দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের সুফল আশা করতে পারেন। শেয়ার বা ফাটকায় চিন্তা করে বিনিয়োগ করুন। ব্যবসায় ... বিশদ
চোখ কতটা শক্তিশালী?
কোন ফোনের ক্যামেরা কত মেগাপিক্সেলের, তা নিয়ে প্রযুক্তিপ্রিয় মানুষের আগ্রহ অসীম। বাজারে এখন ৮ থেকে শুরু করে ৬৪ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা সম্পন্ন স্মার্টফোন পাওয়া যাচ্ছে। আর কয়েক বছরের মধ্যেই চলে আসবে একশোরও বেশি মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাযুক্ত স্মার্টফোন। কিন্তু আমাদের খুব কাছেই রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্যামেরা! সেটি হল আমাদের এই চোখজোড়া। জানলে অবাক হবেন, মানুষের চোখে রয়েছে ৫৭৬ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। সেই জন্যই আমরা প্রায় এক কোটি রং আলাদাভাবে দেখতে পাই।
পিক্সেল কী?
পিক্সেল হচ্ছে ছবির প্রাণ, ছবির ক্ষুদ্রতম অংশ, যা খালি চোখে দেখা যায় না। একটি ছবি দৈর্ঘ্যে তিন হাজার পিক্সেল আর প্রস্থে দু’হাজার পিক্সেল হলে পুরো ছবির আয়তন দাঁড়ায় ৬০ লক্ষ পিক্সেল। অর্থাৎ, এই ছবিটি হবে ছয় মেগাপিক্সেলের। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, ১০ লক্ষ পিক্সেল সমান এক মেগাপিক্সেল। এই মেগাপিক্সেলই হচ্ছে ক্যামেরার লেন্সে তোলা ছবির আয়তনের একক। সাধারণত বলা হয়ে থাকে যে, স্থির দৃষ্টিতে একটি স্থিরচিত্র হিসেবে মানুষের চোখ ৫৭৬ মেগা পিক্সেলের ছবি গ্রহণ করতে পারে। তবে চলমান ছবি বা ভিডিও’র ক্ষেত্রে মানুষের চোখ ৭৭৭.৬ গিগাপিক্সেল/সেকেন্ড পর্যন্ত রেজোলিউশনের ছবি তুলতে সক্ষম।
ক্যামেরা ও চোখ, মিল-অমিল
ক্যামেরা ও চোখ— দু’টো জিনিসই লেন্সের মাধ্যমে আলোক প্রক্ষেপণ করে কোনও ছবি বা দৃশ্যকে ফুটিয়ে তোলে। তাই তাদের গঠনগত মিলের জন্য ক্যামেরাকে অনেক সময়ই চোখের সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে। যদি বলি, যে চোখ আসলে একটা অ্যান্টেনা, তাহলে অনেকেই হয়তো সেটা মানবেন না। অ্যান্টেনা সাধারণত রেডিও বা মোবাইল ফোনের যান্ত্রিক অনুষঙ্গ যা বেতার তরঙ্গ ধরার কাজে ব্যবহৃত হয়। চোখের কাজ তো সেরকম কিছু না, আমরা তো চোখ দিয়ে বেতার তরঙ্গ নয়, আলো ধরি। কিন্তু অন্যভাবে ভাবলে বেতার তরঙ্গ, আলো কিংবা এক্স রে– এরা সবাই আসলে তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ, এদের মাঝে পার্থক্য কেবল তরঙ্গদৈর্ঘ্যে। সেক্ষেত্রে এন্টেনা বা চোখের কাজ এক। তড়িৎ চৌম্বকিয় তরঙ্গকে ফাঁদে ফেলে প্রয়োজনীয় তথ্য বিশ্লেষণ করা। তবে ক্যামেরাকে কখনওই চোখের সমতুল্য বলা যাবে না। কারণ, গঠনগত মিল থাকলেও চোখের ক্ষমতা ক্যামেরার তুলনায় বহুগুণ বেশি। প্রথমত চোখ দিয়ে আমরা ত্রিমাত্রিক দৃশ্য দেখি। যখন ত্রিমাত্রিক দর্শনের কথা আসে তখন