ব্যবসা সূত্রে উপার্জন বৃদ্ধি। বিদ্যায় মানসিক চঞ্চলতা বাধার কারণ হতে পারে। গুরুজনদের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন ... বিশদ
ধ্যান হল রাজযোগের অন্তর্গত। ধ্যানকে আমরা অন্তরঙ্গ যোগও বলে থাকি। ধ্যানের মূল মন্ত্রই হল মনঃসংযোগ। অর্থাৎ মনঃসংযোগের মাধ্যমে আত্মস্থ হওয়া ও আত্মোপলব্ধি করা।
খেয়াল করলেই বোঝা যাবে আমাদের মন বড় বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে। মনই আমাদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। অথচ আমরা যেন সবসময় মনের চাকর হয়ে বাঁচি! তাই মনের গোলাম নয়, হতে হবে মনের রাজা! আর দাসত্ব মোচন করতে হলে প্রথমেই মনকে শান্ত করা দরকার। মন শান্ত করার পদ্ধতি হল ধ্যান। এমনিতে কথায় আছে— শরীরের থেকে মন শ্রেষ্ঠ, মনের থেকে বুদ্ধি শ্রেষ্ঠ। এই বুদ্ধি দিয়েই ইন্দ্রিয় থেকে মনকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হয়। এভাবেই খুঁজে পাওয়া যায় নির্লিপ্ত সত্তা। নির্লিপ্ত সত্তা মিললেই জাগতিক সব কিছুর সঙ্গেই মহাজগতের মিলন ঘটা সম্ভব। তখনই ঘটবে আত্মোপলব্ধি।
গুণীজনেরা বলেন, ধ্যানের মাধ্যমে শরীর থেকে মনকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে ফেলা যায়।
মনে রাখতে হবে— সমস্ত রোগের উৎস আসলে রিপু। রিপুর আধার হল শরীর। শরীর থেকে মনকে আলাদা করে ফেলা গেলেই শরীর ও রিপুর উপর আসবে নিয়ন্ত্রণ! এছাড়া, ইতিমধ্যেই কোনও অসুখে আক্রান্ত হলেও, ধ্যানের মাধ্যমে শরীরকে অনেকাংশে রোগের উপসর্গ থেকে মুক্ত করা সম্ভব। সম্ভব সুস্থ হওয়ার পথ ত্বরান্বিত করাও।
প্রশ্ন হল ধ্যানের মাধ্যমে আমরা কী কী করতে পারি? বহু কিছু করা সম্ভব। তবে প্রথমেই বোধহয় উত্তেজনা প্রশমনের কথা বলা যায়। কারণ উত্তেজনা বহু বৌদ্ধিক কাজের পরিপন্থী। নিয়মিত ধ্যান করলে বুদ্ধি বাড়ে, দ্বিধাহীন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। আত্মবিশ্বাস বাড়ে। ধৈর্য বাড়ে, সহনশক্তি বাড়ে। আধুনিক জীবনযাপনের দিকে তাকালে একটা কথা পরিষ্কার বোঝা যায়— মানুষ বড় অস্থির। সামান্য চোট-আঘাতে সে বড় চঞ্চল হয়ে ওঠে।
অশান্তি হচ্ছে খুচরো সমস্যা। কেউ আমরা নত হতে পারছি না। ‘আমিই শ্রেষ্ঠ’— এই ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে অহঙ্কার। নত হতে পারছে না কেউ। ক্রমাগত মানুষে মানুষে বেড়ে যাচ্ছে দূরত্ব। রামকৃষ্ণদেব একটা কথা বলে গিয়েছিলেন, ‘যে সয়, সে রয়।’ অতএব ‘মৃত্তিকার’ মতো আমাদেরও বাড়াতে হবে সহনশীলতা। সহনশীলতা বাড়লেই বাড়বে ধারণ ক্ষমতা। প্রথম হল খবরটা কী? এই প্রশ্নের উত্তর সবধর্মেই দেওয়া আছে। দেওয়া রয়েছে ধর্মের আচার অনুষ্ঠানেই। বিভিন্ন ধর্মে ঈশ্বরের আরাধনা শুধু আরাধনা নয় মাত্র। তা আসলে ‘ধ্বনি’ এবং সামান্য অনুষ্ঠানের আকারে রিপুর দাসত্বমুক্তির নিরন্তর সাধনা। এই যে আমরা বলি— ‘ওম’— অর্থাৎ ‘অ-উ-ম’। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের একসঙ্গে স্মরণ করা— আর তার মানেই সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের রূপককে স্মরণ করা। অর্থাৎ এই বিপুল সৃষ্টির মধ্যে নিজের অস্তিত্ব খোঁজার চেষ্টা। এই যে হৃদয় স্পন্দিত হচ্ছে— ‘লাব-ডুব’ সেও কিন্তু ওই ‘ওম’ শব্দেরই প্রকারভেদ। যতক্ষণ এই শব্দ রয়েছে ততক্ষণ আমি আছি।
ধ্যানের বহু প্রকারভেদ রয়েছে। যাঁরা প্রথম ধ্যান শুরু করছেন তাঁদের জন্য ধ্যানের কঠিন পথে নজর দিলে চলবে না। বরং সহজ পথে বহির্মুখী মনকে অন্তর্মুখী করতে হবে। জানলে অবাক হবেন— অধিকাংশ শারীরিক অসুখই হল মনের অস্থিরতার ফলাফল। আর আশ্চর্য ব্যাপার হল, যখনই মন অশান্ত হবে তখনই ধ্যান করা যায়। যে কোনও অবস্থায় ধ্যান করা যায়। ধ্যান করা যায় সুখাসনে, পদ্মাসনে এমনকী চেয়ারে বসে ও দাঁড়িয়েও! একটা উদাহরণ দিই। ধরা যাক, এক বৃহৎ মাল্টিন্যাশনাল সংস্থার কর্ণধার আপনি। সংস্থা বিপুল সমস্যায় পড়েছে। মিটিং করছেন দফায় দফায়। অথচ কর্তব্য স্থির করতে পারছেন না। মিটিং-এ উপস্থিত ভদ্রমহোদয়গণের কাছে পাঁচ মিনিট সময় চেয়ে নিন। নিভৃত কোনও জায়গায় যান। এবার— স্থির হয়ে দাঁড়ান। চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিন। শ্বাস ছাড়ুন প্রলম্বিত ‘ওম’ ধ্বনির সাহায্যে। টানা পাঁচ মিনিট এমন করুন। দেখবেন কিমকর্তব্য সম্পর্কে আপনার স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছে।
মজার ব্যাপার হল, যে কোনও পরিস্থিতিতেই এইভাবে ধ্যানস্থ হওয়া যায়। শাশুড়ি-বউমার ঝগড়া, পিতা ও সন্তানে বাগবিতণ্ডা, ইন্টারভিউ, পরীক্ষা দেওয়ার আগে মনকে শীতল করতে পারে মাত্র ৫ মিনিটের ধ্যান।
মজার ব্যাপার হল, ‘ওম’ ধ্বনি সহযোগে ধ্যান করলে মন বিক্ষিপ্ত হতে পারে না। পাঁচ থেকে দশ মিনিট এই ব্যায়াম করলে মৃত্তিকার মতোই শান্ত, শীতল হওয়া সম্ভব। সম্ভব নিজের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে তোলা। সম্ভব কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া। তাহলে আর দেরি নয়। ধ্যান শুরু করুন আজ থেকেই।