আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সমাগমে আনন্দ বৃদ্ধি। চারুকলা শিল্পে উপার্জনের শুভ সূচনা। উচ্চশিক্ষায় সুযোগ। কর্মক্ষেত্রে অযথা হয়রানি। ... বিশদ
আমাদের রাজ্যে দ্রুত করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পিছনে অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোট প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা। আট দফায় ভোট হওয়ার কারণে বারংবার নেতা-নেত্রীদের প্রচার চালাতে হয়েছে। সেইসঙ্গে হয়েছে মানুষের জমায়েত। ফলস্বরূপ এড়ানো যায়নি সংক্রমণ। অবশ্য সংক্রমণ এড়াতে নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে প্রচার সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এছাড়া রাজ্যের বেশ কিছু দ্রষ্টব্য জায়গা যেমন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, জাদুঘর ইত্যাদিতে দর্শকের প্রবেশ আপাতত বন্ধ করা হয়েছে।
সারা দেশে এখন প্রতিদিন দু’লক্ষেরও বেশি মানুষ একসঙ্গে আক্রান্ত হচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যে মোট আক্রান্তর সংখ্যা ৬ লাখের ওপরে চলে গিয়েছে। মারা গিয়েছেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। ভারতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি! দেড় লক্ষেরও বেশি মানুষের পরমায়ু শেষ হয়েছে। সুতরাং জনগণকে সতর্ক হতেই হবে।
নতুন স্ট্রেইন: দেশজুড়ে এখনই জেনোমিক স্টাডি দরকার
মহারাষ্ট্রে ইতিমধ্যে ৬৬১ জন কোভিড আক্রান্তর নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ৬১ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছেন মিউট্যান্ট ভাইরাস দ্বারা। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বাংলায় উত্তরোত্তর করোনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ এক ধরনের ডবল মিউট্যান্ট ভাইরাস। যার সঙ্গে মহারাষ্ট্রের ভাইরাসটির সাদৃশ্য রয়েছে। এছাড়া দেশের মধ্যে নানা রাজ্যেই সুপার স্প্রেডার হিসেবে কিছু মানুষকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কেন তাঁরা সুপার স্প্রেডার? তাঁরাও কি নতুন মিউট্যান্ট ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত? সেই নিয়েও সমীক্ষা এবং পরীক্ষা হওয়া দরকার। এই ধরনের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর জানতে খুব দ্রুত জেনোমিক স্টাডি করা উচিত সমগ্র দেশ সহ আমাদের রাজ্যেও। কারণ চলতি বছরে, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ-এর ধাক্কায় সবচাইতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন কমবয়সিরা। এই বয়সের মানুষরাই বাড়ির বাইরে বের হন বেশি। অফিস কাছারিতে যান, বাজার করেন। তবে আশার কথা একটাই, সংক্রমণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রাণহানি আগের বছরের সঙ্গে তুলনায় কম হচ্ছে। সমস্যা হল, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করা না গেলে মৃত্যুহার বাড়বে। কারণ ভারতের মতো বিপুল জনসংখ্যাবিশিষ্ট দেশে যত বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হবেন, ততই মৃত্যুর হিসেবও বাড়বে।
কেন মিউট্যান্ট ভাইরাস নিয়ে সতর্ক হবেন?
ভারতে নতুন ধরনের ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। প্রশ্ন হল ডাবল মিউট্যান্ট কী? এক্ষেত্রে দু’টি মিউটেশন ঘটা ভাইরাস একত্রে যে ধরনের মিউট্যান্ট ভাইরাস হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তাকে ডাবল মিউট্যান্ট ভাইরাস বলে। এই ডাবল মিউট্যান্ট ভাইরাস তার স্পাইক প্রোটিন মার্কারে পরিবর্তন করে ফেলেছে। ফলে আরটি পিসিআর-এও কিছু ক্ষেত্রে রোগ ধরা পড়ছে না।
১. মিউটেড ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতাও আগের তুলনায় বেশি। ২. এমনকী যাঁদের আগে সংক্রমণ হয়েছে, তাঁরাও এই ভাইরাসের শিকার হতে পারেন। দেখা দিতে পারে উপসর্গও। ৩. সংক্রামিত সকল ব্যক্তির মধ্যেই উপসর্গ দেখা দেবে, এমনটা নয়। উপসর্গহীন কিছু রোগী নিশ্চয়ই থাকবেন। এই উপসর্গহীন সংক্রামিতরা অন্যান্য সুস্থ কমবয়সি সহ বয়স্ক মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা রাখেন। ৪. আক্রান্ত হতে পারেন সুগার, প্রেশার, কিডনির অসুখ, হার্টের অসুখের মতো কোমর্বিডিটি থাকা মানুষজন। ঘটতে পারে অকাল প্রাণহানি।
ডবল মিউট্যান্ট এত ছড়াচ্ছে কেন?
একটাই কারণ— অসতর্ক এবং গা ছাড়া মনোভাব। নিয়মরক্ষার মতো করে থুতনির নীচে মাস্ক পরা, অথবা একেবারেই মাস্ক না পরা সেকেন্ড ওয়েভ আসার অন্যতম বড় কারণ। অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো দূরত্ববিধি শিকেয় তুলে কেনাকাটা করা, নাইট পার্টি, বাড়িতে জন্মদিন সহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।
অসুখ হলে কী করবেন?
আগের মতোই রোগীকে অন্যান্যদের থেকে পৃথক করতে হবে। বাড়িতে চিকিৎসা করা সম্ভব হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মানুন। ওষুধ খান। অবস্থা খারাপ দেখলে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে এই প্রসঙ্গেই বলে রাখি, হাসপাতালে প্রচুর শয্যা আছে এমন নয়। এমনকী অক্সিজেনের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া খুব দ্রুত দেশের সকল মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে এমন সম্ভাবনার কথাও জানা যাচ্ছে না। তাই নিজে সতর্ক হন। জমায়েত এড়ান। মাস্ক পরুন। হাতে বারবার স্যানিটাইজার দিন। হাত ধুয়ে নিন সাবান ও জল দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে। এভাবে নিজে সুরক্ষিত থাকুন ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন।