গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
আমার বাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তেঁতুলতলা এলাকায়। ৯ জুলাই প্রথম জ্বর আসে। তিনদিন প্যারাসিটামল ৬৫০ খেয়েছিলাম। তাতেও জ্বর না কমায়, ১৩ জুলাই এক ডাক্তারবাবুর কাছে যাই। উনি কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করতে বলেন। ওইদিন রাত ১২টা নাগাদ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বুকব্যথা করতে থাকে। স্ত্রী ও ছেলে জেলার সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকারই মেল ওয়ার্ডে রাতে ছিলাম। ১৪ জুলাই ট্রু-ন্যাট পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ আসে। ১৫ তারিখ হয় আরটিপিসিআর। সেখানেও একই রিপোর্ট।
স্ত্রী’কে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, নতুন করোনা হাসপাতাল চালু হচ্ছে। চাইলে এখানে ভর্তি করাতে পারেন। আবার বাইরেও নিয়ে যেতে পারেন। স্ত্রী জানিয়েছিলেন, নতুন করোনা হাসপাতালেই ভর্তি হোক। সেইমতো ওইদিন রাতে নতুন হাসপাতালটিতে ভর্তি হই।
আমিই ছিলাম প্রথম রোগী। রোজ একজন নার্স আসতেন। চিকিৎসকরা আসতেন দিনে দুই থেকে তিনবার। বিকেলে এক ডাক্তারবাবু এসে চপ, মুড়ি, ছানা পোড়া, কেক দিয়ে যেতেন। শারীরিক সমস্যা রয়েছে কি না, জেনে যেতেন। একা থাকতাম বলে একটু ভয় লাগত। রাতে ঘুম আসতে চাইত না। ভোরের দিকে ঘুমাতাম। জানালার দিকে তাকিয়ে গাছের পাখি দেখতাম, রাস্তায় লোকজন দেখতাম।
হাসপাতালে সঙ্গে মোবাইল ছিল না। বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতাম না। ছেলে চিকিৎসকদের সঙ্গে দিনে দু’বার কথা বলত। ডাক্তারবাবুদের ব্যবহার অসম্ভব ভালো ছিল। সুগারের জন্য সকালে রোজ ইনসুলিন দিতেন নার্স। বাড়ির মতো ভালো খাবার দিতেন।
স্ত্রী বারবার সাহস জুগিয়েছে। বলে গিয়েছে, ‘হার মানবে না কোনওমতেই। ভেঙে পড়বে না। শক্ত হবে। তোমায় করোনা জয় করতেই হবে’। আমার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কিছু ওষুধ দোকানের মালিকও সাহস জুগিয়েছেন। ২২ জুলাই হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়েছিল। পরিবারের লোকজন ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা নিতে এসেছিলেন। বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে ও বৃদ্ধ মায়ের রিপোর্ট নেগেটিভ ছিল।
বাড়ি ফেরার পর একা একটি রুমে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে ছিলাম। ২০ দিন পর হাঁটাচলা শুরু করলাম। লোকজন দেখলে এড়িয়ে যেত। দূরে সরে যেত। মনে খুব কষ্ট হতো। কারণ, করোনা কোনও মারাত্মক রোগই নয়। হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময় এলাকার কাউন্সিলার বাড়িতে এসে খাবার দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পাড়ার লোকজন পরিবারকে এড়িয়ে চলেছে। এই রোগ এমন রোগ, মনোবল শক্ত রাখলেই জয় করা যাবে। মানসিকভাবে প্রতিবেশীদের পাশে থাকা প্রয়োজন। বাড়ি ফেরার আনুমানিক দেড় মাস পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হল।