মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযো ... বিশদ
ওরিয়েনশিয়া সুসুগামুশি নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে মানুষ স্ক্র্যাব টাইফাস রোগটিতে আক্রান্ত হন। এই অসুখটি সম্পূর্ণভাবে একটি অ্যাকিউট ইনফেকশন। ট্রম্বিকিউলিড নামক এক লার্ভার (চিগার) কামড় থেকে এই ব্যাকটেরিয়াটি শরীরে প্রবেশ করে। এই লার্ভাটিই এই রোগটির বাহক।
জাপানি শব্দ ‘সুসুগা’ এবং ‘মুশি’-কে যুক্ত করে এই ব্যাকটেরিয়ার নাম রাখা হয়েছে। ‘সুসুগা’ শব্দের অর্থ হল অসুখ এবং ‘মুশি’ শব্দের অর্থ হল কীট বা পরজীবী।
ছোট থেকে বড় যে কোনও বয়সের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। ভারত ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার উত্তরভাগ সহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চলে এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়। প্রতিবছর এই বিশাল অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষ স্ক্র্যাব টাইফাসে আক্রান্ত হন। তবে শহরের তুলনায় মূলত গ্রামের দিকেই এই রোগের প্রকোপ থাকে বেশি।
১৮৯৯ সালে জাপানের তরফ থেকে প্রথমবারের জন্য এই রোগটির সম্বন্ধে জানানো হয়। প্রাক অ্যান্টিবায়োটিক যুগে এই রোগ ছিল মানব সভ্যতার মাথাব্যথার অন্যতম কারণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই রোগ প্রায় মহামারীর আকার ধারণ করে। যুদ্ধের আবহে পূর্বের দেশগুলিতে হাজার হাজার সেনা স্ক্র্যাব টাইফাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই সময় সংক্রামক রোগগুলির মধ্যে ম্যালেরিয়ার পরে স্ক্রার্ব টাইফাসে আক্রান্ত হয়েই সবথেকে বেশি সংখ্যক সৈন্য প্রাণ হারিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে মায়ানমার এবং শ্রীলঙ্কায় থাকা সৈন্যদের মধ্যেও এই রোগ মহামারীর আকার নেয়। এই নির্দিষ্ট সময়েই ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে এবং আসামে স্ক্র্যাব টাইফাস ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছিল। এখন অবশ্য গোটা দেশেই এই রোগে আক্রান্ত রোগীর দেখা মেলে।
জীবাণু
ওরিয়েনশিয়া সুসুগামুশি হল একধরনের গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়ার বিভিন্ন ভাগ রয়েছে। গ্রাম নেগেটিভ এই ব্যাকটেরিয়ার মূল পাঁচটি ভাগ হল— বরিয়ন, গিলিয়াম, কার্প, কাটো, কাওয়াসাকি। সবথেকে বড় কথা, প্রতিটি ভৌগলিক অঞ্চল ভেদে এই ব্যাকটেরিয়ার জিনগত প্রভেদ দেখা যায়। সেরোটাইপের এই বিভেদগুলি ল্যাবরেটরিতে রোগ নির্ণয়ের সময় অত্যন্ত জরুরি।
রোগ ছড়ায় কীভাবে?
প্রথমেই বলা হয়েছে, ট্রম্বিকিউলিড নামক এক লার্ভা (চিগার) কামড়ালে এই ব্যাকটেরিয়াটি শরীরে প্রবেশ করে। তবে যে কোনও চিগার কামড়ালেই এই রোগ হয় না। বরং কোনও ইনফেকটেড চিগার কামড়ালেই মানুষ স্ক্র্যাব টাইফাস রোগটিতে আক্রান্ত হন। এটি শরীরের যেই অংশে কামড়ায়, সেই জায়গাটা কালো বড় ফুসকুড়ির মতো দেখায়।
মোটের উপর এর জীবনের চারটি পর্যায় রয়েছে— ডিম, লার্ভা, নিম্ফ এবং অ্যাডাল্ট বা প্রাপ্তবয়স্ক। এই চারটি পর্যায়ের মধ্যে একমাত্র লার্ভা অবস্থাতেই (চিগার) স্ক্র্যাব টাইফাসের জীবাণু মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে।
চিগার হল এই রোগের প্রাথমিক রিসার্ভর। সাধারণত ছোট স্তন্যপায়ীদের শরীর থেকে খাদ্য সংগ্রহ করার সময়ই চিগারের মধ্যে সংক্রমণ হয়। এবার এই ইনফেকটেড চিগার গোটা জীবন সংক্রমণটিকে বয়ে বেড়ায়। প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় ট্রান্সওভারিয়াল ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে নিজের ডিমের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়। এবার ট্রান্সস্টেডিয়াল ট্রান্সমিশনের প্রক্রিয়াতে ডিম থেকে লার্ভার মধ্যে সংক্রমণ দেখা দেয়। এই প্রক্রিয়াতে চিগার সাম্রাজ্যের মধ্যে ইনফেকশন ঘুরতেই থাকে। এরপর এই সাম্রাজ্যের কোনও ইনফেকড চিগার কোনও মানুষকে কামড়ালে তিনিও স্ক্র্যাব টাইফাসে আক্রান্ত হন।
স্ক্র্যাব টাইফাসের ভূগোল
স্ক্র্যাব টাইফাসের প্রকোপে পড়া দেশগুলিকে ‘সুসুগামুশি ট্রায়াঙ্গেল’ বলা হয়। অর্থাৎ পৃথিবীর মানচিত্রে ত্রিভূজের মতো একটি অংশে এই রোগের প্রকোপ রয়েছে। ত্রিভূজটি উত্তরে রাশিয়ার সুদূর পূর্ব ভাগ এবং জাপানের উত্তরভাগ, দক্ষিণে অস্ট্রেলিয়ার উত্তরভাগ এবং পশ্চিমে পাকিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত।
ভারতের বিভিন্ন জায়গায় স্ক্র্যাব টাইফাস থাবা বসিয়েছে। জম্মু থেকে শুরু করে নাগাল্যান্ডের মতো সাব হিমালয়ান বেল্টে ছড়িয়েছে এই রোগ। এছাড়া হিমাচলপ্রদেশ, পণ্ডিচেরি, তামিলনাড়ু, সিকিমেও এই রোগে বহু মানুষ আক্রান্ত হন। এই জায়গাগুলির সঙ্গে অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের নামটিও জুড়তে হবে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বেশকিছু মানুষ এই রোগে আক্রান্ত।
দেশকাল ভেদে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার সময়ও হয় আলাদা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বর্ষাকালেই স্ক্র্যাব টাইফাসের প্রকোপ থাকে বেশি। যদিও দক্ষিণ ভারতে শীতের সময় এই রোগের প্রভাব বাড়ে।