কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
যক্ষ্মাকে রাজরোগ বলা হতো সম্ভবত রাজার রোগ বলে নয়, রোগের রাজা বলে এবং চিকিৎসার ব্যয় রাজোচিত হয়ে যেত বলে। আগে চিকিৎসা বলতে ছিল শুধু পুষ্টিকর খাদ্য, নির্মল বাতাস ও পর্যাপ্ত সূর্যালোক।
টিউবারক্যুলোসিস নামটি বিজ্ঞানের দেওয়া। শরীরে অসংখ্য যে ক্ষত তৈরি হয়, তাদের আকার থেকে। সভ্যতার প্রাচীন লগ্ন থেকে এই রোগ মানুষের শত্রু— রামায়ণের কুব্জা থেকে মিশরের মমিতে তার চিহ্ন রেখে গেছে। সঠিক অর্থে ওষুধ আবিষ্কার হল ১৯৪৪ সাল থেকে। পরে আরও শক্তিশালী ওষুধ এল। কিন্তু অসাধারণ বুদ্ধিমান এই জীবাণু। মানুষের বোকামির সুযোগে ওষুধের বিরুদ্ধেই গড়ে তুলল প্রতিরোধ। এই ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি ক্যান্সারের থেকেও মারাত্মক।
জীবাণুটির গায়ে একটা বর্ম আছে। সেটি ভেদ করে ওষুধ সহজে ভেতরে ঢুকতে পারে না। ভোল বদলানোর খেলাতেও এই জীবাণু ওস্তাদ। শরীরে যখন আক্রমণ শানায় তখন পরিস্থিতি বুঝে গহিন অন্দরে লুকিয়ে পড়ে বা মৃতের ভান করে পড়ে থাকে বছরের পর বছর। শরীর রাশ হালকা দিলেই আবার স্বমূর্তি ধারণ করে।
বিজ্ঞানীরা উপায় বার করলেন— অনেকগুলো ওষুধ একসঙ্গে অনেকদিন ধরে খেলে সব জীবাণুকে মারা সম্ভব। কিন্তু নিয়ম মেনে অনেকদিন ওষুধ খাওয়া মানুষের ধাতে নেই। সেই অনিয়মের ফাঁকেই তৈরি হয় প্রতিরোধী যক্ষ্মা।
রোগটি ছড়ায় মূলত কাশি-হাঁচি থেকে। তাই ফুসফুসের যক্ষ্মাই সমাজের পক্ষে সবচেয়ে বিপজ্জনক। ফুসফুসই এই জীবাণুর সবচেয়ে প্রিয় মৃগয়া-ক্ষেত্র। যক্ষ্মা হয় না শরীরের এমন অঙ্গ নেই। কিন্তু কিডনির বা ব্রেনের অসুখ শুধু এই রোগীর পক্ষে ক্ষতিকর। ফুসফুসের অসুখের একজন রোগী বছরে দশ থেকে পনেরোজন সুস্থ মানুষের শ্বাসনালীতে হাওয়ায় ভাসমান কণার মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
বোঝা গেল সকলের মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই জীবাণুকে পর্যুদস্ত করা যাবে না। সরকারি ও বেসরকারি যুগ্ম উদ্যোগ চাই। পৃথিবী এখন একটি বড় যৌথ পরিবার। এই জীবাণু দেশের সীমানা মানে না, ধনী-দরিদ্রে প্রভেদ করে না। এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাই সকলকেই অংশীদার হতে হবে। একে বলা হয় পাবলিক প্রাইভেট মিক্স।
আপনি আচরি ধর্ম। হাঁচি-কাশির সময় রুমালে মুখ চাপা দিলে সংক্রমণ অনেক আটকানো যায়। ওষুধ শুরু করলে কখনওই মাঝপথে অনিয়মিত হওয়া বা বন্ধ করা যায় না। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা— পুরোটাই সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যে হয়। সচেতনতার আরও প্রসার চাই।
ফুসফুসের যক্ষ্মা কি বাড়ছে? রোগ নির্ণয় অনেক বেশি হচ্ছে। এটা আশার কারণ। প্রতিরোধী যক্ষ্মা ভয়ঙ্কর অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। নতুন ওষুধ আবিষ্কারই যথেষ্ট নয়। তার সঠিক সামাজিক ব্যবহারও জরুরি। সদ্য স্বাধীন দেশ অশক্ত কাঁধে ন্যাশনাল টিউবারক্যুলোসিস প্রোগ্রাম (১৯৬২) শুরু করেছিল। তার ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে নব্বইয়ে পাল্টে হল রিভাইসড ন্যাশনাল টিউবারক্যুলোসিস কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (১৯৯৩)। এবারে দেশ এক পা বাড়িয়েছে যক্ষ্মা নির্মূলের দিকে। লড়াই চলছে। জিততে হবেই।