গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
জাঁকিয়ে শীত পড়ার আগের এই দিনগুলিকে এক অর্থে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াঘটিত অসুখবিসুখের দাপাদাপির দিন বললেও অত্যুক্তি হবে না। করোনার উৎপাতের মধ্যে অন্যান্য নানা জ্বরজারির দাপট কিন্তু মোটেই কমেনি। রোগবিশেষে বেশ কয়েকটি হোমিওপ্যাথিক ওষুধ এখন ভালো কাজ দিতে পারে।
১. অ্যাকোনাইট: শুকনো ঠান্ডা হাওয়া লেগে হঠাৎ প্রচণ্ড কাশির শুরু। সঙ্গে হাঁচি, সর্দি ও জ্বর বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কাশি বা জ্বরের জন্য শারীরিক ও মানসিক অস্থিরতা ও ঘনঘন জল পিপাসায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
২. জেলসিমিয়াম: আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় ঠান্ডা লেগে কাশি। সঙ্গে হাঁচি, সর্দি, মাথা ব্যথা, গা ব্যথা, জ্বর। সবসময় শুয়ে থাকতে ইচ্ছা, হাঁটাচলায় কষ্ট বাড়ে, সঙ্গে ঘুম ঘুম ভাব, জল পিপাসা কম ও শীতভাব থাকলে এই ওষুধ প্রযোজ্য।
৩. ডালকামারা: সাধারণত শরৎকালে বা গরম থেকে ঠান্ডা পড়লে বা দিনের বেলা খুব গরম ও রাতে বেশ ঠান্ডা লাগলে, ভেজা স্যাঁতসেঁতে হাওয়ায় ঠান্ডা লাগলে এই ওষুধ দেওয়া হয়। উপসর্গ কাশি, হাঁচি, সর্দি, চোখ দিয়ে জল পড়া, গলা ব্যথা এবং জ্বর। ঠান্ডা হাওয়ায় ও রাতে অস্বস্তি বাড়লে ও গরম হাওয়ায় ও গরম ঘরে কষ্ট কম হলে ওষুধটি উপযুক্ত।
৪. ব্রায়োনিয়া: গরমে ঠান্ডা জল বা আইসক্রিম খেয়ে, ঠান্ডা জলে স্নান করে, এসি ঘর থেকে বেরনোর পর ঠান্ডা লেগে কাশি, হাঁচি, সর্দি, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা ও জ্বর হলে প্রযোজ্য। কাশি সাধারণত শুকনো হয়। কফ খুব কম ওঠে বা ওঠে না। গলা খুসখুস করে। কাশি হয়। জ্বর বা শারীরিক অস্বস্তির জন্য চুপচাপ শুয়ে থাকতে ভালো লাগে। প্রচণ্ড জলপিপাসা, ঠোঁট, জিভ ও গলা শুকিয়ে আসে।
৫. রাসটক্স: জ্বর, সর্দি-কাশির সঙ্গে হাঁচি, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা হয়। ঠান্ডা হাওয়ায় কাশি বাড়ে। গা-হাত পায়ে ব্যথা ও অস্বস্তির জন্য শারীরিক অস্থিরতা হয়। শুয়ে থাকলে কষ্ট বাড়ে। ঘোরাফেরা, নড়াচড়ায়, গরম হাওয়ায় ও ঘরে ভালো লাগে। কাশি কম হয়। এমন লক্ষণে ওষুধটি দেওয়া যায়।
৬. হিপার সালফ: হঠাৎ ঠান্ডা ও শুকনো হাওয়া লেগে খুব কাশি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হলে, বুকে কফ বসে রাতের দিকে অল্প অল্প জ্বর এলে এবং ঠান্ডা বাতাসে কাশি বাড়লে, গরমে আরাম বোধ হলে এবং বুকে কফ জমে অল্প জ্বর ও শ্বাসকষ্ট থাকলে এই ওষুধ দেওয়া যায়।
৭. ইপিকাক: শুকনো ঠান্ডা হাওয়া লেগে প্রচণ্ড শুকনো কাশি হয়। কাশতে কাশতে বমি পায় বা বমি হয়ে যায়। বুকে কফ জমে ঘড়ঘড় করে। শ্বাসকষ্ট হয়। জিভ পরিষ্কার ও জলপিপাসা না থাকলে এই ওষুধে উপকার হয়।
৮. অ্যানটিম টার্ট: ঠান্ডা লেগে কাশি হয়। বুকে খুব কফ জমে। কাশির সময় কফের জন্য বুকে ঘড়ঘড় করে আওয়াজ হলে ওষুধটি দিতে হয়।
