বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
আকাশ পানে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক রকেট। রকেটটির নীচের দিক থেকে দপদপিয়ে বেরচ্ছে আগুন। কাউন্টিং চলছে। ফাইভ, ফোর, থ্রি, টু, ওয়ান... ব্যস! এক মহাকাশযানকে (স্পেস ক্রাফট) সঙ্গী করে ঊর্ধ্বমুখে রওনা দিল রকেটটি। কয়েক পলকের অপেক্ষা। চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল সেই রকেট। প্রচণ্ড গতিতে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে অতিক্রম করে উপরে উঠতে থাকল। একসময় তা বিশ্বের সমস্তরকম টানাটানিকে উপেক্ষা করে ছিটকে বেরিয়ে গেল। পৌঁছে গেল মহাকাশে। এরপর রকেটটি নিজেকে মহাকাশযানটির থেকে আলাদা করে নিল। তবে এখনও যাত্রা শেষ হয়নি। মহাকাশযান নিজের লক্ষ্যে অবিচল। একসময় তা পৌঁছে গেল মহাকাশে ভেসে চলা এক বিরাট যন্ত্রের কাছে। মহাশূন্যে সাঁতরে চলা যন্ত্রটি হল ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন। তারপর স্পেস স্টেশনের সঙ্গে জুড়ে গেল মহাকাশযান। স্পেস ক্রাফ্টের ভিতরে থাকা মানুষগুলি চলে গেলেন স্পেস স্টেশনে। এখানেই তাঁরা আগামী কয়েকদিন থাকবেন। মহাবিশ্বের নানা রহস্যভেদ করতে লেগে পড়বেন। চলবে নিরন্তর গবেষণা এবং রক্ষণাবেক্ষণ।
আমার অনুসন্ধানী বন্ধুরা, তোমরাও নিশ্চয়ই পৌঁছে যেতে চাও স্পেস স্টেশনে! তবে তোমাদের প্রথমেই জানিয়ে রাখি, স্পেস স্টেশনে যাওয়ার পথটি কিন্তু বেজায় কঠিন। অনেক প্রতিকূলতাকে জয় করেই একজন মানুষ যান স্পেস স্টেশন। এখানে পৌঁছানোর জন্য যেমন বুদ্ধিমান হওয়া প্রয়োজন, তেমনই দরকার শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা। নইলে এমন এক জায়গায় থাকাটাই অসম্ভব। তাই বন্ধুরা এখন থেকেই তৈরি হয়ে যাও। শুরু করে দাও প্রস্তুতি।
স্পেস স্টেশন
স্পেস স্টেশন হল একটি মহাকাশযান। চাঁদের মতোই স্পেস স্টেশন পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে বছরের পর বছর। পৃথিবীর হাতে গোনা কয়েকজন বিজ্ঞানী স্পেস স্টেশনে বাস করেন। চলে গবেষণা। বুঝে নেওয়ার চেষ্টা হয় মহাকাশের পরিস্থিতি কীভাবে মানুষ, গাছগাছালি এবং অন্যান্য প্রাণীর উপর প্রভাব ফেলে। মহাকাশে পৃথিবীর জীবিত প্রাণী ও উদ্ভিদেরা কেমন আচরণ করে, সেটাও গবেষণার বিষয়। এছাড়া বিভিন্ন রাসায়নিক ও উপাদান মহাকাশে কেমন আচরণ করে, তাদের প্রকৃতির কোনও বদল হয় কি না, তাও নজরে রাখা হয়। পাশাপাশি মহাকাশ সম্পর্কিত নানা জটিল প্রশ্নের উত্তর খোঁজার কাজও চলে এখানে। এই ধরনের গবেষণা মানবজাতির তথ্যভাণ্ডারকে প্রতি মুহূর্তে সমৃদ্ধ করছে। তাই মহাকাশ বিজ্ঞানে স্পেস স্টেশনের ভূমিকা অপরিসীম।
সময়ে সময়ে বিভিন্ন মহাকাশযান স্পেস স্টেশনে যায়। সেই মহাকাশযানে চেপেই পৃথিবী থেকে মহাকাশচারীরা স্পেস স্টেশনে পৌঁছন। এর পাশাপাশি মহাকাশযানগুলি সেখানে বসবাসের রসদ যেমন খাবারদাবার, যন্ত্রাংশ সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস বয়ে নিয়ে যায়। এছাড়া এই যানে চেপেই স্পেস স্টেশনে থাকা মহাকাশচারীরা পৃথিবীতে ফিরে আসেন। জানলে অবাক হবে, বিভিন্ন দায়িত্ব নিয়ে এখনও পর্যন্ত ২১৮ বার নানা মহাকাশযান স্পেস স্টেশন গিয়েছে।
