মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি কী?
মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারক্যুলোসিস ব্যাকটেরিয়ার জন্য মানুষ টিবি রোগটিতে আক্রান্ত হন। এই রোগে আক্রান্ত হলে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগী ভালো হয়ে যান। এরপরও কিছু রোগী ভালো হন না। তখন চিকিৎসকরা সন্দেহ করেন রোগীর ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি হয়েছে কি না। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ওষুধ টিবি রোগের বিরুদ্ধে কাজ বন্ধ করে দিলে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি বলা হয়। রেজিস্ট্যান্ট টিবি চার রকমের— মনো, পলি, মাল্টি এবং এক্সটেনসিভ। ব্যাকটেরিয়াটি একটিমাত্র ওষুধে রেজিস্ট্যান্ট হলে মনো রেজিস্ট্যান্ট এবং একাধিক ওষুধে রেজিস্ট্যান্ট হলে পলি রেজিস্ট্যান্ট বলে। টিবির চিকিৎসায় বহু ব্যবহৃত এবং কার্যকরী ওষুধ আইসোনিয়াজিড, রিফামপিসিন ইত্যাদি অসুখটির বিরুদ্ধে সঠিকভাবে কাজ না করতে পারলে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি বা এমডিআর টিবি বলা হয়। এমডিআর রোগীর ফ্লুরোকুইনোলোন এবং সেকেন্ড লাইন ড্রাগের ইঞ্জেকশনে রেজিস্ট্যান্ট থাকলে এক্সটেনসিভ ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি বা এক্সডিআর টিবি বলে।
রেজিস্ট্যান্ট টিবি চিহ্নিত করা হয় কীভাবে?
সিবিন্যাট বা জিন এক্সপার্ট পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার জিন পরীক্ষা করে মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ব্যাকটেরিয়াটি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট কি না, এই বিষয়ে ধারণা করা যায়। তবে একমাত্র ব্যাকটেরিয়া কালচার পরীক্ষা করেই সবকিছু নিশ্চিত করে বলা যায়। পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যায় ১০ থেকে ৪২ দিনের মধ্যে। এই রিপোর্টটি আসার পরই চিকিৎসক নির্দিষ্ট করে বোঝেন কোন ধরনের রেজিস্ট্যান্ট টিবি হয়েছে।
টিবি ব্যাকটেরিয়া ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট হয় কীভাবে?
কোনও ব্যক্তির টিবি হলে সেই ব্যক্তিটিকে নির্দিষ্ট ওষুধ, নির্দিষ্ট ডোজে, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খেতে বলা হল। এবার এই ব্যক্তিটির শরীরের অন্দরে বসবাসরত টিবি ব্যাকটেরিয়া অনেকগুলি কারণে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট হতে পারে। প্রথমত, ওষুধটির ডোজ কম দেওয়া হলে। দ্বিতীয়ত, যতদিন ওষুধটি খাওয়ার কথা, তার আগেই ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দিলে। তৃতীয়ত, ওষুধের গুণমান ঠিক না থাকলে। এই এতগুলি কারণে শরীরে উপস্থিত টিবি ব্যাকটেরিয়া ওষুধ খাওয়ার পরও বেঁচে যায়। অনেকক্ষেত্রে বেঁচে যাওয়া ব্যাকটেরিয়াগুলি ওই নির্দিষ্ট ওষুধের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্ট হয়ে ওঠে। তবে বহু মানুষই প্রথমবারের জন্য টিবি রোগটিতে আক্রান্ত হয়েও ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি-তে ভুগতে পারেন। কারণ, অনেকসময় রেজিস্ট্যান্ট টিবি-তে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে অন্য কোনও মানুষের শরীরে টিবি ছড়িয়ে পড়ে। এবার যেই ব্যক্তিটি নতুন করে টিবি-তে আক্রান্ত হলেন তাঁর শরীরে বাসা বাঁধল রেজিস্ট্যান্ট টিবির জীবাণু। ফলে সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ রোগের প্রথম দিন থেকেই কাজ করবে না। এই অবস্থা বেশ চিন্তার।
চিকিৎসা কী?
রোগীর কোন কোন ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট রয়েছে তার উপর নির্ভর করে ওষুধ নির্ধারণ করা হয়। আগে রোগের ইন্টেনসিভ পর্যায়ের ছয় মাস একসঙ্গে অন্ততপক্ষে পাঁচ থেকে ছয়টি ওষুধ এবং এরপরের ১৮ মাস চারটি ওষুধ খেয়ে যেতে হতো। অবশ্য এখন অনেক নতুন কার্যকরী ওষুধ চলে আসায় এক থেকে দেড় বছর ওষুধ খেলেই চলে। রোগের পর্যায় এবং তীব্রতা অনুযায়ী কতদিন ওষুধ খেতে হবে তা ঠিক করা হয়।
সমস্যা হল, এই ওষুধগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব বেশি। তাই রোগী মাঝেমধ্যেই নানা সমস্যায় পড়েন। তখন সেই সমস্যাগুলিরও চিকিৎসা করতে হয় বা ওষুধ বদলে দিতে হয়।
রোগীকে কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে?
নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে ফলো-আপে আসা চাই। মাঝপথে ওষুধ ছাড়লে সমস্যা ভীষণ জটিল আকার নিয়ে নেয়। এমডিআর বা এক্সডিআর টিবি-তে আক্রান্তদের অবশ্যই অন্যদের মধ্যে যাতে রোগ ছড়িয়ে না পড়ে, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। টিবির এই শ্রেণীভুক্ত রোগীর অসুখ না কমা পর্যন্ত ভিড় এড়িয়ে চলা, গণ পরিবহণ ব্যবহার না করা, এন নাইন্টিফাইভ মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
সাক্ষাৎকার সায়ন নস্কর