রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হার্ট অ্যাটাকের জন্য এখন প্রায় সকলেই জেনে গিয়েছেন যে আমাদের হৃৎপিণ্ডের রক্ত চলাচল করে প্রধানত তিনটি ধমনী দিয়ে। ওই তিনটি ধমনী হল—
১. এলএডি (লেফ্ট অ্যান্টেরিওর ডিসেন্ডিং)— এই ধমনী হৃৎপিণ্ডের সামনের দিকের হৃদপেশিকে রক্ত পৌঁছে দেয়। এটি হার্টের প্রায় ৭০ শতাংশ মাংসপেশিতেও রক্ত সরবরাহ করে। ফলে এই ধমনীটিই হল হৃৎপিণ্ডের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ করোনারি ধমনী।
২. এলসিএক্স (লেফ্ট সারকামফ্লেক্স আর্টারি)—
এই ধমনীটি হার্টের পেছনের দিকের মাংসপেশির রক্ত সরবরাহ করে।
৩. আরসিএ (রাইট করোনারি আর্টারি)—
এই করোনারি ধমনীটি হৃৎপিণ্ডের ডানদিকের ও নীচের দিকের মাংসপেশিতে রক্ত সরবরাহ করে।
হার্ট অ্যাটাক:
এই ধমনীগুলি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেলে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিতে অক্সিজেন ও রক্তের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার ক্ষমতা কমে যায়। এমনকী কিছুকিছু ক্ষেত্রে মাংসপেশি ক্ষমতা শূন্য হয়ে পড়ে।
ধমনীগুলি এই হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হল ধূমপান, গুটকা, খইনি খাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন। এছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং বংশে হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস থাকলে হঠাৎ করোনারি ধমনী বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে আজকাল রিফাইনড সুগার বা মিষ্টি জাতীয় খাবারের যোগসূত্র বেড়েছে।
(পরিস্থিতি ১) হার্ট অ্যাটাক:
সুরাহা: প্রাইমারি অ্যঞ্জিওপ্ল্যাস্টি। ২ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে পৌছাতে হবে। ৪টি ট্যাবলেট ক্লোপিড্রোজেল (৭৫ মিলিগ্রাম) এবং ২টি ট্যাবলেট অ্যাসপিরিন তখনই খেয়ে নিলে প্রাণহানীর আশঙ্কা ৪০ শতাংশ কমে যায়।
সোজা সাপটাভাবে দেখতে গেলে, যদি হার্ট অ্যাটাক কারও হয়ে থাকে এবং অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে দেখা যায় যে একটি মূল ধমনী ব্লক হয়ে রয়েছে তাহলে প্রাইমারি অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি করে এবং স্টেন্ট বসিয়ে রক্ত সঞ্চালন প্রতিস্থাপন করাই হচ্ছে চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য।
হার্ট অ্যাটাক পরিস্থিতিতে যদি অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে দেখা যায় যে দু’টি বা তিনটি ধমনী বন্ধ হয়ে রয়েছে এবং হার্টের মাংসপেশির পাম্প করার ক্ষমতা কমে গিয়েছে তাহলে শুধু ওই ধমনীতেই অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি করা উচিত যেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। এবং রোগীকে সুস্থ করে বাড়ি ছেড়ে দেওয়া উচিত। পরবর্তী সময়ে বাকি একটি বা দু’টি ধমনীর ‘এফএফআর’ পরীক্ষা করে বোঝা উচিত যে ওই ধরনের ব্লকেজ ক্রিটিক্যাল কি না এবং ‘কার্ডিয়াক এমআরআই’ করে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশির অবস্থান বুঝে নেওয়া উচিত। পাশাপাশি দেখতে হবে, অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি করে কোনও লাভ হবে কি না।
অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে যদি দেখা যায়, লেফ্ট মেইন ধমনী এবং তিনটি ধমনী বন্ধ আছে অথবা তিনটি ধমনী ৮০ শতাংশর বেশি ব্লক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পেশেন্টের ব্লাডপ্রেশার এবং পালস ভালো রয়েছে তাহলে ওই ধরনের রোগীর দুই-তিনদিন পরিস্থিতি সামলে তারপর করোনারি বাইপাস সার্জারি করা উচিত।
যদি হার্ট অ্যাটাক পরিস্থিতিতে দেখা যায় যে রোগীর হার্টের মাংসপেশির ক্ষমতা এতটাই কমে গিয়েছে যে পেশেন্টের হার্ট ফেলিওর হচ্ছে সেক্ষেত্রে, আইএবিপি-এর সাহায্য নিয়ে যে করোনারি ধমনীটি ব্লকেজ হওয়ার জন্য সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, শুধুমাত্র সেই ধমনীটি খুলে দেওয়া উচিত। তবে সেটি হার্ট অ্যাটাকের দু’ঘণ্টার মধ্যে (গোল্ডেন আওয়ার) করা উচিত।
ডানদিকের করোনারি ধমনী যদি খুব বড় থাকে, সেটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, রোগীর কমপ্লিট হার্ট ব্লক হয়ে যায়, হৃৎপিণ্ডের ডানদিকের মাংসপেশির পাম্প করার ক্ষমতা একেবারে কমে যায়— এমন অবস্থায় গোল্ডেন আওয়ারের মধ্যে টেম্পোরারি পেসমেকার বসিয়ে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি করে দেওয়া যেতে পারে। এই গোল্ডেন আওয়ার এর মধ্যে যদি প্রাইমারি অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি না করা হয় তাহলে ওই মাংসপেশির পাম্প করার ক্ষমতা চিরদিনের জন্য কমে যায়।
(পরিস্থিতি ২) ক্রনিক স্টেবল অ্যাঞ্জাইনা বা আনস্টেবল অ্যাঞ্জাইনা:
করোনারি ধমনীতে যদি ধীরে ধীরে চর্বির প্রলেপ পড়ে তাহলেও বুকে ব্যথা হতে পারে। যত ব্লকের পরিমাণ বাড়ে ততই কষ্ট বাড়তে থাকে (ক্রনিক স্টেবল অ্যাঞ্জাইনা)। যদি ব্লক খুব বেশি বেড়ে যায় তাহলে অল্প পরিশ্রমেই বুকে ব্যথা শুরু হয়ে যায় (আনস্টেবল অ্যাঞ্জাইনা)। এক্ষেত্রে যদি হার্টের মাসেলের পাম্প করার ক্ষমতা ঠিক থাকে তাহলে ওষুধের দ্বারা দীর্ঘদিন চিকিৎসা করা যায়। ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা করে যদি বুকে ব্যথার উপশম না হয়, সেক্ষেত্রে টিএমটি টেস্ট করা যেতে পারে। টিএমটি পজিটিভ থাকলে অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে দেখে নেওয়া যেতে পারে যে কোন ধমনী বন্ধ আছে।
এক নজরে
১. যদি দু’টি ধমনী বন্ধ থাকে এবং তাদের মধ্যে একটি হল এলএডি, সেক্ষেত্রে বাইপাস সার্জারি করা উচিত।
২. যদি শুধু এলসিএক্স এবং আরসিএ বন্ধ থাকে, তাহলে ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা অথবা পিটিসিএ করাউচিত।
৩. যদি টিএমটি পজিটিভ হয় এবং ইকোকার্ডিওগ্রাফিতে হার্টের পাম্পিং কমে গিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে বিলম্ব না করে অ্যাঞ্জিওগ্রাম করা উচিত। এক্ষেত্রে তিনটি ব্লক থাকলে অবিলম্বে বাইপাস সার্জারি করা উচিত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ক্রনিক স্টেবল আঞ্জাইনা, আনস্টেবল অ্যাঞ্জাইনা, হার্ট অ্যাটাক সহ যে কোনও পরিস্থিতিতে লেফ্ট মেন করোনারি ধমনীতে ৫০ শতাংশের বেশি ব্লক থাকলে চোখ বুজে বাইপাস সার্জারি করে নেওয়া উচিত।