পেশাদারি ও ব্যবসায়িক কর্মোন্নতি ও ধনাগম যোগ। শারীরিক সমস্যায় মানসিক অশান্তিভোগ। আঘাত লাগতে পারে। ... বিশদ
এই দীর্ঘ সময়ে তোমরা ৩৬টি অভিযানে কাকাবাবুকে পেয়েছ। তোমাদের মধ্যে যারা এখনও কাকাবাবুকে চেনো না, তাদের কাছে মানুষটার ছোট্ট করে একটা পরিচয় দেওয়া যাক। কাকাবাবু সমগ্রর প্রথম খণ্ডের ভূমিকায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘কাকবাবু ডিটেকটিভ নন, খুন-ডাকাতির তদন্ত করেন না। রহস্যময় দুঃসাহসী অভিযানেই তাঁর আগ্রহ, সন্তুও তাতেই মেতে ওঠে।’ কাকাবাবু ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগে চাকরি করতেন। বিশ্ব ইতিহাস এবং বাংলা সাহিত্যে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য। একবার আফগানিস্তানে এক মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি— বাদ দিতে হয় তাঁর একটা পা। কিন্তু তাঁর হাতের শক্তি দশাসই চেহারার মানুষকেও সহজেই কাবু করে ফেলে। নিজে থেকে কখনও কাউকে শারীরিক আঘাত না করলেও কাকাবাবুর একটা দৃঢ় সংকল্প রয়েছে, যদি তাঁকে কেউ আঘাত করে, তাহলে তিনি প্রতিশোধ নিতে ভোলেন না। রাজা রায়চৌধুরীর আপন ভাইপো সন্তু— কাকাবাবুর প্রায় সব অভিযানের সাক্ষী। এছাড়াও রয়েছে সন্তুর বন্ধু জোজো। জোজো আজগুবি গল্প এবং মনের খেয়ালে মিথ্যে ওস্তাদ। বলা যায় কাকাবাবুর গল্পে পাঠকের হাসির খোরাক সে। এছাড়াও কাকাবাবুর আইপিএস বন্ধু নরেন্দ্র ভার্মা, কাকাবাবুদের প্রতিবেশী পাইলট বিমান ও তার স্ত্রী দীপাকেও বেশ কিছু অভিযানে পাওয়া গিয়েছে।
মূলত তোমাদের মতো কিশোর পাঠকদের কথা মাথায় রেখেই কাকাবাবুকে সৃষ্টি করেছিলেন লেখক। তাই দেশ-বিদেশের অসাধারণ সব জায়গায় রহস্যের আড়ালে ভ্রমণের স্বাদ কাকাবাবুর অভিযানের অন্যতম আকর্ষণ।
পাশাপাশি সেখানে রয়েছে ইতিহাসের চমকপ্রদ অধ্যায়ের সহজ সরল ব্যাখ্যা। যেমন ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ উপন্যাসে কাকাবাবু সম্রাট কনিষ্কের মূর্তি উদ্ধার করেছিলেন। ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’তে আবার আন্দামানের ভয়ানক জারোয়াদের সম্মুখীন হন তিনি। ‘পাহাড় চুড়োয় আতঙ্ক’তে রহস্যময় ইয়েতির খোঁজে বের হন কাকাবাবু ও সন্তু। ‘মিশর রহস্য’ অভিযানে পিরামিডের দেশে হানি আলকাদিকে টেক্কা দিয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে, মোহন সিংয়ের দলবলকে কাবু করে উদ্ধার করেছিলেন ‘বিজয়নগরের হিরে’। ‘কাকাবাবু হেরে গেলেন?’-এ রয়েছে গুটেনবার্গের ছাপা প্রথম বাইবেলের সংস্করণ উদ্ধারের কাহিনি। এরকম আরও রোমহর্ষক গল্প দিনের পর দিন কিশোর তথা বাঙালি পাঠককে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করেছে।
বইয়ের পাশাপাশি সিনেমাতেও ছোট-বড় সকলের ভালোবাসা কুড়িয়েছে এই থ্রি মাস্কেটইয়ার্স। ১৯৭৯ সালে ছবিতে প্রথম কাকাবাবুর চরিত্রে রূপদান করেছিলেন শমিত ভঞ্জ। ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’ গল্প অবলম্বনে ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন তপন সিনহা। এরপর দীর্ঘ বিরতির পর ‘কাকাবাবু হেরে গেলেন?’ নিয়ে ছবি তৈরি করেন পরিচালক পিনাকী চৌধুরী। দর্শক এবারে কাকাবাবুর চরিত্রে পেলেন সব্যসাচী চক্রবর্তীকে। ছবি সফল হওয়ায় সিক্যুয়েল হল ‘এক টুকরো চাঁদ’ (মূল গল্প: সন্তু ও এক টুকরো চাঁদ)। এরপরের কাকাবাবুর ছবিগুলো তোমরা হয়তো অনেকেই দেখে ফেলেছ। কারণ বিগত দশ বছরে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় তোমাদের তিন-তিনটে ছবি উপহার দিয়েছেন। সেখানে কাকাবাবুর চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও সন্তুর ভূমিকায় আরিয়ান ভৌমিক অভিনয় করেছেন— ‘মিশর রহস্য’, ‘ইয়েতি অভিযান’ ও সাম্প্রতিক ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ (মূল গল্প: জঙ্গলের মধ্যে এক হোটেল)। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ছোটপর্দায় ধারাবাহিক ও টেলিফিল্মে কাকাবাবুর চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন অর্জুন চক্রবর্তী, সুমন্ত মুখোপাধ্যায়, সুদীপ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
আজকে তোমাদের সামনে বিনোদনের হাজার একটা উপাদান মজুত। কিন্তু তোমরা যারা বইপোকা, যারা বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে বসেই বুদ্ধি খরচ করে রহস্য সমাধানে শামিল হতে চাও, তাদের কাছে কাকাবাবু নিঃসন্দেহে আজও বড় আকর্ষণ।