কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
দুই হাত ও পায়ের উপর ভর দিয়েই এই প্রাণী ধীরে সুস্থে ঘুরে বেড়ায়। তবে আপাতদৃষ্টিতে শান্ত মনে হলেও, তোমাদের অনেকের মতো এরাও দুষ্টুমির রাজা। হুড়মুড়িয়ে গাছে চড়া, বরফের মধ্যে ডিগবাজি খাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে লুটোপুটি করা—এমন সব কাজে একেবারে ওস্তাদ জায়ান্ট পান্ডা।
এই খুনসুটি করে চলা প্রাপ্তবয়স্ক জায়ান্ট পান্ডার ওজন হতে পারে ১০০ কিলোরও বেশি। পুরুষ পান্ডার তুলনায় মহিলা পান্ডার আকার, আকৃতি সাধারণত ছোট হয়। জঙ্গলের স্বাভাবিক পরিবেশে মোটামুটি ২০ বছর বয়স পর্যন্ত পান্ডা বেঁচে থাকতে পারে।
যত বিতর্ক গায়ের রঙে
আগেই যেমনটা বলেছি বন্ধুরা, জায়ান্ট পান্ডার শরীরে মাত্র দু’টি রং থাকে— সাদা এবং কালো। চোখের চারদিক, কান, নাক, হাত, পা হয় কালো। আর বাদাবাকি শরীর সাদা। পান্ডার শরীরের রং কেন এমন হল, এই নিয়েও জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে জোর বিতর্ক রয়েছে। একদল বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই সাদাকালো রং পান্ডাকে বাঁশের ঘন জঙ্গল, বরফ মিশ্রিত পাহাড়ে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করে। অপরদল বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন, এই প্রাণীর গায়ের রঙের নেপথ্যে রয়েছে শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখার খেলা। কালো রং তাপমাত্রা শোষণ করে আর অপরদিকে সাদা রং গরমকে প্রতিফলিত করে। এই অদ্ভুত উপায়েই নাকি শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য আনে পান্ডা। এমনই অদ্ভুত তত্ত্ব রয়েছে জায়ান্ট পান্ডার গায়ের রঙের নেপথ্যে। তবে বন্ধুরা, তত্ত্ব অনেক থাকলেও, এখনও কোনও ধারণাকেই নির্ভুল বলে প্রমাণ করা যায়নি। তাই বিতর্ক থাকছে, থাকবে।
কোথায় বাস?
বর্তমানে চীনের দক্ষিণ-মধ্য সিচুয়ান, শানক্সি এবং গানসু প্রদেশের পাহাড়ের বুকেই এই সুন্দর প্রাণীটির দেখা মেলে। কিন্তু আগে পাহাড়ের তলদেশেও জায়ান্ট পান্ডা বাস করত। ধীরে ধীরে মানুষের বসতি তৈরি হওয়ার কারণে সেই অঞ্চল ছেড়ে এখন পার্বত্য অঞ্চলের ঠান্ডা, ভেজাভেজা পরিবেশকেই আপন করে নিয়েছে এই স্তন্যপায়ী প্রাণী। পাহাড়ের বুকে ঘন বাঁশ বনে জায়ান্ট পান্ডা থাকতে ভালোবাসে।
খাওয়াদাওয়া
আমার, তোমার মতোই পান্ডাও একটি সর্বভুক প্রাণী। কিন্তু শুনলে অবাক হবে বন্ধুরা, সর্বভুক হয়েও এই প্রাণী প্রায় তৃণভোজী জীবনযাপন করে। পান্ডার খাদ্য তালিকায় ৯৯ শতাংশ জুড়েই থাকে বাঁশ। বাঁশ পাতা, বাঁশের শাঁসই হল পান্ডার সবচেয়ে প্রিয় আহার। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে অন্য উদ্ভিজ্জ খাদ্য, মাছ বা ছোটখাট প্রাণীও পান্ডা মুখে পুরে দেয়।
একই ধরনের খাবার খেলেও খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে পান্ডার জুড়ি মেলা ভার। জানলে অবাক হবে, দিনের মধ্যে প্রায় ১২ ঘণ্টা শুধু খেয়েই কাটিয়ে দেয় তারা। এবার তোমাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন আসছে, এই এতক্ষণ ধরে খাওয়ার পিছনের কারণটা কী? আসলে বাঁশ তেমন কোনও পুষ্টিকর খাদ্য নয়। পাশাপাশি পান্ডারা যতটা পরিমাণ খায় তার মাত্র এক-পঞ্চমাংশ হজম করতে পারে। তাই এমন নাদুসনুদুস চেহারা ধরে রাখতে তাদের অনেকটা সময় ধরে অনেকটা খাবার দ্রুত গতিতে খেতে হয়। তথ্য বলছে, প্রতিদিন একটি জায়ান্ট পান্ডার নিজের ওজনের ১৫ শতাংশ পর্যন্ত খাবার খেতে হতে পারে। অর্থাৎ পান্ডার ওজন ১০০ কেজি হলে দিনে ১৫ কেজি খাবারও সে অনায়াসে খেয়ে নেয়। এতটা পরিমাণ খাবার খেতে তো সময় লাগবেই।
আবার এদিকে বাঁশের মতো শক্ত খাবারকে ভেঙে, নিংড়ে খাবার জন্য দাঁত, মাড়ি মজবুত হওয়া জরুরি। জায়ান্ট পান্ডার ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয় না। এই প্রাণীর কষের দাঁতের আকার অনেকটাই বড় এবং সমতল হয়। ফলে বাঁশকে দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে ফেলতেও পান্ডার তেমন অসুবিধা হয় না।
দর্শন পাওয়া মুশকিল
জানলে দুঃখ পাবে বন্ধুরা, বর্তমানে প্রাকৃতিক পরিবেশে খুব কম সংখ্যক পান্ডাই বেঁচে থাকে। সংখ্যাটা মোটামুটি দেড় হাজারের মতো। আর এরা এতটাই দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে থাকে যে, তাদের দেখা পাওয়াই দায়। তবে, জঙ্গলে দেখা সমস্যা হলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চিড়িয়াখানায় এই বিরল প্রাণীটির দেখা মেলে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এর মধ্যে একটি চিড়িয়াখানাও ভারতে নেই। চীন ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া, আমেরিকার কয়েকটি চিড়িয়াখানায় এই প্রাণী রয়েছে। তাই জায়ান্ট পান্ডা দর্শন করতে হলে দেশের মাটি ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাতেই হবে।