গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
ডেঙ্গুর মশা
এডিস ইজিপ্টাই এবং এডিস অ্যালবোপিকটাস মশার মাধ্যমেই ডেঙ্গুর ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে। ভারত সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় এই দু’ধরনের মশার দেখা মেলে। এছাড়াও পানামা, মেক্সিকো এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও এই দু’ধরনের মশা দেখতে পাওয়া যায়।
এই দুই মশার মধ্যে পার্থক্য হল— এডিস ইজিপ্টাই-এর পিঠে বীণার মতো চিহ্ন থাকে। আর এডিস অ্যালবোপিকটাসের মশার পিঠে সাদা রডের মতো অংশ থাকে।
এই দু’ধরনের মশার শরীরে কালো-সাদা ডোরাকাটা দাগ থাকে। বাঘের শরীরের ডোরাকাটা দাগের সঙ্গে আপাত মিলের জন্য একে টাইগার মশাও বলা হয়।
এই প্রজাতির মশা সাধারণত স্বচ্ছ-পরিষ্কার জলে থাকে। ফেলে দেওয়া টায়ার, পাত্র, নির্মীয়মান বাড়ির চৌবাচ্চা ইত্যাদি জায়গায় বৃষ্টির জল জমে বা অন্য কোনও কারণে জল জমলে এই মশা সেখানে ঘর বাঁধতে পারে। এরা সেখানেই ডিম পাড়ে।
যে কোনও পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই মশাগুলির। সমুদ্রপৃষ্ঠে যেমন থাকতে পারে, তেমনই ৬০০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায়ও নিমেষে উড়ে বেড়াতে পারে। তিন মাইল পর্যন্ত উড়তে পারে ডেঙ্গুর মশারা। প্লেন, ট্রেন বা যে কোনও গণ পরিবহণে করে এক জায়গা থেকে অন্যত্র চলেও যেতে পারে।
ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করা এই ধরনের মশাগুলি বংশবিস্তার করলে, তাদের সন্তানাদিও ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করতে থাকে। একে বলা হয় ট্রান্স ওভারিয়ান ট্রান্সমিশন। অন্যান্য মশার কিন্তু এই ক্ষমতা নেই।
এই মশা দমনের প্রধান উপায় হল জল জমতে না দেওয়া। বাড়ির টব, পট, চায়ের কাপ, ভাঁড় ইত্যাদি জায়গায় জল জমা আটকাতে হবে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন নির্মীয়মান বাড়ির গর্তে দিনের পর দিন জল জমে থাকতে দেখা যায়। এই জায়গাগুলিতে জল না জমার ব্যবস্থা করা চাই। এখন বর্ষাকাল, তাই এই বিষয়টিতে আরও বেশি করে জোর দেওয়া দরকার।
জাপানিস এনকেফেলাইটিসের মশা
কিউলেক্স মশা এই রোগ ছড়িয়ে থাকে। এই মশার তিনটি প্রজাতি রয়েছে— কিউলেক্স বিষ্ণু আই, কিউলেক্স সিউডো বিষ্ণু আই, কিউলেক্স ট্রাইটেনিওরিঙ্কাস। তবে সাধারণত কিউলেক্স বিষ্ণু আই মশার কারণেই বেশি সংখ্যক মানুষ জাপানি এনকেফেলাইটিস অসুখটিতে আক্রান্ত হন।
এই মশা নোংরা জায়গায় থাকতে পছন্দ করে। নর্দমা, ডোবা, খাল ইত্যাদি অপরিষ্কার জায়গা এই মশার বাসস্থান।
সাধারণত শীতকালে পরিযায়ী পাখির মাধ্যমে এই ভাইরাস এদেশে আসে। এরপর সেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে শূকরের শরীরে। কোনও কিউলেক্স প্রজাতির মশা ভাইরাস বহনকারী শূকরকে কামড়ালে মশার শরীরে এই ভাইরাস চলে আসে। তারপর সেই মশা কোনও সুস্থ মানুষকে কামড়ালে তাঁর শরীরে প্রবেশ করে এই ভাইরাস।
এই মশাকে আলাদা করে চেনার কোনও সহজ উপায় নেই। আর পাঁচটা সাধারণ মশার মতোই কিউলেক্স মশা দেখতে হয়। শরীরে দাগও থাকে না।
তবে অন্যান্য মশার সঙ্গে কিউলেক্স মশার বসার ভঙ্গিতে পার্থক্য রয়েছে। অন্যান্য মশার প্রজাতি একটি নির্দিষ্ট কোণে বসে, সোজা হয়ে বসতে পারে না। সেখানে কিউলেক্স মশা সোজা হয়ে বসতে সক্ষম।
এই মশার বংশবৃদ্ধি আটকাতে বাড়ির আশপাশের নোংরা ও জলা জায়গাগুলিকে পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনকেও যথাযোগ্য ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করুন।