১৯৭১ সালে পৃথিবীর প্রথম স্পেস স্টেশনটি মহাকাশে পৌঁছে দেয় রাশিয়া। সেই স্টেশনটির নাম ছিল স্যালইউট ওয়ান। সেটাই ছিল মহাকাশ গবেষণার অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিন। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। পরবর্তী নানা সময়ে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলি স্পেস স্টেশন তৈরি করেছে এবং তা পৌঁছে দিয়েছে মহাকাশে।
এদিকে চীন চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল তিয়ানগঙ্গ নামের একটি স্পেস স্টেশন মহাকাশে পাঠিয়েছে। পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে চলা এই স্পেস স্টেশনটিতে তিনজন মহাকাশচারী ২৫ দিন বসবাস করতে সক্ষম হয়েছেন। অপরদিকে ভারতের ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গ্যানাইজেশন (ইসরো) প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে মহাকাশে দেশীয় স্পেস স্টেশন স্থাপন করার।
ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস)
মানব সভ্যতার আশ্চর্য কীর্তিগুলির মধ্যে একটি হল ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন! কারিগরিবিদ্যা, মহাকাশ গবেষণার চূড়ান্ত নিদর্শন। এখনও পর্যন্ত মহাকাশে মানুষের তৈরি করা সবথেকে বড় আকারের স্পেস স্টেশন হল আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন। এর আকার প্রায় একটি ফুটবল মাঠের সমান। ওজন প্রায় ৪২০ টন।
আমেরিকার ‘ন্যাশনাল এরোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (নাসা), রাশিয়ার ‘রসকসমোস স্টেট কর্পোরেশন ফর স্পেস অ্যাক্টিভিটি’ (রসকসমোস), জাপানের ‘জাপান এরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (জ্যাক্সা), ইউরোপ মহাদেশের ‘ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি’ (ইএসএ) এবং কানাডার ‘কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি’— এই পাঁচটি মহাকাশ গবেষণাকারী সংস্থা মিলে আইএসএস তৈরি করে। এই পাঁচটি মহাকাশ গবেষণাকারী সংস্থা বিশ্বের ১৫টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। মূলত এই ১৫টি দেশই এখানে নানা ধরনের গবেষণা চালায়।
বিশালকায় এই স্টেশনটিকে পৃথিবীতে বানিয়ে একবারে মহাকাশে পৌঁছনো সম্ভব হয়নি। বরং ধীরে ধীরে একটি একটি করে অংশ মহাকাশে পৌঁছে দেওয়া হয়। তারপর সেই সকল অংশগুলিকে মহাকাশেই জুড়ে তৈরি করা হয় আইএসএস। অবাক করা তথ্য হল, মহাকাশে এই অতিকায় স্টেশনটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে লেগেছে এক দশকেরও বেশি সময়। ১৯৯৮ সালে শুরু হয় কাজ, শেষ হয় ২০১১ সালে। এই দীর্ঘ সময়ে ৩০ বার রকেট উৎক্ষেপণ করে স্টেশনটির সরঞ্জাম মহাকাশে পৌঁছনো হয়। অবশ্য ২০০০ সাল থেকেই এই স্টেশনে মানুষ বসবাস করছেন।
পৃথিবী থেকে ৪২০ কিমি উপরে আইএসএস-এর অবস্থান। এই উচ্চতায় ঘণ্টায় ২৮ হাজার কিমি গতিবেগে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে এই মহাকাশযান। এই দ্রুততায় প্রতি ৯২.৭ মিনিটে পৃথিবীর চারদিকে একবার চক্কর দিয়ে ফেলে আইএসএস।
স্পেস স্টেশনের অন্দর
মানুষের বসবাসযোগ্য প্রায় সমস্ত রকম ব্যবস্থাই থাকে স্পেস স্টেশনে। আছে অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি। এখানেই বিভিন্ন গবেষণার কাজ নির্বিঘ্নে চলে। এছাড়া খাওয়ার জন্য, শোয়ার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। সবথেকে বড় কথা, বসবাসরত মহাকাশচারীদের শরীরচর্চার জন্যও নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে স্পেস স্টেশনে।
ভেসে ভেসে কাজ
স্পেস স্টেশন মহাকাশে অবস্থান করে। আর মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রায় থাকে না বললেই চলে। ফলে এখানে আসা মহাকাশচারীরা নিজের ওজন অনুভব করেন না। স্পেস স্টেশনের ভিতরে কাজ করার সময় তাঁরা ভেসে ভেসে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যান। হাঁটার প্রয়োজনই পড়ে না।
এখানে আসা মহাকাশচারীরা মূলত গবেষণার কাজই করেন। পাশাপাশি স্পেস ক্রাফ্টটির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্বও তাঁদের মধ্যে নির্দিষ্ট মানুষজনকে সামলাতে হয়। সেই মানুষগুলিই স্পেস ক্রাফটের কোনও অংশ বিকল হলে তা ঠিক করেন।
স্পেস ওয়াক
স্পেস স্টেশনের বাইরে মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছ তুমি। অসংখ্য তারা, গ্রহদের সঙ্গে তালে তাল রেখে উড়ে চলেছ। এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা! এই হল স্পেস ওয়াক। বিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম একস্টা ভেহিক্যুলার অ্যাক্টিভিটি। স্পেস স্টেশনের বাইরের অংশের রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই মূলত স্পেস ওয়াকে বেরতে হয়। মহাকাশে গা ভাসিয়ে দেওয়ার আগে মহাকাশচারীরা বিশেষ পোশাক পরেন। এই পোশাক তাঁদের বাইরের আবহাওয়া থেকে রক্ষা করে এবং প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পৌঁছে দেয়।
স্পেস ওয়াক করার সময় মহাকাশচারী সেফটি টিথার নামক এক ধরনের দড়ি দিয়ে নিজেকে স্পেস ক্রাফটের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। এই সেফটি রোপ তাঁকে দূরে মহাশূন্যে হারিয়ে যেতে দেয় না।
খাওয়াদাওয়া
খাওয়া নিয়ে কোনও চিন্তা করো না বন্ধু। খাবারের কোনও অভাব এখানে নেই। মাছ, মাংস, ডিম, শাকসব্জি, স্ন্যাকস, চা, কফি— প্রায় সবধরনের খাবারই স্পেস স্টেশনে মজুত থাকে। তবে এক্ষেত্রে খাবার তৈরি এবং সংরক্ষণ করা হয় একটু অন্যভাবে। পৃথিবী থেকে বিশেষভাবে বানানো খাবার স্পেস স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ধরনের খাবারকে বলে ‘ফ্রিজ ড্রায়েড মিল’। খাওয়ার আগে এই প্যাকেটবন্দি খাবারকে জল দিয়ে গরম করে নিতে হয়। আবার কিছু খাবার একবারে তৈরি করা অবস্থাতেই আসে। সেই খাবার শুধু গরম করে মুখে পুরে দিলেই হল।
মাধ্যাকর্ষণ শক্তি না থাকার কারণে মহাকাশযানের ভিতর খাবারদাবার উড়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই স্পেস স্টেশনের অন্দরে খাবার খাওয়ার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। খাওয়ার সময় খাবারের প্যাকেটগুলি যাতে এদিকওদিক উড়ে না যায়, সেই জন্যও বিশেষ প্লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। এই প্লেটগুলির মধ্যে প্যাকেটবন্দি খাবারকে আটকে রাখা যায়। এছাড়া প্লেটের মধ্যেই থাকে চুম্বক। এই চুম্বকে খাবারের প্যাকেট কাটার কাঁচি, খাবার কাটার ছুরি ও চামচ আটকে থাকে।
এখানে জলও থাকে প্যাকেটবন্দি। জলের প্যাকেটের মুখে একটি ছোট নল লাগানো থাকে। সেই নল মুখে পুরে জল পান করতে হয়। মনে রাখতে হবে, জল প্যাকেটের বাইরে গেলে তা বিন্দুর আকারে ভেসে বেড়াবে। তখন আর এক সমস্যা! এখানে আশ্চর্য আরও এক তথ্য বলে ফেলা যাক। স্পেস স্টেশনে সমস্ত ধরনের বর্জ্য জলকে পরিশোধিত করে পানীয় জলে রূপান্তরিত করা হয়। অর্থাৎ ফেলনা জল বলে কিছুই নেই।
