কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
ভূগোল বইয়ে তোমরা সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের কথা পড়েছ। কী কারণে, কোথায়, কখন, কত রকমের সাইক্লোন হয়, তা একপ্রকার জানা। কিন্তু তাই বলে ‘বম্ব সাইক্লোন’! এই শব্দবন্ধটি এক প্রকার অজানাই ছিল। যদি না তুষার দানবের দাপটে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ত শিকাগো, নিউ ইয়র্ক, মন্টানা, ওকলাহোমা, মিসৌরি, টেক্সাস থেকে কানাডার অন্টারিও, ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে নিউ ফাউন্ডল্যান্ড...। লক্ষাধিক বাড়ি বিদ্যুৎহীন। চারদিকে কেবল বরফ আর বরফ। যত দূর চোখ যায় সাদা আস্তরণে ঢেকেছে বাড়িঘর, রাস্তা, গাছপালা। রাস্তার পাশে দাঁড়ানো গাড়িও ঢেকে গিয়েছে বরফের পুরু আস্তরণে। তাপমাত্রা মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি। হাওয়া, তুষারঝড় আর কনকনে আবহাওয়ায় বিপর্যস্ত সাধারণ জীবন।
বম্ব সাইক্লোন বুঝতে গেলে সবার আগে জানতে হবে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় কাকে বলে? মহাসাগরের উপর হঠাৎ নিম্নচাপ বলয় তৈরি হলে ওই শূন্যস্থান পূর্ণ করতে উচ্চচাপ যুক্ত অঞ্চলের বাতাস ছুটে আসে। বাইরে থেকে আসা বাতাস যখন ওই স্থানে অবস্থান করে, তখন বর্তমানের গতিশীল অবস্থাটি আরও জোরালো হয়ে ওঠে। ফলে বাতাসের ঘূর্ণন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। সৃষ্টি হয় সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়। পরবর্তী সময় এই ঘূর্ণন ধীরে ধীরে স্থলভাগের উপরে উঠে আসে। শুরু হয় তাণ্ডব।
আর বম্ব সাইক্লোনে বায়ুর চাপ অস্বাভাবিক রকম কমে যায়। ২৪ ঘণ্টায় ২৪ মিলিবার পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এই সময় বায়ুর দু’টি ভরের মধ্যে চাপের পার্থক্য দ্রুত বাড়তে থাকে। সেটাই বাতাসকে প্রবল শক্তিশালী করে তোলে। বায়ুর গতিকে এভাবে তীব্রতর করে তোলার প্রক্রিয়ার নাম বোমোজেনেসিস। সোজা কথায়, মধ্য-অক্ষাংশে ঝড়ের কেন্দ্রভাগে বায়ুর চাপ প্রতিঘণ্টায় এক মিলিবার কমলে তাকে ‘বম্ব সাইক্লোন’ বলে। স্বাভাবিক ক্ষেত্রে বায়ুর চাপ যেখানে ১০৪৭ মিলিবার থাকে, সেখানে আমেরিকায় বায়ুর চাপ ১০০৩ থেকে ৯৬২ মিলিবারে নেমে গিয়েছে।
বম্ব সাইক্লোন কেন হয়? ঠান্ডা ও গরম বাতাসের তীব্র সংঘর্ষের ফলে এর উৎপত্তি হয়। সাধারণত, ঠান্ডা ও শুষ্ক বায়ু উপর থেকে নীচে নামে আর উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু গ্রীষ্মমণ্ডল থেকে উপরে উঠে আসে। দুই বিপরীতমুখী বাতাসের সংঘর্ষে বম্ব সাইক্লোন তৈরি হয়। উষ্ণ বায়ু দ্রুত উপরে উঠতে উঠতে মেঘের মতো অবস্থা তৈরি করে। কমতে থাকে বায়ুর চাপ। তৈরি হয় ঝড়, যা নিম্নচাপ কেন্দ্রের চারপাশে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ধাবিত হয়। তবে সমস্ত বম্ব সাইক্লোনই ঘূর্ণিঝড় নয়।
অবশ্য, ঘূর্ণিঝড়ের বহু বৈশিষ্ট্যের সঙ্গেই বম্ব সাইক্লোনের মিল আছে। প্রবল ঝোড়ো হাওয়া, ভারী বর্ষণ এবং ঝড়ের কেন্দ্রে আই বা চোখও তৈরি হয়। আসলে ঘূর্ণিঝড় সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে তৈরি হয়। সেকারণেই গ্রীষ্মে বা শরতের শুরুতে আমেরিকায় ঘূর্ণিঝড় দেখা দেয়। আর শরতের শেষে এবং বসন্তের শুরুতে সবচেয়ে বেশি বম্ব সাইক্লোনের দেখা মেলে। ওই সময় আতলান্তিকের হিমশীতল বাতাসের উপর উষ্ণ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বায়ু ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ঝড় তৈরি হয়।
তাহলে ঝড়ের নাম বম্ব সাইক্লোন কেন? ১৯৮০ সালের একটি গবেষণাপত্রে শব্দ দু’টি প্রথম ব্যবহার হয়েছিল। লিখেছিলেন আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা এমআইটির আবহাওয়াবিদ ফ্রেডরিক স্যান্ডার্স ও জন আর গ্যায়াকুম। আসলে ঘূর্ণিঝড়ের মরশুমে ঝড়ের তীব্রতা বোঝাতে এমন নামকরণ করা হয়েছিল। বম্বিং হলে সংশ্লিষ্ট এলাকা যেমন তছনছ হয়ে যায়, শীত মরশুমে এই সাইক্লোনের ক্ষতির বহরও নামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই।