বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
ফ্যারিঞ্জাইটিস: গলার পিছনের দিকে ফ্যারিংস নামক অংশে ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ তৈরি হলে তাকে ফ্যারিঞ্জাইটিস বলে। ফ্যারিঞ্জাইটিসের সঙ্গে অনেক সময় টনসিলাইটিসও হতে পারে। সেক্ষেত্রে টনসিল বড় হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। রোগাক্রান্ত ব্যক্তির খাবার গিলতে এবং শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। ফ্যারিঞ্জাইটিসের সঙ্গে কাশি বা জ্বর হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। রোগটি হতে পারে ভাইরাস, ছত্রাক অথবা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে। তবে দূষণ সৃষ্টিকারী বস্তু এবং রাসায়নিক পদার্থের কারণেও এই অসুখ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
চিকিৎসা উপসর্গ নির্ভর। গলা ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে চিকিৎসকরা রোগীকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেন ও গার্গল করতে বলেন। ঈষদুষ্ণ জলে ক্লোরোহেক্সিডাইন জাতীয় মাউথওয়াশ মিশিয়ে গার্গল করতে বলা হয়। জটিল ধরনের টনসিলাইটিসে মাউথ ওয়াশের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়।
জিঞ্জিভাইটিস: মাড়িতে ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ হলে তাকে জিঞ্জিভাইটিস বলে। সাধারণত দাঁতে প্লাক জমে এই সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মাড়িতে ব্যথাও হয়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসক জল ছাড়াই অ্যানাস্থেটিক মাউথ রিনস দিয়ে গার্গল করার পরামর্শ দিতে পারেন। দাঁতে জীবাণু সংক্রমণ হলেও অ্যানাস্থেটিক মাউথ রিনস ব্যবহার করা যায়। এমনকী মুখ গহ্বরে অ্যাপথাস আলসার-এর মতো সমস্যা দেখা দিলেও চিকিৎসক অ্যানাস্থেটিক মাউথ রিনস ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন।
প্রশ্ন হল, অ্যাপথাস আলসার কী? নানা কারণে মুখের ভেতরে, গালে, জিভের পাশে একধরনের ঘা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রোগী খেয়াল করলে বুঝতে পারেন, মুখের অন্দরে ছোট্ট একটি গোলাকার সাদা আলসার থাকে যার চারপাশে লাল প্রদাহ দেখা যায়। এই সমস্যার নাম অ্যাপথাস আলসার। এই রোগে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। সঙ্গে খুব ব্যথা থাকে। রোগী কিছু খেতে পারেন না। এই সমস্ত ক্ষেত্রে অ্যানাস্থেটিক মাউথ রিনস উপকারে আসে। চিকিৎসক প্রয়োজন বুঝে কিছু জেল জাতীয় মলম মুখের ভিতরে লাগাতে দিতে পারেন।
গার্গল করার উপকরণ—
১) ক্লোরোহেক্সিডাইন মাউথওয়াশ: ক্লোরোহেক্সিডাইন জাতীয় মাউথওয়াশে থাকে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ভাইরাল উপাদান। ফলে জীবাণুর সঙ্গে লড়াই সহজ হয়। গলা ব্যথা, গলা ফুলে থাকার মতো উপসর্গ কমাতেও যথেষ্ট কাজে দেয় এই মাউথওয়াশ।
২) অ্যানাস্থেটিক মাউথ রিনস: মাউথ রিনস-এ অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপকরণ থাকে। এছাড়া অ্যানাস্থেটিক মাউথ রিনস-এ বেদনানাশক উপাদান থাকায় ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহ এবং ঘা সংক্রান্ত ব্যথাও কম হয়।
৩) নুন জল: হাতের কাছে ক্লোরোহেক্সিডাইন বা অ্যানাস্থেটিক মাউথ রিনস না থাকলে গার্গল করার জন্য নুন-জল ব্যবহার করতে পারেন। মুখ, গলা, মাড়ির কোষ ও দাঁতের ফাঁক থেকে জলীয় উপাদান বের করে নিয়ে আসতে পারে নুন। জলীয় উপাদানের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসও বেরিয়ে আসে। নুন জলে থাকা লবণ ওই জীবাণুকে পুনরায় কোষে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। গলা ব্যথার মতো উপসর্গ দূর করতে, প্রদাহ কমাতে, সর্দি এবং সাইনাসের সংক্রমণ সারিয়ে তুলতে নুন জলে গার্গল করা অত্যন্ত উপকারী। এতে মাড়ির রক্তক্ষরণ কমে, মুখগহ্বরে অম্ল- ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষিত হয়। মুখে ও গলায় ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত সংক্রমণের আশঙ্কা কমে।
কীভাবে, কতক্ষণ গার্গল?
ফ্যারিঞ্জাইটিসে
আধ গ্লাস ঈষদুষ্ণ জলে চার চা চামচ মাউথ ওয়াশ মেশাতে হবে। এরপর অল্প অল্প জল নিয়ে ৩০ সেকেন্ড ধরে গার্গল করা দরকার। এইভাবে বার সাতেক করুন। দিনে দু’বার করলেই যথেষ্ট।
জিঞ্জিভাইটিসে
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ একটি কাপে চার চামচ অ্যানাস্থেটিক মাউথ রিনস নিয়ে ১৫ সেকেন্ড ধরে গার্গল বা কুলি করতে পারেন। জল ব্যবহার করা চলবে না। ঘণ্টা দু’য়েক অন্তর এভাবে করুন। তারপর অন্তত ১৫ মিনিট মুখে জল দেবেন না।
নুন জলে গার্গল
আধ গ্লাস ঈষদুষ্ণ জলে অর্ধেক চা চামচ নুন মেশালেই চলবে। এরপর প্রতিবার অল্প অল্প নুন-জল দিয়ে ৩০ সেকেন্ড ধরে গার্গল করতে হবে। এভাবে পাঁচ থেকে সাতবার গার্গল করলেই উপকার মেলে। সকালে ব্রেকফাস্টের আগে বা ব্রেকফাস্টের পরে গার্গল করুন। এরপর গার্গল করুন ডিনারের পর।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও গার্গল
প্রথমত, এখনও পর্যন্ত এমন কোনও সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়নি যেখানে বলা হচ্ছে, রোজ দু’বেলা গার্গল করলে করোনা সংক্রমণ হবে না। ফলে এই মুহূর্তে গার্গল করলেই করোনা থেকে রক্ষা পাবেন, এমন কথাও বলা সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হয় প্রথমে নাকের পিছন এবং গলার উপরের দিকের ন্যাজোফ্যারিংস অংশে। এখানে ভাইরাস পৌঁছনোর পর বংশবৃদ্ধি করে ও নীচের দিকের ওরোফ্যারিংস বা গলার অংশে নেমে আসে। তখন সেই ভাইরাসের সংখ্যা এক বা দুটি নয়, লক্ষ লক্ষ। ফলে এক-দু’বার গার্গল করে করোনা ভাইরাস থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।
তৃতীয়ত, খুবই উচ্চ তাপমাত্রায় করোনা ভাইরাস মারা যায়। সেই তাপমাত্রা মানবদেহ সহ্য করতে পারে না। ফলে ওই উচ্চ তাপমাত্রায় জল ফুটিয়ে তা দিয়ে গার্গল করা কার্যত অসম্ভব। তাই করোনাকে দূরে থাকতে মাস্ক ব্যবহার, বারবার হাত ধুয়ে নেওয়া ও সামাজিক দূরত্ব পালনই সব থেকে সেরা পন্থা।