বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
কেন নাম সোয়াইন ফ্লু?
সোয়াইন ফ্লু এক ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ। এইচ১এন১ নামের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের আক্রমণে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন।
সাধারণত তিন ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস রয়েছে— ইনফ্লুয়েঞ্জা এ, বি ও সি। এর মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা সি নিয়ে এত মাথা ঘামানোর দরকার নেই। ইনফ্লুয়েঞ্জা এ এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ভাইরাসেই মানুষ বেশি আক্রান্ত হন। এই দুইয়ের মধ্যে আবার ইনফ্লুয়েজ্ঞা এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যাই সবথেকে বেশি।
সোয়াইন ফ্লু হল ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ এ ভাইরাস। মুশকিল হল, ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ এ ভাইরাসের আক্রমণে একইসঙ্গে মানুষ ও পশু আক্রান্ত হতে পারেন। সোয়াইন ফ্লু রোগটির ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটে। এই ভাইরাসে শুধু মানুষ নয়, শূকরও একই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তাই এই রোগটির নাম সোয়াইন ফ্লু।
এই অসুখে আক্রান্ত শূকরের কাছাকাছি গেলে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই শূকরপালকদের বেশি সতর্ক থাকতে হয়। অনেকের ধারণা, শূকর খেলেও নাকি রোগটি হয়। এই ধারণার সত্যতা নেই।
রোগ ছড়ায় কীভাবে?
যে কোনও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতো এইচ১এন১ ভাইরাসটিও অত্যন্ত সংক্রামক। আর এই সংক্রমণ খুব সহজে এবং অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে একজন আক্রান্তের থেকে একজন সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে সমস্যা তৈরি করে। বেশিরভাগ সময়ই এই সমস্যা এপিডেমিকের বদলে প্যানডেমিকের আকার নেয়।
একটি নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের মধ্যে কোনও একটি নির্দিষ্ট সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে তাকে বলে এপিডেমিক। উদাহরণ হিসেবে, ধরুন টালার জলে কোনও সংক্রমণ থেকে কলকাতার মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আর অপরদিকে প্যানডেমিক কথাটির অর্থ হল একই সময়ে বিভিন্ন দেশে কোনও একটি নির্দিষ্ট ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া। যেমন ধরুন কোনও একটি নির্দিষ্ট সংক্রমণ ভারত, আফগানিস্তান, ইরান, সিঙ্গাপুর সহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে একই সময়ে ঘটছে।
এবার মানুষ থেকে মানুষে কীভাবে ছড়ায়, সেকথা বলি। আক্রান্ত ব্যক্তির লালা ও কফে এই ভাইরাস থাকে। আর হাঁচি-কাশির সময় অজান্তেই আক্রান্তের মুখ থেকে লালা ও কফ বেরিয়ে আসে। তাই আক্রান্ত হাঁচি-কাশির সময় অসাবধান থাকলে, তাঁর থেকে এক মিটার দূরত্বের মধ্যে থাকা কোনও ব্যক্তির শরীরে অনায়াসে এই রোগ আসতে পারে। অনেকসময় আক্রান্তের ব্যবহৃত জামা, রুমাল বা অন্য কোনও জিনিস ব্যবহার করলেও ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
যে কোনও বয়সের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে রোগ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়:
১. প্রথমবারের জন্য সোয়াইন ফ্লু-এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সময় পাঁচ বছরের নীচের বাচ্চা ও বয়স্করাই বেশি আক্রান্ত হন ২. নিয়মিত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খেতে হয়, এমন বাচ্চা বা সদ্য প্রাপ্তবয়স্কেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি ৩. এইচআইভি-এইডসের মতো অসুখ থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউনিটি) অনেকটাই কমে যায়। এক্ষেত্রেও এই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে ৪. শরীরে কিডনি, লিভার প্রতিস্থাপনের মতো অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হয়ে থাকলে নির্দিষ্ট কারণে ওষুধের মাধ্যমে ইমিউনিটি কমিয়ে রাখা হয়। তাই অঙ্গ প্রতিস্থপিত হয়েছে, এমন ব্যক্তিও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন ৫. অ্যাজমা, হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস, নিউরোমাস্কুলার রোগ সহ বিভিন্ন অসুখ থাকলে এই রোগে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয় ৬. সন্তানসম্ভবা মায়েরাও সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত হতে পারেন সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়া এলাকায় বসবাসকারীদের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটা বেশি।
