বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
ফোনে বা কোনও সোশ্যাল মিডিয়ায় চিকিৎসা উচিত কাজ নয়। বিধিসম্মতভাবেও ঠিক নয়। মেডিক্যাল কাউন্সিলের নিয়মাবলি থেকে শুরু করে যে সমস্ত অথরিটিটেটিভ বডি বা পেশাদার সংগঠনগুলি রয়েছে, তারা সকলেই এই বিষয়ে একমত যে, ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা ঠিক নয়। কারণ, এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এই ঝুঁকির দিকটি যেমন চিকিৎসকের দিক দিয়ে থাকে, তেমনই থাকে রোগীর দিক থেকেও। একজন রোগী বা তাঁর পরিবারের পক্ষে রোগের সম্পূর্ণ বিবরণ ফোনে দেওয়া নাও সম্ভব হতে পারে। আবার যে চিকিৎসককে ফোনের মাধ্যমে রোগের বিষয়ে বলা হচ্ছে, তিনি সেই সময়ে কোন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন, সেই বিষয়টি রোগী বা তাঁর পরিজনের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। হতে পারে, সেই চিকিৎসক হয়তো সেই সময়ে অন্য কোনও রোগী দেখছিলেন। আসলে, রোগী এবং চিকিৎসক যখন সামনাসামনি থাকেন, তখন তাঁদের আলোচ্য বিষয় থাকে একটিই। রোগীর সমস্যা। সেই সময়ে একজন চিকিৎসক এবং একজন রোগী, দু’জনেই অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে রোগ নিয়ে আলোচনা করেন। ফলে রোগীর অবস্থা হাতেকলমে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপে একপক্ষ অপরপক্ষকে দেখতে না পাওয়ায় রোগের গভীরে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। ভুলভ্রান্তির আশঙ্কা অনেকটাই বেশি থাকে, যা রোগী এবং চিকিৎসক উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে চিকিৎসা করার সময় রোগীর কিছু হলে, তার দায় চিকিৎসকের উপরেও বর্তায়। ফোনে অনেক সময়েই চিকিৎসকের কথা ঠিকমতো বুঝতে না পারার ফলে রোগীর জটিলতা বাড়তে পারে। তাই ফোনে বা হোয়াটসঅ্যাপে চটজলদি চিকিৎসার বদলে উভয়কেই প্রয়োজনীয় সময় দেওয়াটা বিশেষ প্রয়োজন।
বর্তমানে বহু চিকিৎসকই খুব অল্প সময়ের জন্য রোগী দেখেন। এর ফলে চিকিৎসার সময় কমছে। সেক্ষেত্রে ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপে আপত্তি কোথায়?
রোগীর সংখ্যা বাড়লেও তুলনায় চিকিৎসকদের সংখ্যা অপ্রতুল। কিন্তু চিকিৎসকদের সময়টা বাড়ছে না। এর মধ্যে যদি ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপ যুক্ত হয়, তবে রোগীদের চিকিৎসার সময় আরও কমে যাবে। একজন চিকিৎসকের কাছে যদি একদিনে ২০০টি ফোন আসে এবং তিনি যদি ফোনগুলিতে ন্যূনতম ১ মিনিট করেও সময় দেন, তবে শুধুমাত্র ফোনের জবাব দিতেই তাঁকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় অতিবাহিত করতে হবে। যার ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই রোগী দেখার সময়টা কমবে। রোগীর সংখ্যা বাড়লেও চিকিৎসকের সময় বাড়ে না। সুতরাং প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে সবাই যে চটজলদি চিকিৎসকের কাছে পৌঁছতে চাইছেন, তাতে ঝুঁকির মাত্রাই বাড়ছে।
চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে ডাক্তারির পাশাপাশি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এত অল্প সময়ে তার প্রয়োগ কি সম্ভব?
চিকিৎসক যখন রোগীর পাশে বসেন, তখন তাঁর পালস, প্রেশার, হার্টবিট সহ বিভিন্ন জিনিস দেখেন। তা থেকে রোগীর শারীরিক অবস্থার ধারণা পাওয়া যায়। পাশাপাশি, সামনে বসে রোগীর হাঁটাচলা দেখে বা কথা বলে চিকিৎসকরা সমস্যাগুলিকে সহজেই চিহ্নিত করতে পারেন। কিন্তু দৃষ্টিসীমার বাইরে থেকে শুধুমাত্র ফোনে শুনে রোগীর অবস্থা বোঝা অত্যন্ত দুরূহ। অত্যন্ত ঝুঁকিসাপেক্ষও বটে।
এখন অনেক চিকিৎসকই হোয়াটসঅ্যাপে প্রেসক্রিপশন দেখতে চান। ওষুধও দেন। সেক্ষেত্রে?
