বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
দোল মানে আমাদের কাছে বাঁধ ভাঙা রঙের উৎসব। অতিরক্ষণশীলও মনের রাশ আলগা করে ফেলতে বাধ্য হন এই সময়। দোল উৎসব নিশ্চয়ই আনন্দের উৎসব। তবে আবেগের বশে আমাদের হুঁশ খুইয়ে ফেললে চলবে না। সচেতন হতে হবে। কারণ ওইদিন যেসব রং ব্যবহার করা হয়, তার সিংহভাগই রাসায়নিক রং।
রাসায়নিক রং-এর বিপদ—এখন প্রশ্ন হল, দোলের রঙে কেমন ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়? লাল রঙে ব্যবহৃত হয় কঙ্গো রেড, রোজামিন ও ক্রোসিন স্কারলেট। হলুদ রঙে মেটনিল ইয়েলো ও লেড ক্রোমেট। রুপালি ও সোনালি রঙে বিভিন্ন ধাতুচূর্ণ। এগুলির মধ্যে কারও কারও প্রভাবে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দোলের রং সাধারণত চামড়ার ওপর সীমাবদ্ধ থাকে। তাই তেমন কোনও শারীরিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। কিন্তু চোখ-মুখ বা ক্ষতের মাধ্যমে রংগুলি শরীরে ঢুকলে বিপদ হতে পারে।
১. রাসায়নিক সস্তার রং জল বা তেলে সহজেই গুলে যায়। স্বাভাবিকভাবেই ত্বকে প্রদাহ বা ‘কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস’ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। বিশেষ করে যাঁদের ত্বক বেশি স্পর্শকাতর।
২. খেয়াল করলে দেখবেন, অনেকের ফুড অ্যালার্জি থাকে। ডিম, চিংড়ি, বেগুন ইত্যাদি খেলেই মুখ ফুলে ঢোল! সেইরকম অনেকের অ্যালার্জি থাকতে পারে রাসায়নিক রঙেও। এক্ষেত্রে গায়ে-মুখে ছোট ছোট ফুসকুড়ি বেরয়, চুলকায়। এমনকী লাল হয়ে রস গড়ানোর আশঙ্কাও থাকতে পারে। এটাই ‘কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস’। এই রোগের প্রাবল্য নির্ভর করে অনেকগুলো বিষয়ের ওপর। প্রথমত, ত্বকের সহ্য ক্ষমতা। অর্থাৎ একই রঙে একজনের অ্যালার্জি হয়, আর একজনের হয় না। একজনের বেশি হয়, অন্যজনের কম। আবার, কতক্ষণ ধরে রং চামড়ার উপর লেগে আছে, সেই বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। সমান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, চিকিৎসা সঙ্গে সঙ্গে শুরু করা হল কি না। এখন যে রঙে আপনার অ্যালার্জি আছে, অনেকক্ষণ ধরে সেই রং গায়ে লেগে থাকল এবং আপনি সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করালেন না, সেক্ষেত্রে বড় ভোগান্তি হতে পারে।
৩. গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন, ব্রেন, লিভার, কিডনির উপরেও রংগুলির ক্ষতিকর প্রভাব আছে। তবে দোলের রং থেকে বেশি ক্ষতি হয় ত্বকের।
কোন রং-এ অ্যালার্জি, বুঝবেন কীভাবে—এটাও ঠিক, দোল খেলার সময় অতশত ব্যাপার মাথায় থাকে না যে, কোন রংটা ক্ষতিকর। সেক্ষেত্রে যে রং লাগলে গা চিড়বিড় করে উঠবে, জানবেন সেই রং থেকে অ্যালার্জি হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। এমন হলে সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে ফেলুন রং। প্রথমবার ধোয়ার সময় পুরো রং উঠে না গেলে ঘষাঘষি করবেন না। ঘণ্টাখানেক বাদে আবার ধোবেন। এভাবে বড় ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হবে। এরপর আপনি রোজ যে লোশন ত্বকে ব্যবহার করেন, তা লাগিয়ে নিন।
চুলে রং লাগা এড়াতে কী করবেন—আসি চুলে রং লাগার প্রসঙ্গে। চুলে রং লাগলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চুল বিবর্ণ, রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। একটু ভালো শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করলে, সেই রুক্ষ ভাব কেটে যায়। মুশকিল হল, চুলে রং পাকাপাকিভাবে ধরে গেলে তখন চুল বড় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। সমস্যা একটাই, রং মাথার তালুতে লেগে সেখান থেকে কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। তাই এবার দোলে মাথায় ‘মেডিক্যাল ক্যাপ’ ব্যবহার করতে পারেন। করোনা পরিস্থিতি আসার পর মেডিক্যাল ক্যাপ সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে। আসা যাক চোখের সমস্যায়। দোল খেলার সময় চোখে রং ঢুকে যাওয়ার সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। এমন দুর্ঘটনায় চোখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন। তাতেও অস্বস্তি না গেলে একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো ড্রপ ব্যবহার করুন। তবে কখনওই চোখ কচলাবেন না।
নিরাপদ রং হল বাড়িতে তৈরি রং—তাই প্রয়োজন নিরাপদ রঙে দোল খেলা। বাড়িতে বসেই বানিয়ে ফেলুন না দোলের রং! জলে গিরিমাটি গুলে তৈরি করুন লাল রং। রং পাকা করতে মিশিয়ে দিন ফটকিরি বা লেবুর রস। কাঁচা হলুদ, পলাশ বা গাঁদাফুলকে জলে গুলে মিশিয়ে আগুনে ফোটালে পাওয়া যাবে হলুদ রং। কালো রঙের জন্য ব্যবহার করুন ভুসোকালি। আবির বানাতে ট্যালক, স্টার্চ বা অ্যারারুটের সঙ্গে রং মিশিয়ে নিন। প্রাকৃতিক সব সামগ্রী ব্যবহারের ফলে সমস্যা হবে না। বরং ফলের রসে, ফুলের নির্যাসে লাবণ্য বাড়বে। আনন্দের অনুভূতিতে মন ভরে যাবে। দোলের দিনে এই ভালো লাগার বোধটাই সবথেকে দামি!
করোনা নিয়ে সাবধান—করোনা সংক্রমণ ফের বাড়ছে। তাই ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা রং খেলতে যাবেন না। সুগার, প্রেশার এবং অন্যান্য কোমর্বিডিটি থাকলে রং খেলতে যাওয়া সম্পূর্ণ অনুচিত হবে। সম্ভব হলে পরিবারের মধ্যেই এই বছর রং খেলা, রং মাখানো সীমাবদ্ধ রাখুন। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।