লক্ষণ
সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের মতোই এই রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা মিলতে পারে—
জ্বর ঠান্ডা লাগা কাশি নাক দিয়ে জল গড়ানো গলা ব্যথা মাথা ব্যথা চোখে ব্যথা গাঁটে গাঁটে ব্যথা, পেশিতে ব্যথা ক্লান্তি ডায়ারিয়া বমিবমি ভাব বা বমি হয়ে চলা।
সমস্যা বাড়লে
অনেক সময় এই সমস্যা থেকে রোগী নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে যান। তবে ভাইরাসের কারণে সরাসরি ব্যক্তি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন না। ভাইরাস আক্রমণের ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়। শারীরিক এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিউমোকক্কাস, স্ট্যাফাইলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়াগুলি মানুষের বুকে ইনফেকশন তৈরি করতে পারে। ঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নিলে রেসিপিরেটরি ফেলিওর হয়ে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যেতে পারে। এছাড়া অনিয়মিত হৃদগতির সমস্যা (অ্যারিদমিয়া), হঠাৎ রক্তচাপ অনেকটা নেমে যাওয়া, মস্তিষ্কের সমস্যা সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলিও সংক্রমণের কবলে পড়তে পারে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
সাধারণত রোগ লক্ষণ দেখে আলাদা করে সোয়াইন ফ্লু কি না বোঝা যায় না। তাই এই সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার কোনও লক্ষণ বাড়াবাড়ি রকমভাবে দেখা দিলেই চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হতে হবে। অযথা রোগীকে বাড়িতে ফেলে রাখার কোনও মানে হয় না।
রোগ নির্ণয়
আক্রান্তের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে রিয়েল টাইম পিসিআর করে রোগটি সম্বন্ধে একটা ধারণ করা যায়। এছাড়া ভাইরাস আইসোলেশন, সেরাম টাইটার সহ বেশি কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।
সোয়াইন ফ্লু মানেই হাসপাতালে ভর্তি নয়
অন্য যে কোনও ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ফ্লু’র মতো সোয়াইন ফ্লু-ও বেশিরভাগক্ষেত্রেই আপনা থেকেই সেরে যায়। চিকিৎসকদের গাইডলাইন অনুযায়ী, রোগের লক্ষণগুলির তীব্রতা তেমন বেশি না দেখতে পেলে, সাধারণত রোগ পরীক্ষার জন্যও পাঠানো হয় না। রোগীকে বাড়িতে রেখে লক্ষণভিত্তিক কিছু চিকিৎসা করলেই পাঁচ থেকে সাতদিনের মধ্যেই রোগী ভালো হয়ে যান। সমস্যা সামান্য বেশি দেখলেও চিকিৎসক বাড়িতে রেখেই লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা করেন। শুধু প্রেসক্রিপশনে ওসেলটামিভির ওষুধটি জুড়ে দিলেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগী ভালো হয়ে যান।
লক্ষণগুলি অত্যন্ত জোরদার হলে বা সেকেন্ডারি কোনও ইনফেকশন জটিল আকার ধারণ করলেই একমাত্র রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে গাইডলাইন মেনে চিকিৎসা চলে।
সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধ
রোগীকে বাড়িতে সাবধানে রাখা দরকার। রোগীর কাছাকাছি গেলে এন ৯৫ মাস্ক ব্যবহার করাই ভালো। এখানে মাস্ক ব্যবহার করার বিষয়টি নিয়েও কয়েকটা কথা বলা দরকরা। এখনও বেশিরভাগ মানুষ সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে জানেন না। আসলে মাস্কের দু’টি দিক থাকে। একটি দিক রং করা এবং অন্য দিকটি সাদা। জীবাণু বেরনো আটকাতে রোগীকে মাস্কের রং করা দিকটি বাইরের দিকে রাখতে হবে। অপরদিকে রোগীর কাছাকাছি থাকা মানুষকে এর ঠিক বিপরীত, অর্থাৎ মাস্কের সাদা দিকটি বাইরে রেখে জীবাণুর প্রবেশ আটকাতে হবে রোগীর কাছ থেকে বেরিয়ে এসে ভালো করে হাত-মুখ ধুয়ে নেওয়া দরকার বাড়িতে সোয়াইন ফ্লু রোগী থাকলে রোগ প্রতিরোধে বাড়ির অন্যান্য সদস্যদেরও ওষুধ দেওয়া হয়। তাই বাড়িতে এই রোগাক্রান্ত থাকলে আজই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন এই রোগের এখন টিকাও বেরিয়ে গিয়েছে। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে সেই টিকাও নিতে পারেন। পরিশেষে বলি, সোয়াইন ফ্লু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। সঠিক সময়ে চিকিৎসা হলে এই রোগ থেকে একদম সেরে ওঠা যায়।