বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
সূর্য সেনকে অনুপ্রাণিত করেছিল সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসটির জীবনদর্শন। তাঁর অসাধারণ সাংগঠনিক শক্তিতে তিনি ১৯১৭ সালে গড়ে তুললেন গুপ্ত বিপ্লবী সংস্থা ‘সাম্য আশ্রম’। তাঁর অনুগামীদের মধ্যে ছিলেন অম্বিকা চক্রবর্তী, গণেশ ঘোষ, নির্মল সেন, অনন্তলাল সিং, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা যোশিসহ আরও অনেকে। মাস্টারদা গড়ে তোলেন এক বিরাট বাহিনী। সেই বাহিনী ‘স্বদেশি ডাকাত’ পরিচয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহ করত।
১৯২৪ সালে জারি হয় ‘বেঙ্গল অর্ডিন্যান্স’। ১৯২৬ সালে গ্রেপ্তার করা হয় মাস্টারদাকে। ১৯২৮ সালে কারামুক্তির পর আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির অনুপ্রেরণায় স্বদেশিদের নিয়ে গড়ে তোলেন ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, চট্টগ্রাম শাখা। যার প্রেসিডেন্ট হন তিনি নিজে।সূর্য সেনের বিপ্লবী জীবনের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল আয়ারল্যান্ডের ইস্টার বিদ্রোহের দিনটিতেই মাস্টারদার নেতৃত্বে একদল বিপ্লবী মুষ্টিমেয় অস্ত্রশস্ত্র সম্বল করে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েন! চট্টগ্রাম পুলিসের হেডকোয়ার্টার ও অক্সিলিয়াটি ফোর্সের অস্ত্রাগার চলে আসে তাঁদের দখলে। চট্টগ্রামকে অন্যান্য জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার জন্য উপড়ে ফেলা হয়েছিল টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন যোগাযোগ। বিপ্লবীদের কারণে ব্রিটিশ শাসনের পদস্থ কর্মচারীরা প্রাণভয়ে মাঝ সমুদ্রে জাহাজের ভেতর লুকিয়ে পড়েছিল। ৪৮ ঘণ্টার জন্য মাস্টারদার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম হয়েছিল ব্রিটিশ শাসনমুক্ত সম্পূর্ণ স্বাধীন!তাঁদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য এরপর ইংরেজ শুরু করল গেরিলা যুদ্ধ। যুদ্ধ ক্ষেত্রে মাস্টারদা সারাক্ষণ নির্দেশ দিতে থাকেন সবার মনোবল অটুট রাখার জন্য। বুকে হেঁটে বিপ্লবীদের বন্দুকে গুলিও জুগিয়ে দেন। শেষপর্যন্ত তাঁরই নির্দেশে বিপ্লবীরা এবং তিনি নিজে আত্মগোপন করেন।কিছুদিন পর আবারও মাস্টারদার পরিকল্পনায় শুরু হয় সশস্ত্র বিপ্লব— পাহাড়তলির ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ। ইংরেজ মাস্টারদাকে গ্রেপ্তারের জন্য অনেক টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। তাঁকে গ্রেপ্তার করতে এসে ক্যাপ্টেন ক্যামারুন নিহত হন। কিন্তু ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জ্ঞাতিভাই নেত্র সেনের বিশ্বাসঘাতকতায় গৈরালা গ্রামে ধরা পড়ে যান মাস্টারদা! বিচারের নামে চলে প্রহসন! ফাঁসির সাজা হয় মাস্টারদা সূর্য সেনের! অবশ্য তার আগেই সেই বিশ্বাসঘাতক নেত্র সেন ও মাস্টারদার গ্রেপ্তারের জন্য দায়ী পুলিস অফিসার মাখনলাল— দু’জনেই বিপ্লবীদের হাতে নিহত হন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাস্টারদা সূর্য সেনের ভূমিকা চিরস্মরণীয়। পাহাড়তলির ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়ে তাঁর দলেরই নেত্রী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এই প্রীতিলতাই স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রথম মহিলা শহিদ।
১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি ফাঁসি হয় এই মহান বিপ্লবী নেতা তথা সকলের প্রিয় মাস্টারদার।