৯. হায়োসায়ামসে ও রিউমেক্স: প্রচণ্ড শুকনো কাশি শুরু হয় শোওয়ার পরই। উঠে বসলে কাশি বন্ধ হলে হায়োসায়ামাস দেওয়া যায়। তবে শ্বাসনালী খুসখুস করার জন্য কাশি পেলে, শোওয়ার কিছুক্ষণ পরে কাশি হলে তখন রিউমেক্স দেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া হায়োসায়ামাস খাওয়ার পরেও কাশি পুরো না গেলে তখনও রিউমেক্স দিতে হয়।
১০. ক্যালি বাইক্রমিকাম: কাশি ও শ্বাসকষ্টের সঙ্গে সাদা ঘন আঠার মতো কফ, সহজে উঠতে চায় না বা সুতোর মতো হয়ে কফ বেরলে তখন এই ওষুধ দিতে হয়।
১১. আর্সেনিক অ্যালবাম ও অ্যানটিম আর্স: কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট সাধারণত মাঝরাতে হয় ও বৃদ্ধি পায়। শ্বাসকষ্টের জন্য শুয়ে থাকতে পারেন না রোগী। উঠে সামনের দিকে ঝুঁকে বসে থাকলে ভালো লাগে। প্রচণ্ড দুর্বলতা ও শারীরিক অস্থিরতা দেখা যায়। খুব জল পিপাসা থাকে ও ঘনঘন একটু একটু করে জল খেতে ইচ্ছা করলে এই ওষুধ কার্যকর। শ্বাসকষ্টের সঙ্গে বুকে কফ জমে ঘড়ঘড় আওয়াজ, সঙ্গে কাশি ও শ্বাসকষ্টের জন্য অস্বস্তিতে শোওয়া না গেলে অ্যানটিম আর্স ভালো কাজ করে।
আবার কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্টের জন্য স্পঞ্জিয়া, ব্যাসিলিনাম, টিউবারক্যুলিনাম, সোরাইনাম, ব্লাটা অরিয়েন্টালিস, অ্যাসপিডোস্পারমা, ন্যাট্রম সালফ, পালসেটিলা, মার্কসল ইত্যাদি লক্ষণ অনুযায়ী দেওয়া হয়ে থাকে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা মানে সদৃশ রোগ-লক্ষণের চিকিৎসা। শুধুমাত্র রোগের নাম বা কারণ ও সাধারণ লক্ষণ ধরে এই চিকিৎসা করা যায় না বা হয় না। রোগের কারণ ও সাধারণ লক্ষণের সঙ্গে বিশেষ বিশেষ লক্ষণ অনুযায়ী আসল ওষুধটিকে বেছে নিতে হয়। এছাড়াও ওষুধের পরিমাণ, শক্তি ও মাত্রা অর্থাৎ কতক্ষণ পরপর ও কতবার খাওয়াতে হবে, সেই ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া চলা উচিত নয়।
তবে ছোট ও বড় সবার ক্ষেত্রেই প্রথমে ওষুধের ৩০ শক্তি দিয়ে শুরু করা ভালো এবং প্রয়োজনে ক্রমশ বেশি শক্তি ব্যবহার করা উচিত।
ঋতু পরিবর্তনের অসুখ এড়াতে
১. হঠাৎ করে শীতের প্রকোপ এড়িয়ে চলুন। গরম ঘর থেকে বাইরের ঠান্ডায় যাওয়া এড়ানো উচিত। বিশেষত সকাল ও সন্ধ্যায়। যাঁরা মর্নিং ও ইভিনিং ওয়াক-এ অভ্যস্ত, তাঁদের রুটিন পরিবর্তন করতে হতে পারে।
২. ঠান্ডা খাবার জিনিস যেমন কোল্ড ড্রিংকস, আইসক্রিম প্রভৃতি এড়িয়ে চলুন।
৩. উষ্ণ জলে স্নান করা দরকার।
৪. তাজা, পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবারগুলি খাওয়া উচিত। জাঙ্ক ফুড, ভাজা বা তৈলাক্ত খাবার বর্জন করবেন।
৫. পরিমাণ মতো জল খাওয়া উচিত, যাতে শরীর হাইড্রেটেড থাকে।
৬. আশপাশে সংক্রামিত লোকজন থাকলে, তাঁদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলুন। নচেৎ আপনি সংক্রামিত হতে পারেন।
৭. হাত জীবাণুমুক্ত রাখতে বারবার সাবান ও জল দিয়ে হাত ধোওয়া প্রয়োজন।
৮. বাড়ির ভিতরে, বিশেষত রান্নাঘর ও বাথরুম পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখুন।
৯. ধুলোবালি, পরাগ, ধোঁয়ার সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। ঘরে যাতে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল করে, সেটা দেখা উচিত।
১০. ফ্লু’র বিরুদ্ধে সময়মতো টিকা প্রদান, বিশেষত ছোটদের ক্ষেত্রে একান্তই দরকার।