অতি সত্যকথনের জন্য শত্রু বৃদ্ধি। বিদেশে গবেষণা বা কাজকর্মের সুযোগ হতে পারে। সপরিবারে দূরভ্রমণের যোগ। ... বিশদ
বুঝলাম ব্রেন ডেথ হওয়া সময়ের অপেক্ষা। প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারব না আমরা। রবিবার সকালে হার্টও বন্ধ হয়ে গেল। ইতি পড়ল ৪০ দিনের যুদ্ধের। ইতি পড়ল এক অধ্যায়ের।
সত্যি কথা বলতে এই গোটা পর্বে অভিনেতা সৌমিত্রকে কত কিছু জিজ্ঞাসা করার ইচ্ছা ছিল। কখন করব? করোনা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। যখনই যেতাম, পিপিই পরে যেতাম। সারা শরীর ঢাকা, ঘাম ও অস্বস্তি হচ্ছে।
শরীর-স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া আর কিছু বলতে পারিনি। কিন্তু যেটুকু কথা হয়েছে, একটিবারের জন্যও ঔদ্ধত্য, অহংবোধ দেখিনি । নিজের যতই কষ্ট হোক, হেসে উত্তর দিতেন। তারপর তো আর ওয়ার্ডেই থাকলেন না।
খারাপ শরীরের জন্য পাঠানো হল আইটিইউতে। জানতাম ওঁকে
সেখান থেকে বের করে আনা প্রায় দুঃসাধ্য।
৮৫ বছর বয়স। প্রেশার, শ্বাসের সমস্যা সহ প্রায় ছ’ধরনের কো-মরবিডিটি। পরিস্থিতি আরও কঠিন করে দিল করোনা।
হাসপাতালে ভর্তির ক’দিনের মধ্যে রিপোর্ট নেগেটিভ এল ঠিকই, কিন্তু ততদিনে কোভিড ওঁর মস্তিষ্কে প্রবেশ করে এনকেফেলোপ্যাথি করতে শুরু করে দিয়েছে।
কম মানুষেরই কোভিড এনকেফেলোপ্যাথি হয়। কিন্তু এর চেয়ে মারাত্মক ধরনের করোনা কমই আছে। উনি আচ্ছন্ন হয়ে পড়তে লাগলেন। জ্ঞান কমে যেতে শুরু করল। হাত-পায়ের নড়াচড়া কমে গেল।
ধীরে ধীরে আমরা হারাতে শুরু করলাম ওঁকে। যে লড়াই জেতা প্রায় অসম্ভব, তার জন্য শেষ দিন পর্যন্ত স্নায়ু শক্ত রেখে লড়ে যাওয়া আরও কঠিন। তাও চেষ্টার কসুর করিনি। রেমডিসিভির, প্লাজমা থেরাপি, স্টেরয়েড, সর্বোচ্চ পর্যায়ের অ্যান্টিবায়োটিক— সাধ্যের ১০০ শতাংশ দিয়ে ওঁকে করোনা ও পরবর্তী বিপদ থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেছি। এক-দু’জন নয়, গোটা টিম করেছে। তবে জানবেন করোনার জন্য শুধু ওঁর মস্তিষ্কে এনকেফেলোপ্যাথিই হয়নি, ওঁর ডায়ালিসিসের কারণও ছিল করোনা। ভর্তির সময় কিডনির সামান্য সমস্যাকে কোভিড মারাত্মক জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল। শেষে অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি হয়ে যায়।
এত বড় একজন প্রতিভা চলে গেলেন। চেষ্টা করলাম ঠিকই, কিন্তু পারলাম না। বহু বছর ধরে ডাক্তারি করার পরও বলছি, বহু বিখ্যাত মানুষের মেডিক্যাল বোর্ডে থাকার পরও বলছি, এই ক্লান্তি চিকিৎসককে গ্রাস করে। পরবর্তী রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা করার সময় নিজেকে নতুন করে উজ্জীবিত করবার দরকার পড়ে।
ওঁর সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলার সুযোগ পেলাম না, প্রিয় মানুষদের সেই সুযোগ করে দিতে পারলাম না, অনুগ্রাহীদের চোখের জল মুছতে পারলাম না— এই আফসোস, এই যন্ত্রণা জীবনভর থাকবে।