মানসিক অস্থিরতা দেখা দেবে। বন্ধু-বান্ধবদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। কর্মে একাধিক শুভ যোগাযোগ আসবে। ... বিশদ
ফিসচুলা: ফিসচুলা হল মলদ্বারের বাইরের ত্বক থেকে মলদ্বারের ভিতর পর্যন্ত একটি নালীপথের সৃষ্টি হওয়া। এর পূর্বশর্ত হল মলদ্বারের পাশে ফোঁড়া হওয়ার ইতিহাস।
ফিসার: ফিসারের ক্ষেত্রে শক্ত পায়খানার কারণে মলদ্বার চিরে গিয়ে যন্ত্রণার হয়। মলদ্বারে জ্বালা করে। এমনকী মলত্যাগের পর দীর্ঘক্ষণ তীব্র যন্ত্রণা হয়। দপদপ করে। রোগী পায়খানা যেতেই ভয় পায়। এমনকী স্বাভাবিক পায়খানা পর্যন্ত অনেক সময় যন্ত্রণার কারণ হয়। ঠিকমতো চিকিৎসা না হওয়ার জন্য ক্রনিক ফিসারে পরিণত হয়।
এমন অনেক রোগী পাওয়া যায় যাঁরা ১৫ থেকে ২০ বছর বা তারও বেশি এইসব রোগে ভুগছেন। কিছুদিন হয়তো কোনও কারণে ভালো থাকে আবার রোগ লক্ষণ দেখা যায়।
চিকিৎসা: উপরোক্ত দুটি রোগের ক্ষেত্রেই হোমিওপ্যাথি সুফলদায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা।
ফিসচুলা: এই রোগে যে সমস্ত ওষুধ খুব বেশি ব্যবহার হয় তার মধ্যে কয়েকটি হল— ১) সাইলিসিয়া: অতিরিক্ত শীতকাতুরে, গরম আবহাওয়া পছন্দ করে, শীতকালে রোগলক্ষণ বাড়ে, মনের দৃঢ়তার অভাব, সহজেই নমনীয়, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিমত করে, ভীতু প্রকৃতির হয়, ঠান্ডা লেগে যায় সহজেই, ফিসচুলা থেকে জলের মতো দুর্গন্ধ যুক্ত পুঁজ নির্গত হয়, পায়ের ঘাম দুর্গন্ধ যুক্ত।
২) ফ্লুওরিক অ্যাসিড: সাইলিসিয়ার ব্যবহার আংশিক নিরাময়ের পরে এই ওষুধটি প্রায়শই ব্যবহার হয়। অত্যন্ত গরমকাতুরে, দয়ামায়াহীন বদমেজাজি, নিম্নরুচিসম্পন্ন, ঝাল ও মশলাযুক্ত খাবারে লোভ, ঠান্ডা পছন্দ করে। রোগীকে প্রকৃত বয়সের তুলনায় বেশি বয়স্ক মনে হয়। ফিসচুলার জায়গায় ঠান্ডা দিলে ভালো লাগে।
৩) নাইট্রিক অ্যাসিড: সাইলিসিয়ার ন্যায় পাতলা জলের মতো পুঁজ নির্গত হয়, কিন্তু অত্যন্ত রাগী, প্রতিহিংসাপরায়ণ, চর্বি জাতীয় খাবারে লোভ।
৪) গ্রাফাইটিস: মোটাসোটা রোগীর ক্ষেত্রে বেশি উপযোগী। ত্বক ফাটাফাটা, চটচটে, মোটা পুঁজ নির্গত হয়। মনের দিক থেকে অতিরিক্ত সাবধানী। মাছ, মাংস, ডিম, মিষ্টি সকল খাবারই অপছন্দ।
৫) সোরিনাম: দুর্গন্ধই এই ওষুধের প্রধান লক্ষণ। সমস্ত স্রাবই দুর্গন্ধযুক্ত। অতিরিক্ত শীতকাতুরে। গরমকালেও মোটা জামাকাপড় পরে সহজেই ঠান্ডা লেগে যায়। ফিসারের চিকিৎসা করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে রোগীর পায়খানা যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার। তার জন্য প্রচুর পরিমাণে জল, শাকসব্জি, আটার রুটি ইত্যাদি খাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে হবে। পাশাপাশি পায়খানা করার সময় অতিরিক্ত যন্ত্রণা হলে গরমজলে মলদ্বার ১০ থেকে ১৫ মিনিট ডুবিয়ে বসতে হবে। নিম্নলিখিত ওষুধগুলো প্রায়ই ব্যবহার হয়।
১) র্যাটানহিয়া: হঠাৎ করে ফিসার দেখা দিলে এবং প্রচণ্ড যন্ত্রণা সহ রোগী ছটফট করলে এই ওষুধটি খুব ভালো কাজ করে। স্বাভাবিক এমনকী ক্ষেত্রে বিশেষে তরল মলত্যাগেও জ্বালা, যন্ত্রণা থাকে। উত্তাপে উপশম।
২) নাইট্রিক অ্যাসিড: আগেই বলেছি নাইট্রিক অ্যাসিড রোগীর মানসিক লক্ষণ। এর সঙ্গে মলদ্বারে সুচ ফোঁটানো ব্যথা অনুভব করে। পায়খানা করার পরেও দীর্ঘক্ষণ ব্যথা থাকে। পাতলা পায়খানাও যেন কষ্ট করে করতে হয়। ইউরিনে ভীষণ দুর্গন্ধ হয়। মলদ্বারে ছোট কাঠি আটকে থাকার অনুভূতি।
৩) পেট্রোলিয়াম: শীতকালে রোগের বৃদ্ধি। বাঁধাকপি সহ্য হয় না। পায়ে দুর্গন্ধ যুক্ত ঘাম হয়। চর্মরোগের ইতিহাস থাকে বিশেষ করে শীতকালে পা-হাত ভীষণভাবে ফেটে যায় এমনকী রক্ত বের হয়।
৪) গ্রাফাইটিস: মোটাসোটা, কোষ্ঠবদ্ধ রোগীর ক্ষেত্রে উপযোগী। ফাটা ফাটা চর্ম, নখ। ফাটা চামড়া থেকে মধুর মতো চটচটে রস বের হয়।
৫) আর্থেনিকাম অ্যালবাম: হঠাৎ করে ফিসার (অ্যাকিউট ফিসার) গরম দিলে আরামবোধ। তার সঙ্গে মানসিকভাবে ভীষণ চঞ্চল, সবসময় ছটপট করে। ঘনঘন জল পিপাসা।
সর্বোপরি মনে রাখা দরকার, উপরিক্ত ওষুধ ছাড়াও যে কোনও ওষুধ লক্ষণাবলী অনুসারে কাজে লাগতে পারে। কারণ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মূলমন্ত্রই হল লক্ষণ। সেই জন্য প্রকৃতি রোগের চিকিৎসার করার আগে আমরা রোগীর সার্বিক উপসর্গগুলিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এই জন্য দক্ষ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ খাওয়া জরুরি। নিজেরা চিকিৎসা করলে সাময়িক উপশম হলেও অনেক সময় সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না।