোদ লাগানো কি ভালো? আপাতদৃষ্টিতে এই প্রশ্নটি সহজ ও উত্তরটিও জানা। এককথায় বললে, ‘হ্যাঁ›। ইদানীং আধুনিক জীবনযাপনের কোপে পড়ে প্রকৃতিবিচ্ছিন্ন অবস্থায় মানুষ থাকতে বাধ্য হয়। সকালে উঠেই পেশাক্ষেত্রে দৌড়, সারাদিন কম্পিউটারের সামনে বসে বা ঘরবন্দি হয়ে কাজ। শেষ সন্ধেয় বা রাতে বাড়ি ফেরা। দিনের প্রায় পুরোটাই কাটে এসি বা নন এসি বদ্ধ ঘরে। ফলে সূর্যালোক লাভের অবকাশ ক্রমে কমে আসছে। অথচ সভ্যতার আদি কাল থেকেই মানুষ প্রকৃতির মাঝে বেড়ে উঠেছে। তার শরীর গঠন তথা সিমবায়োটিক সিস্টেমে প্রকৃতি ছিল ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। এখন সময় বদলেছে। জীবনের ইঁদুরদৌড়ে ছুটতে গিয়ে সেই প্রকৃতিকে অনেকাংশে বাদ দিয়ে মানুষ দিনাতিপাত করছে। ফলে মানুষের দেহে সূর্যালোকের উপস্থিতি এখন অনেকটাই তলানিতে। অথচ গাছ যেমন সূর্যালোক ভিন্ন বেঁচে থাকার রসদ জোগাড় করতে পারে না, মানুষও কিন্তু তেমনটাই।
কেন প্রয়োজন সূর্যালোক?
সারা বছরই আলাদা করে রোদের প্রয়োজন কেন পড়ে শরীরের? এর উত্তরেও অনেকে হয়তো বলে উঠবেন, ভিটামিন ডি-র উন্নততর উৎস হল রোদ বা সূর্যালোক। তবে আধুনিক গবেষণা ভিটামিন ডি-কে আর একটু এগিয়ে রেখেছে। এখন ভিটামিন ডি-কে আর ‘ভিটামিন’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে না। ভিটামিন ডি-কে এখন হরমোনের সমগোত্রীয় ভাবা হয়। সেই ভিটামিন ডি সর্বোচ্চ পরিমাণে মেলে সূর্যালোক থেকে। তাই শিশু থেকে বয়স্ক, সকলেরই দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় জুড়ে গায়ে সূর্যালোক লাগানো প্রয়োজন। কারণ এই সূর্যালোকেই লুকিয়ে আছে নানা রোগমুক্তির বীজ। ত্বকের এক্সোডার্মে সূর্যালোক পৌঁছে, তা এন্ডোডার্ম দিয়ে শোষিত হয়ে সরাসরি রক্তে মেশে ও নানা শারীরিক উপকার সাধন করে।
• সূর্যের আলোয় থাকা ভিটামিন ডি শরীরের হাড়কে মজবুত করে, ‘বোন মেটাবলিজম’-এর উন্নতিসাধন করে।
• রোদ্দুর শরীরে লাগলে দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। নানা সংক্রমণকেও প্রতিহত করে।
• ছোটবেলা থেকে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় জুড়ে দেহে রোদ লাগানোর অভ্যাস থাকলে বয়সকালে অস্থি ও অস্থিমজ্জার নানা অসুখে খুব একটা কাবু হতে হয় না।
• সর্দি কাশির প্রবণতা থাকলেও সূর্যালোক গায়ে লাগানো প্রয়োজন। সূর্যরশ্মি শরীরে প্রবেশ করে শ্লেষ্মা ও কফজনিত অসুখের সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে।
• সূর্যালোকের উপস্থিতিতে কোষের বৃদ্ধি ভালো হয়। শারীরবৃত্তীয় নানা কাজে সতেজভাবে কোষ অংশ নিতে পারে।
• বিশুদ্ধ আলো ও হাওয়া শরীরের সার্বিক সুস্থতার জন্যও প্রয়োজন।
দিনে কতক্ষণ সূর্যালোক
নির্দিষ্ট করে কোনও সময়ের বাধানিষেধ এতে নেই। তবে আমাদের দেশ গ্রীষ্মপ্রধান। তাই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে রোদ্দুরের তেজ বাড়ে। বেশিক্ষণ রোদে থাকলে শরীরের অন্য অনেক সমস্যা আবার মাথাচাড়া দেয়। গরমকালে হিট স্ট্রোক হতে পারে। তাই চড়া রোদ গায়ে লাগানোর একেবারেই দরকার নেই। গ্রীষ্মকালে সকাল ৮টা-৯টা আর শীতে সকাল ৯টা-১০টা হল গায়ে রোদ লাগানোর উপযুক্ত সময়। সকালে না পারলে গরমে বিকেল ৪.৩০-৫ টা নাগাদ আর শীতে দুপুর ৩টে-৪টে নাগাদ কিছু সময় রোদে কাটান। হাতে এক ঘণ্টা সময় না থাকলে অন্তত ৩০ মিনিটও রোদে বসা ভালো।
বয়স্ক অনেকেই রোদে বসে চা খান, কাগজ পড়েন, শব্দছক সমাধান করেন, গান শোনেন। এই অভ্যাস থাকা স্বাস্থ্যকর। শিশু ও মাঝবয়সিদের রুটিনেও রোদে বসে কাজ সারার অনুশীলন রাখতে হবে।
রোদ কাদের জন্য ভালো নয়
চড়া রোদ কারও জন্যই ভালো নয়। এতে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকে নানা বিরূপ প্রভাব পড়ে। সকালে বা বিকেলের মৃদু সূর্যালোক শরীরে প্রবেশ করানোর কথাই বলা হয়। তবে সোরিয়াসিস বা অন্যান্য চর্মরোগে আক্রান্ত রোগীরা কতটুকু সময় সূর্যালোক সরাসরি গায়ে লাগাবেন, তা জেনে নিন চিকিৎসকের থেকে। সূর্যের আলোয় ত্বক অধিক স্পর্শকাতর (ফোটোসেনসিটিভ) হলে বা সূর্যালোকে অ্যালার্জি থাকলেও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রোদ লাগান গায়ে।