পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
অসীমবাবু জানাচ্ছেন, প্রথমদিকে সমস্যাটা তেমন গুরুতর ছিল না। কষ্ট হলেও খাবার গিলে ফেলা যেত। ধীরে ধীরে খাবার খাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ল। খেলেই গলা থেকে খাদ্য বেরিয়ে আসত। ক্রমশ ওজন কমতে শুরু করল। দেখা দিল সোডিয়াম-পটাশিয়ামের অভাব। অবস্থা এমন হল যে, খাবার দেখলে কার্যত পালাতে ইচ্ছে হতো!
‘অসীমবাবুর এই অদ্ভুত সমস্যাটি একটি বিরল রোগ নির্দেশ করে’— বলছিলেন ডাঃ সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য। রোগটির নাম? ‘অ্যাকালেশিয়া কার্ডিয়া। অদ্ভুত এই সমস্যায় আমাদের খাদ্যনালীর নীচের দিকে বা খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর সংযোগস্থলে থাকা ভালভ স্বাভাবিকভাবে কাজ করে না। খাদ্যনালীর পেশির নমনীয়তা হ্রাসের জন্যই এমন হয়। ফলে কঠিন খাদ্য হোক বা তরল, খাদ্যনালীর নীচের অংশে ভালভের কাছে আটকে যায়। খাবার খাওয়ার পরেই বেরিয়ে আসে। সঙ্গে থাকে বুকে ব্যথা ও জ্বালা ভাব। এখানেই শেষ নয়। খাদ্যবস্তু জমে খাদ্যনালী বিস্তৃত হতে থাকে ও ক্রমশ ফানেলের আকার ধারণ করে! এই সমস্যায় প্রথম দিকে ওষুধ খেয়ে কিছুটা কাজ হয় ঠিকই, তবে সম্পূর্ণ সুফল মেলে না। অসীমবাবু প্রায় বছর দু’য়েক ধরে ওষুধ খেয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন। শেষে আমরা অসীমবাবুর অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নিই। মুশকিল হল, খাদ্যনালীর ওই অংশে সার্জারি করা যথেষ্ট ঝুঁকিবহুল। বিশেষ, করে ওপেন সার্জারি করতে হলে বুকে প্রায় ৫ থেকে ৬ ইঞ্চির ক্ষত তৈরি হয় যা রোগীর পক্ষে যথেষ্ট যন্ত্রণাদায়ক। তাই আমরা ল্যাপেরোস্কোপিক হেলার’স কার্ডিওমায়োটমি পদ্ধতির সাহায্য নিই। এই প্রক্রিয়ায় খাদ্যনালীর মধ্যে থাকা মাসলের স্তর বিভক্ত করে দেওয়া হয় ও লালাগ্রন্থি উন্মুক্ত করা হয়। তবে খুব সাবধানে এই সার্জারি করতে হয় কারণ, খাদ্যনালীতে সামান্যতম ছিদ্র হলেই অপারেশন ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে অসীমবাবুর ক্ষেত্রে অপারেশন সফল হয়। রোগী খাবার খেতে শুরু করেন।’
অসীমবাবু জানিয়েছেন, আগে তাঁর ওজন ছিল ৫৯ কেজি। সার্জারির দু’সপ্তাহ পরে ওজন হয় ৬৪ কেজি!
‘তবে রোগ ধরা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অসুখটি এতটাই বিরল যে চট করে ধরা পড়ে না। তাই রোগীর খাবার খাওয়া এবং মুখ দিয়ে খাবার বেরিয়ে আসার সমস্যা থাকলে, চিকিৎসককে এই রোগটির সম্পর্কে একবার হলেও ভাবতে হবে।’— যোগ করলেন ডাঃ ভট্টাচার্য।