হোয়াটসঅ্যাপে প্রেসক্রিপশন চাওয়ার অর্থ, রোগী কী কী ওষুধ খান বা তাঁর কী ধরনের চিকিৎসা চলছে, সেই সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া। এর মধ্যে দিয়ে রোগীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসকরা কিছুটা ধারণা পেতে পারেন। অত্যন্ত প্রয়োজনে আপৎকালীনভাবে তিনি রোগীকে বা তাঁর পরিবারকে কিছু পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রেও ঝুঁকি থেকেই যায়।
কী ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে?
অনেক ওষুধ আছে, যেগুলির নাম শুনতে অনেকটা একইরকম, কিন্তু কার্যকারিতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। হয়তো ফোনে চিকিৎসক একটি ওষুধের নাম বললেন। কিন্তু রোগী ঠিক বুঝতে না পেরে দোকানে গিয়ে অন্য নাম বললেন এবং সেই ওষুধটি গ্রহণ করলেন, তাতে মারাত্মক বিপদের আশঙ্কা থাকে। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি সহজ হবে। ধরুন, একটা ওষুধের নাম ডাইমক্স ২৫০। অপর একটি ওষুধের নাম ডায়ামক্স ২৫০। বানানের তফাৎ সামান্যই। কিন্তু এই সামান্য তারতম্যই রোগীর ক্ষেত্রে মারাত্মক হয়ে দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগীর রোগ নিরাময়ের বদলে নতুন সমস্যা দেখা দিতে পারে। কখনও কখনও তা প্রাণ সংশয়ের কারণও হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসক রোগীর ভালো চেয়ে ফোনে পরামর্শ দিলেও তা আদতে উল্টো কাজ করায় স্বভাবতই ঝুঁকি বাড়বে চিকিৎসকেরও। তাই ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপে পরামর্শ দেওয়াটা অনুচিত। রোগীদেরও এই ঝুঁকির বিষয়টিকে বুঝতে হবে।
এখন তো টেলিমেডিসিন সেন্টারও হচ্ছে। তবে কি প্রযুক্তির সাহায্য নেব না আমরা?
প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে। তাই একটা পর্যায় পর্যন্ত প্রযুক্তির সাহায্য নিতেই হবে। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির সাহায্যে রোগের বিচার করা অনেকটাই সহজ হয়েছে। কিন্তু প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরে থেকে রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। কারণ প্রযুক্তির উন্নতি হলেও শরীর তো বদলায়নি, তা একই রয়েছে।
চিকিৎসকরা এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সের সাহায্যও নিচ্ছেন। সেটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
প্রযুক্তির উন্নতিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সের সাহায্য নিতেই হবে। রোগ বিশ্লেষণ, তার নীতি নির্ধারণ, জটিল অপারেশন— এই সমস্ত ক্ষেত্রগুলিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সের সাহায্য নিতেই হবে। রোগ বিশ্লেষণ ও তা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে আমরা বদ্ধপরিকর। সেক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সের থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখার কোনও কারণ নেই। তবে সবসময় লক্ষ রাখতে হবে, এই প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনও ভুল যাতে না হয়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সের পরিশীলিত ব্যবহার সর্বদাই কাম্য।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সের কি কোনও বিপদ রয়েছে?
একজন চিকিৎসক রোগীকে পরীক্ষা করার পর নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে সেই সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সের ক্ষেত্রে যা কখনওই সম্ভব নয়। তাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সের উপর ১০০ শতাংশ নির্ভর করলে বহু সময়েই ভুল সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। একজন চিকিৎসকের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের বিকল্প কখনওই আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স হতে পারে না।
কোন কোন ক্ষেত্রে ফোনে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে?
দীর্ঘদিন ধরে একজন ডাক্তার যদি একজন রোগীর চিকিৎসা করেন, সেক্ষেত্রে তিনি ওই রোগীর ইতিবৃত্তান্ত সবই জানবেন। তাই কখনও যদি ওই রোগীর অন্য কোনও সমস্যা হয় (জ্বর বা বমির মতো ছোটখাট বিষয়), তবে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কী করা প্রয়োজন, সেই বিষয়ে রোগীকে পরামর্শ দিতে পারেন। তবে রোগের কারণ নির্ধারণ করতে হলে রোগী এবং চিকিৎসককে মুখোমুখি বসতেই হবে। সেটি কখনওই ফোনের মাধ্যমে সম্ভব নয়। তবে কোনও নতুন রোগীর ক্ষেত্রে অনেক সময়েই এই কাজটিও করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কারণ, নতুন রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে চিকিৎসক সম্পূর্ণভাবে ওয়াকিবহাল নাও থাকতে পারেন।
ফোনে চিকিৎসার কারণে কোনও রোগীর মৃত্যু হলে তাঁর পরিবার কি মেডিক্যাল কাউন্সিলে যেতে পারেন? এর আইনি দিক কী আছে?