পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
ছোট বোনের সঙ্গে খেলে সময় কাটাব
দুর্গাপুজো হল বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব। শরৎকালে সকলে এই পুজোয় মেতে ওঠে। কিন্তু ২০২০ সালের পুজো ছিল অন্যরকম। করোনা মহামারী এই পুজোর উপরেও প্রভাব ফেলেছিল। সেইজন্য গত বছরের পুজো দেখে আমার মন ভীষণ খারপ হয়ে গিয়েছিল। কলকাতায় দুর্গাপুজোয় কেমন ভিড় হয় বাবা-মা গল্প করেন। কিন্তু গত বছর রাস্তায় সেই রকম ভিড় ছিল না। গান-বাজনা আর আলোও অনেক কম ছিল। আমিও ঠাকুর দেখতে বের হয়নি। এবারের পুজোতেও অনেকটা গত বছরের মতো অবস্থা। করোনার ভয়ে এবারও বাবা-মা ঠাকুর দেখতে নিয়ে যাবে না বলেছে। তাই এ বছরও গোটা পুজো ঘরে বসেই কাটাতে হবে। এ বছর টিভিতে ঠাকুর দেখব। আর বাড়িতে বাবা, মা ও ছোট বোনের সঙ্গে খেলা করে, গল্প করে সময় কাটাব। মা বলেছে, আমার প্রিয় খাবারগুলো সপ্তমী, অষ্টমী আর নবমীতে রান্না করে খাওয়াবে। প্যান্ডেলে যেতে পারব না বলে মন তো ভীষণ খারাপ হবেই, কিন্তু সুস্থ থাকাটাও তো দরকার, সেটাই বাবা বার বার বলছে। দুর্গা মাকে বলব, করোনা যেন চলে যায়।
পঞ্চসায়র শিশু নিকেতন
মায়ের হাতের সুস্বাদু রান্না মাস্ট
গভঃ স্পনসর্ড গার্লস হাইস্কুল
টিভিতেই ঠাকুর দেখব
এসেছে শরৎ, হিমের পরশ
লেগেছে হাওয়ার পরে,
সকাল বেলায় ঘাসের আগায়
শিশিরের রেখা ধরে।
শিশিরে ভেজা ঘাস আর শিউলির মিষ্টি গন্ধ নিয়ে মা দুর্গা মর্তে আসেন। কাশবনে লেগে যায় আনন্দের হিল্লোল। পুজো মানেই ঘোরা, হই-হুল্লোড়, নতুন জামা। কিন্তু কোভিড নাইন্টিন আমাদের কাছ থেকে সে সব কেড়ে নিয়েছে। গত বছর পুজোর পাঁচটা দিন স্রেফ ঘরে বসে কেটেছে। এবারও তো করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের ভয়! তবে, যেহেতু রোগের প্রকোপ অনেকটা কম, তাই ইচ্ছে আছে নতুন জামা পরে পাড়ার পুজো মণ্ডপে যাব। সব ঠিক থাকলে মায়ের সঙ্গে গিয়ে অষ্টমীর অঞ্জলিটা দিয়ে আসব। তবে, বাড়িতে সবার সঙ্গে জমিয়ে মজা করব, চলবে এলাহি খাওয়াদাওয়া। আমার একজন সঙ্গী আছে, যে সব সময় আমার সঙ্গে থাকে। পুজোর দিনগুলোতেও থাকবে— সে হল গল্পের বই। আশা করি, দুর্গামায়ের আশীর্বাদে মহামারীর কালো মেঘ কেটে যাবে এবং আগামী বছর আমরা আবার আগের মতো ঠাকুর দেখতে পারব।
পুজো আসছে আসছে এই ভালো, এসে গেলেই তো এই যেন শেষ হয়ে গেল মনে হয়। তবে, আমি কিন্তু এবার পুজোয় খাসা প্ল্যানিং করেছি। শারদোৎসবে বাঙালির মন কি আর ঘরবন্দি থাকতে চায়? কিন্তু নিজের আর বাকিদের সুরক্ষার জন্য এবারও বাড়িতেই থাকতে হবে আমাদের । পুজোর শেষে ডাক্তারখানার বাইরে যেন ভিড় না পড়ে যায়, শুধু এই প্রার্থনাই করি মায়ের কাছে । করোনার বাধ্যবাধকতার জন্য এবারের পুজোর শপিংটা এক্কেবারে জমেনি। এবার যে অষ্টমীর রাতে ব্যান্ডেড পায়ে দেশপ্রিয় পার্কে যাওয়া হবে না, সেটাও জানি। তবুও মায়ের আগমনে নিজের মতো আনন্দ খুঁজে নেওয়ার প্ল্যান করেছি। সপ্তমীতে বেশ কয়েকজন বন্ধুর নিমন্ত্রণ আমাদের বাড়িতে। সেখানেই জমবে আড্ডা। আর অষ্টমীতে মণ্ডপে পুষ্পাঞ্জলি আর মায়ের হাতের লুচিতেই আমি খুশি। নবমীতে বন্ধুদের সঙ্গেই চলবে দেদার হাহাহিহি। আর দশমীতে পাড়ায় মা-কাকিমাদের সিঁদুরখেলাটা কোনও মতে মিস করব না। সামাজিক দূরত্ব মেনে সিঁদুরখেলা দেখব। নিউ নর্মালে এবার না হয়, বাড়িতে থেকেই মায়ের আগমনী গান গাইব।
ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখা হবে না শুনে আমার খুব মনখারাপ। বাড়িতে দাদা রয়েছে, দাদার সঙ্গে খেলেই পুজোর পাঁচটা দিন কাটাতে হবে। আর পাঁচদিন সকালে বিকেলে বাড়িতেই নতুন জামা পরব। সবচেয়ে ভালো এ ক’দিন একদম পড়তে বসতে হবে না। মা-বাবাও বাড়িতে থাকবে, ওদের সঙ্গে অনেক গল্প হবে। দাদু-ঠাম্মা তো রয়েইছে। অষ্টমীতে মামার বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। দাদু-দিদার কাছে অনেক কিছু খাবার আবদার করব। অষ্টমীতে অঞ্জলি দিতে আমার খুব ভালো লাগে। তবে, এবার হবে কি না জানি না। দুর্গা ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করব, এই মহামারীতে যেন সবাই সুস্থ থাকে।
এবার পুজোর খেলাটাও মাটি
পুজো মানে সবার কাছে নতুন জামা আর ঠাকুর দেখা। কিন্তু আমাদের গ্রামের ছেলেমেয়েরা দুর্গাপুজো বলতে এই দুটো জিনিস ছাড়াও তৃতীয় একটি বিষয় বোঝে— সেটি হল ফুটবল খেলা। শুনতে অবাক লাগলেও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আমাদের কাষ্টমহল গ্রামে স্কুলমাঠে ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। আর ফাইনাল খেলাটা থাকে নবমীর দিন। কিন্তু সেই আনন্দের দিনগুলো গত বছর থেকে ফিকে হয়ে গিয়েছে। ছোঁয়াচে রোগের জন্য সবকিছুতেই বাধা। শুধু করোনা নয়, অতিরিক্ত বৃষ্টিতেও আমাদের গ্রামের মাঠঘাটের অবস্থা খারাপ। চারদিকে জল থইথই। সব মিলিয়ে পুজোর ক’টা দিন ঘরবন্দিই থাকতে হবে আর দূর থেকে দুর্গামাকে দর্শন করব। মনে মনে বলব, মা, আমাদের পুরনো দিনগুলো ফিরিয়ে দাও, আর তো ঘরবন্দি থাকতে পারছি না।