রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস) কী?
পিসিওএস এমন এক অবস্থা যা মেনস্ট্রুয়েশন, সন্তান ধারণের সক্ষমতা, শারীরিক গঠন এমনকী দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। ১৫-৪৫ বছর বয়সি মহিলাদের প্রায় ১০ থেকে ২৬ শতাংশ মহিলা পিসিওএস-এর সমস্যায় ভোগেন।
পলিসিস্টিক ওভারি কী?
পলি শব্দের অর্থ অনেকগুলি। সিস্ট শব্দের অর্থ তরল ভরাট স্থান। পলিসিস্টিক ওভারিগুলি সাধারণ ওভারির তুলনায় বড় হয় এবং অপরিণত পর্যায়ে স্বাভাবিক বৃদ্ধি আটকে থাকে ( চিকিৎসা পরিভাষায় এই অবস্থাকে বলে অ্যান্ট্রাল ফলিকলস)। আলট্রাসাউন্ডে ডিম্বাশয়গুলি মুক্তোর শিকল বা অনেকগুলি ছোট সিস্টের সংকলনের মতো দেখায়, তাই এই সমস্যাকে পলিসিস্টিক ওভারি বলা হয়।
পলিসিস্টিক ওভারিযুক্ত মহিলার কিন্তু সর্বদা পিসিওএস থাকে না। পিসিওএস-এর সমস্যায় পলিসিস্টিক ওভারি ছাড়াও মহিলাদের অন্যান্য কিছু উপসর্গ থাকে যেমন অনিয়মিত মেনস্ট্রুয়েশন, অবাঞ্ছিত স্থানে লোম এবং ব্রণর সমস্যা। পিসিওএস রোগীদের বেশিরভাগ স্থূলকায়, তবে পিসিওএসের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রোগী রোগা হয়ে থাকে।
পিসিওএসের কারণ কী?
সঠিক কারণ আজও অজানা। বংশগত কারণে হতে পারে। অসংযমী জীবনযাত্রা ছাড়াও পরিবেশগত কারণগুলিরও কিছু ভূমিকা থাকতে পারে। পিসিওডি রোগীর হর্মোন ভারসাম্যহীনতা থাকে। ৩ প্রধান হর্মোনজনিত সমস্যা হল—
১. সাধারণ ডিম্বাণু নিঃসরণের জন্য দায়ী পিট্যুইটারি হর্মোনের ভারসাম্য (এলএইচ/ এফএসএইচ অনুপাত) নষ্ট হয়ে যাওয়া।
২. ইনসুলিন হর্মোন রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী। পিসিওডিতে ইনসুলিনের প্রতি দেহের প্রতিক্রিয়া হ্রাস পায় এবং ইনসুলিনের মাত্রা বাড়তে থাকে।
৩. হাইপারেনড্রোজেনিজম- পুরুষ ধরনের হর্মোন বৃদ্ধি পায়।
পিসিওডি রোগীরা কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হন?
১. অনিয়মিত মেনস্ট্রুয়েশন: সাধারণত মহিলাদের মধ্যে প্রতি মাসে একটি ডিম পরিপক্ব হয় এবং ডিম্বাণু নিঃসরণ হয়। ডিম্বস্ফোটনের প্রায় ১৪ থেকে ১৬ দিন পরে মাসিক হয়। পিসিওডি রোগীর মধ্যে হর্মোন ভারসাম্যহীনতার কারণে এই পরিপক্বতা এবং ডিম্বস্ফোটন প্রতিমাসে ঘটে না এবং এইভাবে তাদের মেনস্ট্রুয়েশনগুলি বিলম্বিত হয়।
২. গর্ভধারণের অক্ষমতা: প্রাকৃতিকভাবে গর্ভধারণের জন্য একটি পরিপক্ব ওভাম প্রয়োজন যা পিসিওডি রোগীর মধ্যে তৈরি হয় না।
৩. অতিরিক্ত মুখের লোম এবং ব্রণ: পুরুষ ধরনের হর্মোন বৃদ্ধির কারণে এমন হয়। এছাড়া, পিসিওডি রোগীর কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হতাশা এবং পরবর্তী জীবনে জরায়ু ক্যান্সার।
রোগীর কী করা উচিত?
পিসিওএস-এর কারণে শরীরে যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে তার চিকিৎসা করা হয়। সমগ্র চিকিৎসা রোগীর সমস্যার কমানোর দিকে এবং পিসিওএসের সঙ্গে সম্পর্কিত দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ঝুঁকি হ্রাস করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়।
মনে রাখবেন—
জীবনযাত্রা পরিবর্তন করুন। ডায়েটে তাজা ফলমূল এবং শাকসব্জি অন্তর্ভুক্ত করুন। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যাফিন খাওয়া উচিত নয়।
নিয়মিত ৩০ মিনিট এক্সারসাইজ করা উচিত।
পিসিওএস রোগী যদি স্থূল হয় তবে ওজন কমাতে হবে। এমনকী ১০ শতাংশ ওজন হ্রাস হর্মোন ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং স্বাভাবিক ডিম্বাণু নিঃসরণ এবং মেনস্ট্রুয়েশনগুলি স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে। এছাড়াও ওজন কমালে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে।
অনিয়মিত মেনস্ট্রুয়েশনের জন্য মেয়েদের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত।
সন্তানধারণ করতে চান এমন পিসিওএস রোগীর উচিত বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা। এই রোগীদের ৮৫-৯০ শতাংশ মুখে খাওয়ার ওষুধ, ইনজেকশন বা ল্যাপারোস্কোপির মতো চিকিৎসা করিয়ে সন্তানধারণে সক্ষম হন। কেবলমাত্র ১০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে যারা গর্ভবতী হতে ব্যর্থ হন, তাদের আইভিএফ-এর মতো উন্নত পদ্ধতিগুলির প্রয়োজন হয়ে থাকে।
ছবি : অমিত দাস