মানতেই হয় যে এক চোখের থেকে দুই চোখের গুরুত্ব এখানে সর্বাধিক। আমাদের দু’টি চোখ থাকার ফলে আমরা কোনও বস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা— এই তিন মাত্রা বা ডাইমেনশনই দেখতে পাই। এখানে স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন আসতে পারে, আমরা দেখি দুই চোখ দিয়ে, কিন্তু এক জিনিস দু’টি না দেখে একটাই দেখি কিভাবে? বাস্তবে আমরা দুই চোখ দিয়ে দু’টি দ্বিমাত্রিক ছবিই দেখে থাকি। কিন্তু যখন দুই চোখের অপটিক স্নায়ু দিয়ে এই ছবির সিগন্যাল যায় মস্তিষ্কে, তখন মস্তিষ্ক এই ছবি দু’টিকে একটি ছবিতে পরিণত করে ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করে।
বিশ্বাস না হলে এক চোখ বন্ধ করে সুচে সুতা পরিয়ে দেখতে পারেন। সেক্ষেত্রে ক্যামেরা দিন দিন যতই আধুনিক হোক না কেন, তার দৌড় সেই দ্বিমাত্রিক ছবিতেই শেষ হয়ে যায়। মানুষের চোখ একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে কাজ করে। আমাদের দুই চোখের পেছনের পর্দায় প্রতিফলিত হয় সামনের দৃশ্যের উল্টো হয়ে থাকা এক জোড়া শীর্ণ প্রতিবিম্ব। সামনের দৃশ্য থেকে আলো চোখের আলোক সংবেদী অঙ্গ রেটিনা-পর্দায় গিয়ে সেই প্রতিবিম্ব গঠন করে। আর তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে, কার্যত সেকেন্ডেরও কম সময়ে, সামনের ত্রিমাত্রিক জগতের জরুরি তথ্যে ভরপুর একটি বিস্তারিত দৃশ্য তৈরি হয় আমাদের মস্তিষ্কে। যার ফলে আমরা দেখতে পাই। এই ‘দেখতে পাওয়া’র জন্যই আমরা ক্রিকেট খেলায় বলে-ব্যাটে-সংঘাতে ছক্কা মারতে পারি, সন্ধ্যার আবছায়া অন্ধকারে পরিচিতদের চিনতে পারি, কেউ মুখ বরাবর তাকিয়ে থাকলে হঠাৎ চোখে চোখ ফেলতে পারি। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চোখ থেকে পাওয়া তথ্য মস্তিষ্কে দেখার অনুভূতি তৈরি করে তা বেশ জটিল। আমাদের চোখের গঠন এতটাই জটিল যে, তা কল্পনাকেও অনায়াসে হার মানাবে। চোখের কার্যপদ্ধতি অনেকটা ক্যামেরার কার্যপদ্ধতির মতোই। চোখের পাতা কাজ করে ক্যামেরার শাটারের মত, চোখের ভেতরে আছে স্থিতিস্থাপক লেন্স যা দর্শনীয় বস্তুকে ফোকাস করে এবং তারপর কোনও অদৃশ্য যাদুবলে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে একসময় সেই ছবি আমরা দেখতে পাই। শুধু তাই নয়, মানুষের চোখ উপরে-নীচে প্রায় ১৩৫ ডিগ্রি থেকে ১৪০ ডিগ্রি এবং দুই পাশে প্রায় ২০০ ডিগ্রি পর্যন্ত দেখতে পারে। এতকিছু ক্যামেরার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এবার কেউ উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন অত্যাধুনিক ক্যামেরা নিয়ে বড়াই করতে এলে, মুষড়ে পড়বেন না। মনে রাখবেন, এই জগতের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ক্যামেরাটি কিন্তু আপনার সঙ্গে সবসময় আছে।