গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
সুকুমার মুখোপাধ্যায় (জেনারেল ফিজিশিয়ান): এককথায়, ‘মেডিটেশন ইজ আন আর্ট অব রিলাক্সেশন অ্যান্ড কনশেনট্রেশন অব মাইন্ড।’ এতে মনের শান্তি পাওয়া যায়। যা স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টে খুব প্রয়োজনীয়। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টে যেমন ওষুধ ব্যবহার করে কোনও রোগীকে শান্ত করা হয়, সেরকমই মেডিটেশন বা ধ্যান হল মনকে শান্ত করার একটি পদ্ধতি। এটা পরমাত্মার সঙ্গে যোগাযোগের একটি মাধ্যম। কিন্তু, ধ্যান অত্যন্ত জটিল। মানুষের মন এতই অস্থির যে ধ্যান করতে গেলেই অন্য চিন্তা চলে আসে। সেজন্য আমাদের আংশিক ধ্যান হয়। মানুষকে নিজেকে শান্ত, ধীর, স্থির রাখতে ভ্যালিয়াম, অ্যালজোলাম জাতীয় খায়। আমাদের ‘বডি, মাইন্ড আ্যান্ড সোল’ বলে একটা প্রবাদ আছে। শারীরিক পরিশ্রম করে শরীর ঠিক রাখা যায়। কিন্তু, মন আর আত্মাকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে ধ্যান অতুলনীয়। যে যত মেডিটেশন করে তাঁর তত শুদ্ধ বা ইতিবাচক চিন্তা বাড়বে। আজকে সভ্যতা যত এগচ্ছে, ততই চাহিদা বাড়ছে, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জীবনযাত্রার জটিলতা। সেই জটিলতার সঙ্গে মানিয়ে চলতে সাহায্য করে ধ্যান। এক কথায় অস্থিরতা কাটাতে, উদ্বেগ দূর করতে মেডিটেশনের জুড়ি মেলা ভার। আমি কোনও রোগীকে যদি দেখি খুব অস্থির হয়ে রয়েছে, তাঁকে বলি একটু শান্ত হন। আর শান্ত হলে তবেই শুদ্ধ চিন্তা আসে।
কুণাল সরকার (হার্ট সার্জন): চিকিৎসা কথার অর্থই হল শরীরের যান্ত্রিক সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান। আর যোগ, ধ্যান, প্রাণায়াম, অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথির মতো চিকিৎসার বিভাজনটা তৈরি করে দেওয়া। এটা জ্ঞান নয়, আসে অজ্ঞানতা থেকে। যখন আয়ুর্বেদের উন্নতি হয়েছিল, তখন ইউএসজি, সিটি স্ক্যান ছিল না। থাকলে আয়ুর্বেদ অন্যভাবে উঠত। মেডিসিনে ‘এনআরসি’ করাটা খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মানুষের জীবনকে যা স্পর্শ করবে সেটাই চিকিৎসা। মানুষের মানসিক শান্তি, আচরণ, আবেগের ভারসাম্যের উপর মেডিটেশনের বিরাট অবদান রয়েছে। এবং তা সর্বজন গৃহীত ও স্বীকৃত। আমাদের তথাকথিত আল্যোপ্যাথি তথা পাশ্চাত্য চিকিৎসা পদ্ধতির বহু ক্ষেত্রে মেডিটেশন ঢুকে রয়েছে। আসলে যেটা তখনকার ঠিক, সেটা এখনও ঠিক। এটা আমাদের অর্জিত। আর সেকারণেই ধ্যান মানুষের বর্তমান জীবনযাত্রায় অপরিহার্য। তা নাহলে কি আর ‘অ্যাপল’ সংস্থার দাদাবাবু (স্টিভ জোবস) ‘অটো বায়োগ্রাফি অব আ যোগী’ বইকে বগলে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন! আসলে সুগারের রোগীর চিকিৎসা করতে করতে আমরাই অনেক সময় তাঁর চোখ, হার্ট কেমন আছে, তা দেখতে ভুলে যাই। একইভাবে কোনও রোগীকে যদি দেখা যায় খুব মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বা খুব টেনশনে রয়েছেন, তাহলে তাঁকে সবার আগে আমাদের মেডিটেশন, যোগ করতে বলা উচিত। অথচ আমরা ডাক্তাররা যা উপদেশ দিই, তা অনেক সময় নিজেরাই মেনে চলি না। রোগীকে আমি বলি, অযথা উৎকণ্ঠা বাড়াবেন না, পাঁচ মিনিট স্থির হয়ে সুচিন্তা করুন, নিজেকে নিজের সময় দিন। সেটাই আপনার মেডিটেশন।
অমিত চক্রবর্তী (মনোবিদ): প্রথমে জানা দরকার ধ্যান আসলে কী? যদি কোনও একটি নির্দিষ্ট দিকে মনটা নিবদ্ধ করা হয়, অন্য কথা ভাবব না, তাহলে ধ্যান খুব ভালো। কারণ, তা আমাদের মনকে বিভিন্ন চিন্তা থেকে বের করে একটা দিকে চালিত করে। যখন নেতিবাচক চিন্তা মাথায় ভিড় করে, তখনই আমরা অ্যাংজাইটি বা দুশ্চিন্তায় ভুগি। এই চিন্তা আটকানোর পয়লা উপায় হল ধ্যান। কিন্তু, ধ্যান করাটা খুব সহজ জিনিস নয়। অথচ, মেডিটেশন যদি ‘ব্রিদিং এক্সাইজ’ বা প্রাণায়াম হয়, তাহলে সেটা অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত, সহজ ও উপকারী। এখানে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার মাধ্যমে আমাদের সমস্ত সত্তা ওই শ্বাস-প্রশ্বাসেই নিবদ্ধ থাকে। ফলে মানুষ অনেক বেশি মনের দিক থেকে তরতাজা থাকে, আশাবাদী হয়, এনার্জি বেশি থাকে, ইতিবাচক চিন্তাধারার হয়। উৎকণ্ঠা, টেনশন থেকে বেরনোর ভালো উপায় হল এই ধ্যান। কেননা উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ, অস্থিরতাই আজকের নানা সমস্যার কারণ। মেডিটেশন মনের উপর সেই লাগাম টানতে সাহায্য করে। যাঁরা অ্যাংজাইটি কমানোর জন্য ওষুধ খান, তাঁদের আমি পাশাপাশি ধ্যান করতে বলব। কারণ, ওষুধের তাৎক্ষণিক এফেক্ট আছে। তাই রোগী সঙ্গে সঙ্গে স্বস্তি পাবেন। কিন্তু, ধ্যান সেই রোগীকে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দেবে। এবং ওষুধ নির্ভরতা কমাবে। অর্থাৎ অনাক্রম্যতা বা ইমিউনিটি বাড়ানোর কাজ করে ধ্যান।