কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
চুলের রঙের খুঁটিনাটি
রং চুলে কত দিন থাকবে সেই হিসেবে হেয়ার কালারকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়— দীর্ঘস্থায়ী, ক্ষণস্থায়ী ও মাঝামাঝি।
চুলের রং অর্থাৎ ‘ডাই’ হল একটা রাসায়নিক। ডাইয়ের সঙ্গে অক্সিডাইজিং কেমিক্যাল মিশিয়ে তারপর মাথায় মাখা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থাকে।
আসলে রং হিসেবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে বস্তুটি ব্যবহার করা হয়, তার নাম পিপিডি। হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের সঙ্গে বিক্রিয়ার পর এটি কালচে রং তৈরি করে। এই রাসায়নিকগুলির মিশ্রণ চুলে নির্দিষ্ট সময় লাগিয়ে রাখলে, চুল কালো হয়। এই দু’টি রাসায়নিক ছাড়াও আরও কিছু উপাদান চুলের রঙে থাকে যেমন— অ্যামোনিয়া, রেসরসিনল, লেড অ্যাসিটেট ইত্যাদি।
রং যাতে চুলের ভেতরে ভালো করে প্রবেশ করে, সেই জন্য চুলের ত্বকে ছোট ছোট ছিদ্র তৈরি করে অ্যামোনিয়া। এছাড়া পুরো রিয়্যাকশন যাতে ভালো করে হয় তার সঠিক পরিবেশও অ্যামোনিয়াই তৈরি করে। তাই চুলের রঙে এই রাসায়নিকটি থাকা খুবই জরুরি।
অপরদিকে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড শুধু রঙকে অক্সিডাইজ করে না, চুলের নিজস্ব রংকে নষ্টও করে। ঠিক যেমন নতুন রং করার আগে, পুরানো দেয়ালকে ঘষে মেজে রং বিহীন করা হয়, তেমনটাই হয় এখানেও। অবশ্য এই কাজটা করতে গিয়ে চুলের সালফারটাকেও এই রাসায়নিক নষ্ট করে। এই হল মোটের উপর চুলের রঙের প্রক্রিয়া। এখানে বলে রাখি, হেয়ার কালারের মধ্যে কালো রং ব্যবহারই বেশি হয়। তবে অন্য নানা রঙের ডাইও বাজারে পাওয়া যায়।
নানাবিধ সমস্যা
মাথা ভর্তি সাদা চুল নিয়ে থাকা বহু মানুষই পছন্দ করেন না। তাই বছরের পর বছর তাঁরা চুল রং করে চলেছেন। অবশ্য এসব করার পরও তেমন কোনও গুরুতর সমস্যা বেশিরভাগ মানুষেরই হয় না। তবে অনেকে কিন্তু সমস্যাতেও পড়েন।
রং থেকে অ্যালার্জি বহু মানুষের হয়। অনেক ক্ষেত্রে রং বহুদিন ব্যবহার করার পরও হঠাৎ অ্যালার্জি হতে পারে। এর মূল কারণ হল পিপিডি। এই বস্তুকে বাদ দিয়ে চুলের রং তৈরি করা মুশকিল। অনেকসময় ‘ডাই অ্যামাইনো টলুইন’ দিয়ে রং তৈরি করা হয়। এছাড়াও অন্য কিছু কেমিক্যাল ব্যবহার হয়। বাজারে বিক্রিত প্রায় সব রঙেতেই পিপিডি থাকে।
এমনকী বহু হেনাতেও পিপিডি থাকে। হেনা মূলত চুলকে লাল রং দেয়। তবে কালো হেনা মানেই ওতে পিপিডি আছে।
চুলের রং থেকে অ্যালার্জি হলে মাথা চুলকায়, মাথার ত্বক ফুলে যায়। এমনকী মুখ, চোখের পাতাও ফুলে যেতে পারে। আরও বাড়াবাড়ি হলে রস গড়ায়। মাথা থেকে অ্যালার্জি শরীরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
অনেকে আবার রং শুধু গোঁফে লাগান। এর থেকেও অ্যালার্জি হতে পারে।
এখানে জেনে রাখা ভালো, কিছু সংস্থা অ্যামোনিয়া ফ্রি রং নিয়ে এসেছে। সেই সমস্ত রং বেশিদিন স্থায়ী হয় না। তবে চুলের ক্ষতি কম হয়। আর মনে রাখবেন, রং করার সময় ডেভেলপারের পরিমাণ রঙের থেকে কম নেওয়া উচিত। এতে ক্ষতি কম হয়।
আর সবথেকে বড় কথা, রঙে থাকা প্রতিটা কেমিক্যাল যেমন— অ্যামোনিয়া, লেড অ্যাসিটেট ও অন্যান্য রাসায়নিক শরীরের ক্ষতি করতে পারে। সেদিক থেকে দেখলে রং না লাগানোর অনেক সুফল আছে।
শেষে বলি, রঙে পিপিডি-এর মাত্রা কম থাকলে ক্ষতি কম হতে পারে। আর অবশ্যই রঙের প্যাকেটে যতক্ষণ মাথায় রং লাগিয়ে রাখার কথা রয়েছে, তার থেকে একটুও বেশি সময় মাথায় রাখবেন না। সময় হলেই ধুয়ে ফেলুন। রং থেকে কোনও সমস্যা হলে অবশ্যই ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
পরামর্শে ডাঃ বি সি রায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক সায়েন্সেস-এর ডার্মাটোলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ নীলেন্দু শর্মা।