লকডাউনে কীভাবে বাড়িতে বসে দাঁতের যত্ন নেবেন জানালেন আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের প্রফেসর ডাঃ হরিদাস অধিকারী।

দুটো সমস্যার জন্য প্রধানত দাঁতে ব্যথা হয়— ১. মাড়ির সমস্যা। ২. ডেন্টাল ক্যারিজ বা প্রচলিত ভাষায় দাঁতে পোকার সমস্যা।
 মানুষের মুখগহ্বরে সবসময় লালা নিঃসৃত হয়। কারও লালা বা স্যালাইভার পিএইচ অম্লধর্মী, কারও ক্ষারীয়। পিএইচ অম্লধর্মী হলে দাঁতে পোকা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ক্ষারীয় হলে থাকে মাড়ির সমস্যার ভয়। লালাগ্রন্থির মধ্যে ক্যালশিয়াম লবণ থাকে। রাতে ঘুমানোর সময় ওই লবণগুলি দাঁত ও মাড়ির সূক্ষ্ম ফাঁকে জমে। ঠিকমতো ব্রাশ না করলে ক্যালশিয়াম দীর্ঘ দিন ধরে জমতে জমতে কঠিন পাথরের মতো হয়ে যায়। সেখান থেকেই হয় মাড়ির সমস্যা।
 ভালো করে চিবিয়ে খাওয়ার জন্য দাঁতের উপরিভাগের তলটি এবড়োখেবড়োভাবে তৈরি। ঠিকভাবে ব্রাশ না করলে ওই অংশে খাবারের কণা জমে ও তা পচে গিয়ে অ্যাসিড তৈরি হয়। ওই অ্যাসিড দাঁতের ক্যালশিয়াম লবণগুলোকে টেনে নেয়। লবণের নীচে থাকা প্রোটিন অংশটি উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। সেই প্রোটিন আবার মুখে থাকা ব্যাকটেরিয়ার উপাদেয় খাদ্য। ব্যস্‌, শুরু হয় ঩ডেন্টাল ক্যারিজ— দাঁতে পোকা।
বাড়িতে বসেই দাঁতের যত্ন
 সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে ঠিক ঘুমতে যাওয়ার আগে দু’বার ব্রাশ করুন। রাতে দীর্ঘ সময় যখন মানুষ ঘুমোয়, মুখগহ্বরে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণও বেড়ে যায়।
 ‘টুথ টু গাম অ্যান্ড গাম টু টুথ’। মাড়ি ও দাঁতের সূক্ষ্ম ফাঁকে আটকে থাকা খাবার বের করতে এইভাবে উপর-নীচ করে ব্রাশ করতে হবে।
 ব্রাশের পর আঙুল দিয়ে ধীরে ধীরে মাড়ি ম্যাসাজ করতে হবে। এর ফলে রক্তবাহী নালীগুলি ভালোভাবে কাজ করতে পারে। এতে মাড়িতে কেরাটিন সেল জমে, সংক্রমণের আশঙ্কা কমে।
 দাঁতের বহু জায়গায় ঠিকমতো ব্রাশও পৌঁছয় না। একটা টেকনিক্যাল পদ্ধতিতে ওই খাদ্যকণা বের করা সম্ভব। লাঞ্চ ও ডিনারের পর শসা বা আপেল বা গাজর অথবা ন্যাসপাতি জাতীয় ফল চিবিয়ে খাওয়া উচিত। বিশেষত শসা সস্তা ও সহজলভ্য। বাচ্চাদেরও এইভাবে শসা খাওয়ানো অভ্যেস করাতে পারেন। এর ফলে চকোলেট খাওয়ার কারণে দাঁত নষ্ট হওয়ার ভয় কমবে।  বাচ্চাদের দাঁতে পোকা হওয়ার আর একটি কারণ সময় না মেনে খাওয়ানো। দু’বার খাওয়ানোর মধ্যে যেন দু’ঘণ্টার বিরতি থাকে। আর সব মানুষেরই রোজ মোটামুটি একই সময় খাওয়া উচিত।  তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।  দাঁত শির শির করলে অ্যান্টিসেপ্টিক মাউথওয়াশ দিয়ে গরম জলে কুলকুচি করলে আরাম পাওয়া যায়।  ব্যথা হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যায়।  যে দাঁতে ব্যথা হচ্ছে বা শির শির করছে, সেই দাঁতে লবঙ্গ তেল দিলে উপকার পাওয়া যায়।
 সমস্যা বাড়লে টেলিমেডিসিনের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। তাতেও উপকার না হলে সরাসরি যান ডেন্টাল সার্জেনের কাছে।

লিখেছেন অয়নকুমার দত্ত