বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
দাঁত থাকতে আজকাল দাঁতের মর্যাদা বোঝেন অনেকেই। তাই দাঁত নিয়ে ভাবনাচিন্তাও অনেক বেশি। তবে ভাবনাচিন্তা থাকলেও যত্নের কিছু ঘাটতি এখনও আছে বলেই মত দন্তবিশেষজ্ঞদের। বাড়ির খুদে সদস্যটিকে নাহয় ‘চকোলেট খেও না, দাঁত নষ্ট হবে’, বলে ভয় দেখাতে পারেন। তাতে তার চকোলেটের বায়না না কমলেও দাঁত খারাপের ভয় গুঁড়ি মেরে ঢুকে পড়ে মনে। কিন্তু নিজের জন্য এই সতর্কতা কতটা মানেন? প্রতি বার ডেজার্ট খাওয়ার পর কি দাঁতের উপযুক্ত যত্ন নিয়ে থাকেন? খুদের পাতে কি সেই সব খাবার রাখেন যা তার দাঁতকে সুস্থসবল করে তুলবে?
আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের অধ্যাপক-চিকিৎসক হরিদাস অধিকারী জানালেন তেমন কিছু খাবারের কথা, যা প্রতিদিনের রুটিনে রাখলে দাঁতের পক্ষে তা ভালো। হরিদাসবাবুর মতে, হাড়ের মতোই দাঁতের গঠন। দু’টিই ক্যালসিফায়েড স্ট্রাকচার। হাড়ের চেয়ে দাঁতের গঠন আর একটু উন্নত। কালসিয়াম সল্ট আর প্রোটিন কোলাজেন নিয়ে তৈরি আমাদের দাঁত। এলামেলের মধ্যে থাকে এলামেলিন নামের একটি অপ্রচলিত প্রোটিন এবং ডেন্টিনের মধ্যে থাকে কোলাজেন ও ক্যালসিয়াম সল্ট। হাড়েও এই লবণ আছে, কিন্তু দাঁতের ক্যালসিয়াম সল্ট একেবারে অন্যভাবে অ্যাপাটাইট ক্রিস্টাল আকারে গঠিত। এই গঠনগত কারণেই দাঁতের ডেন্টিন এত মজবুত হয়। তাই হাড় চট করে ভেঙে গেলেও দাঁত সহজে ভাঙে না। এনামেল যেমন একবার তৈরি হয়ে গেলে আর নতুন করে বাড়ে-কমে না, যেন্টিন কিন্তু তেমন নয়। সে নিজেকে ভাঙে-গড়ে। দাঁতের ক্ষতি হলে মজবুত করতে থাকে। তাই এই ডেন্টিনের পুষ্টির জন্য আমাদের পাতে কিছু প্রয়োজনীয় খাবার থাকা প্রয়োজন। দরকার খাবারের সময় নিয়েও সচেতন থাকা।
চিকিৎসক হরিদাস অধিকারীর কথায়, ‘সাধারণত তিন বছর বয়সেই সব দুধের দাঁত গজিয়ে যায়। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত দুধের দাঁত ও স্থায়ী দাঁত দু’রকমই থাকে। তাই ছোটবেলা থেকেই এমন কিছু খাবার খান, যাতে ক্যালসিয়ামের ভাগ বেশি। প্রোটিনের ভাগ বেশি। শুধু তাই নয়, খেয়াল রাখতে হবে বিশেষ কিছু দিকেও।’
কেমন সেসব?
খাবার বাছাই: দাঁতের পুষ্টির জন্য ছোটবেলা থেকেই পাতে থাকুক দুধ, ডিমের মতো সুষম আহার। যাঁদের দুধ সহ্য হয় না, বা যাঁরা নিরামিষাশী, তাঁরা খাবার পাতে রাখবেন নানা শাক, বিশেষ করে পালং শাক, সয়াবিন, পনির ইত্যাদি। খাবারের বাছাই পর্বেই তাই খেয়াল রাখুন এদের দিকে।
শুধু খাবার খেলেই হবে না, তা যেন শরীরে থেকে তার জন্য বরাদ্দ কার্যটি করতে পারে, সেজন্য খেয়াল রাখতে হবে আর একটি বিষয়েও।
খাবার সময়: শুনতে অবাক লাগলেও দাঁতরে যত্নে এই ‘টাইম ফ্যাক্টর’-টি মারাত্মক। দিনে চার বার খেলেও তা সময়মতো খাওয়া খুব জরুরি। শরীরের একটি নির্দিষ্ট ‘বায়োলজিক্যাল টাইম’ থাকে। সেই সময়মতো শরীরের নানা অঙ্গ-প্রতঙ্গ খাবার হজমে ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। কেউ যদি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় বুঝে না খান, তাহলে শরীরও জানবে না কখন তাকে প্রয়োজনীয় উৎসেচক ক্ষরণ করতে হবে। তাই সময় মতো না খেলে খাবার হজমে বাধা আসবে ও প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ পাবেন না। এ তো গেল এক দিক। অপর দিকে, সময় ধরে না খেলে মুখের লালার মধ্যে অম্লত্বের ভাগ বেড়ে যায়। এতে সে অ্যাসিড দিয়ে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা পচনশীল খাবারকে টেনে নেবে। ফলে দাঁতের ক্ষয় কিন্তু অবশ্যম্ভাবী। ফলে খাওয়ার সময় ঠিক রাখা খুব জরুরি।
একসঙ্গে অনেকটা খাবার নয়: দাঁতে গঠনগত ভাবে কিছু ‘রাফ সারফেস’ থাকে। ফলে যাই খাই, তার রস সেই সব খাঁজে আটকে যায়। তখন ওই স্থানীয় জায়গায় লালা আম্লিক হবে ও দাঁতের ক্ষয় করবেই। তাই অল্প অল্প করে বারে বারে খাবার খান, যাতে অনেকটা খাবার একসঙ্গে না যায়। তাতে খাবার জমার পরিমাণ কম হয়।
ডেজার্ট খাবার পরের যত্ন: মিষ্টি জাতীয় খাবারে থাকা আঠালো কার্বোহাইড্রেট ভেঙে গিয়ে তা দাঁতের ফাঁকে আটকে দাঁতের ক্ষয়কে ডেকে আনে। সবসময় ব্রাশ করেও অত সূক্ষ্ম জায়গা থেকে খাবারের কণা বের করা যায় না। তাই মিষ্টি বা ডেজার্ট খাবার পর কয়েক কুচি শসা, নাসপাতি বা গাজর খেয়ে নিন। এতে চিবিয়ে খাবার যে প্রয়োজনীয়তা পড়বে, তাতে দাঁতের কোণে জমে যাওয়া খাবারগুলো বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবে। তাছাড়া এই ফলের কুচি দাঁতে আটকে থাকলেও তা থেকে ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু যখনই মিষ্টি খাওয়া হবে, তার পরেই হাতের কাছে শসা, নাসপাতি বা গাজর তো নাও পেতে. পারেন! চিকিৎসকদের মতে, তা না থাকলেও ক্ষতি নেই। ডেজার্ট খাবার সাত-আট ঘণ্টার মধ্যেই তা খেয়ে নিতে পারলে ভালো। তাই হরিদাসবাবুর পরামর্শ, প্রতিদিন প্রাতঃরাশ ও মধ্যাহ্নভোজের পর অন্তত কয়েক কুচি শসা, গাজর বা নাসপাতি রাখুন পাতে।
লিখেছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়