বিদ্যার্থীরা শুভ ফল লাভ করবে। মাঝে মাঝে হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ক্ষতি হতে পারে। নতুন ... বিশদ
পেশায় একটি বহুজাতিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট্যান্ট অভ্রনীল ইদানীং বুকের ভিতর অস্বস্তিবোধ করেন। রাতে ঠিকমতো ঘুম আসে না। সাধারণ বিষয়গুলিও কিছুতেই মনে রাখতে পারছেন না। অল্পতেই রেগে যাচ্ছেন। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ থেকে নিউরোলজিস্ট, প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানালেন, তাঁর হৃদযন্ত্রে কোনও সমস্যা নেই, বুকে-পেটেও সমস্যা নেই, সমস্যা নেই মস্তিষ্কেও। চিকিৎসকেরা তাঁকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠালেন! নিতান্ত অনিচ্ছায় অভ্রনীল মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গেলেন। কথাবার্তা বলে ডাক্তারবাবু জানতে পারলেন, অফিসের একটি বড় অঙ্কের হিসাবে গোলমাল হওয়ায় অভ্রনীল তীব্র মানসিক চাপে আছেন। মানসিক চাপ থেকে তাঁর নানান শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শেষপর্যন্ত সঠিক চিকিৎসায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেন অভ্রনীল। ফিরলেন জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে। অনেক সময় জীবনে চলে আসে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। হুট করে ঘটে যায় এমন ঘটনা, যা আমাদের কল্পনারও বাইরে। তা সে প্রিয়জনের মৃত্যুই হোক বা কোনও অসফলতা। সেই সময় পরিবর্তিত প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে গিয়ে মনোজগতে তৈরি হয় আলোড়ন। তৈরি হয় মানসিক চাপ, যাকে বলা হয় ‘স্ট্রেস’। এই মানসিক চাপের কারণে কেবল মনোজগতের পরিবর্তনই ঘটে না বরং উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু শারীরিক লক্ষণও দেখা দেয়। মানসিক চাপের কারণে মস্তিষ্কে কিছু রাসায়নিক বস্তু বা নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্য নষ্ট হয়, অন্তঃক্ষরা বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নিঃসরিত হরমোনের ঘাটতি-বাড়তি হয় এবং এসবের প্রভাবে হৃদযন্ত্রের সংকোচন-প্রসারণের হার পরিবর্তিত হয়, নিশ্বাস-প্রশ্বাস হয় অস্বাভাবিক। তখন স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে যে শারীরিক কোনও সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু মানসিক চাপের কারণেও যে এমনটা হতে পারে সেটাও মনে রাখা প্রয়োজন।
মানসিক চাপের কারণে ভুলে যাওয়া, সহজেই রেগে যাওয়া, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো, দুশ্চিন্তা, বিচার-বুদ্ধি লোপ পাওয়া, মনোযোগ কমে যাওয়া, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হওয়া, মন খারাপ, উৎসাহ-উদ্দীপনা কমে যাওয়া ইত্যাদি বিরূপ লক্ষণ দেখা দেয়। পাশাপাশি নানান শারীরিক অসুস্থতাও দেখা দিতে পারে। তাই মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে আমাদের কী কী করণীয় আর কী বর্জনীয় তার একটা সম্যক ধারণা থাকা জরুরি।
কী করণীয়:
পছন্দের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা বাড়াতে হবে। তা সে আত্মীয়-বন্ধুই হোক বা প্রতিবেশী অথবা সহকর্মী। এতে মনে আলাদা জোর পাওয়া যায়। যত বেশি কথা হবে অবসাদের কালো মেঘ ততই কেটে যেতে থাকবে। পরিবারকে গুরুত্ব দিন। পারিবারিক বন্ধন মজবুত করুন। সবাই মিলে একসঙ্গে খাবার খান। সপ্তাহে একদিন বেড়াতে যান। এতে একাকীত্বের সঙ্গে মানসিক চাপও দূর হয়।
মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে কিছু ইতিবাচক কাজকর্ম করতে হবে যা সচরাচর করা হয়ে ওঠে না। যেমন— কেউ ব্যাডমিন্টন খেলতে ভালোবাসলেও চাকরির তাগিদে তাঁর খেলা আর হয়ে ওঠে না। আবার বই-পোকা কেউ অফিসের চাপে বই পড়তে পারেন না। মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত লাগলে ব্যাডমিন্টন খেলে বা বই পড়ে মনকে হাল্কা করা যেতে পারে।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম কিন্তু মনকে সতেজ রাখতে অত্যন্ত জরুরি। পেশার কারণে শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখতে হলে বিশ্রাম নিতেই হবে। এর জন্য প্রয়োজন হলে প্রতিটি কাজের জন্য সময় ভাগ করে নিন। অযথা সময় নষ্ট করলে দিনের শেষে মানসিক চাপ বাড়তে পারে।
স্বাস্থ্যকর খাবার মনেরও স্বাস্থ্য ভালো রাখে। অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড বা মশলাদার খাবার খেলে মানসিক উদ্বেগ বা স্ট্রেস বাড়তে পারে। তাই মানসিকভাবে উদ্বিগ্ন থাকলে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত।
দৈনন্দিন রুটিনে পরিবর্তন না আনাই ভালো। আর পাঁচটা দিন আপনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঠিক যা যা করতেন, প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও সেগুলোই করে যেতে হবে। তা সে আপনার পছন্দ হোক বা না হোক। নিজেকে বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললে হিতে বিপরীত হতে পারে।
নিজের মনের খোরাক নিজেকেই জোগাতে হবে। যে গান শুনতে ভালোবাসে সে গান শুনবে, যে ছবি আঁকতে ভালোবাসবে সে ছবি আঁকবে। আবার কেউ যদি শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করে মানসিক শান্তি পান, তাহলে সেটাই তাঁকে করতে হবে। এতে মানসিক উদ্বেগ যেমন কমে, তেমন নেতিবাচক চিন্তা থেকেও মনকে দূরে রাখা যায়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল— নিজের যত্ন নেওয়া, শরীরের খেয়াল রাখা। প্রতিদিন অল্প কিছু সময় নিজের জন্য বরাদ্দ রাখুন। ওই সময়টুকু শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবুন। রোজ হাল্কা ব্যায়াম করতে পারেন। এতে মাংসপেশী শিথিল হয়। মনের চাপ কমাতে এই রিল্যাক্সেসেশন খুব জরুরি।
কী করণীয় নয়:
প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মাদক বা অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়লে মুশকিল। যেমন, অ্যালকোহল, তামাক এমনকী ক্যাফিনও। ক্যাফিন সাধারণত চা-কফিতে পাওয়া যায়। মানসিক
ভাবে উদ্বিগ্ন থাকলে অনেকেই ঘনঘন চা-সিগারেট খেতে থাকেন। এটা একেবারেই উচিত নয়।
অনেকে ভাবেন অতিরিক্ত কাজ করলে হয়তো সবকিছু ভুলে থাকা যাবে। এটা একেবারেই ভুল ধারণা। এমনটা করলে লাভের চাইতে বরং ক্ষতিই বেশি হবে। তখন মানসিক অসুখের সঙ্গে শারীরিক অসুখও দেখা দিতে পারে। তাই, এক সঙ্গে অনেকগুলি কাজ শুরু করবেন না। ধাপে ধাপে এগনোর চেষ্টা করুন। ইতিবাচক থাকুন। নিজের সামর্থ্যের উপর ভরসা রাখুন।
এছাড়াও বাহ্যিক জগতের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া, খাওয়াদাওয়ার পরিমাণ অত্যাধিক বাড়িয়ে অথবা কমিয়ে দেওয়া, অহেতুক বচসা-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়া, মাত্রাতিরিক্ত টিভি দেখা বা মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করা থেকে নিজেকে দূরে রাখাই ভালো।