ঘুম
এখানে শোয়ার জন্য রয়েছে স্লিপ স্টেশন। একটা বড় কিয়স্ক বা আগেকার দিনের টেলিফোন বুথের মতো আকারের হয় এই স্লিপ স্টেশন। ঘরে কম্পিউটার, জামাকাপড়, বই সহ প্রয়োজনের বেশ কিছু জিনিস থাকে। এছাড়া থাকে স্লিপিং ব্যাগ। এর উপর শরীর রেখেই মহাকাশচারীরা ঘুমিয়ে থাকেন।
স্নান
তোমরা যেমন মাথায় জল ঢেলে স্নান করো, সেই সুখ মহাকাশচারীদের নেই। তাঁরা তরল সাবান, সামান্য জল ব্যবহার করে টাওয়েল দিয়ে গা মুছে নেন। চুল পরিষ্কার রাখতে তাঁরা ব্যবহার করেন ওয়াটার লেস শ্যাম্পু। চুলে জল একেবারেই না দিয়ে বা সামান্য জল দিয়ে এই শ্যাম্পু মাথায় দেওয়া হয়। তারপর টাওয়েল দিয়ে মুছে নিতে হয় চুল। এই হল শরীর পরিষ্কার রাখার পদ্ধতি।
মহাশূন্যের বিপদ
মহাশূন্যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অনুপস্থিতি মানবশরীরে নানা সমস্যা তৈরি করে। মহাকাশে পৌঁছানোর পরই শরীরের তরল মাথার দিকে বইতে শুরু করে। এরফলে ঠান্ডা লাগা, নাক বন্ধ হওয়া, মুখ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। এই সমস্যারই নাম স্পেস সিকনেস। এছাড়া মাধ্যাকর্ষণ বল না থাকায় এখানে কাজ করার জন্য শরীরকে বেশি খাটতে হয় না। এই কারণে পেশির ক্ষমতা কমে যেতে পারে। মানুষ দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন। এই সমস্যা দূর করতে স্পেস স্টেশনে এক্সারসাইজ করতেই হয়। তবেই মাংসপেশি নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারে। আবার মাধ্যাকর্ষণের অভাবে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। এই সমস্যার দিকেও নজর রাখতে হয়।
এছাড়াও মহাশূন্যে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। সেই সমস্যা থেকে দূরে থাকতে মহাকাশচারীরা নিজেদের শরীরের দিকে কঠোর নজর রাখেন। বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করে দেখে নেন শরীর কেমন রয়েছে ইত্যাদি। এছাড়া মানসিকভাবেও মহকাশচারীদের সুস্থ ও সতেজ থাকা ভীষণ জরুরি।
স্পেস ট্রেনিং
প্রথমেই বলেছি, মহাশূন্যে যাওয়ার রাস্তাটা সহজ নয়। মহাকাশচারীদের প্রত্যেককে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও গবেষণামূলক বিষয়ে পারদর্শী হতে হয়। পাশাপাশি ফিট থাকতে হয় শরীর ও মন উভয় দিক থেকেই। এক্ষেত্রে ট্রেনিং হল সবথেকে জরুরি। কারণ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাটিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত দ্রুত গতিতে রকেট চলে। এই অত্যধিক গতি শরীরের উপর চাপ বাড়িয়ে দেয়। এই অবস্থায় মাথা ঘোরা, বমি পাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই প্রথমেই মহাকাশচারীদের জি ফোর্স ট্রেনিং করতে হয়। এক্ষেত্রে একটি যানের মধ্যে বসিয়ে গোল করে ঘোরানো হয়। দেখা হয় মানুষটির শরীর কতটা চাপ সহ্য করতে পারে। এছাড়া মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ নেই। অর্থাৎ মহাকাশচারী নিজের ওজন অনুভব করবেন না। এই অবস্থায় কীভাবে থাকতে হয়, তারও ট্রেনিং রয়েছে। বিশেষ পোশাক পরিয়ে জলের ভিতরে ট্রেনিং দেওয়া হয়। কারণ জলের তলায়ও মানুষের ওজন অনেকটাই কমে যায়। পাশাপাশি কৃত্রিম ‘ওয়েটলেস ভল্ট’-ও রয়েছে। এখানেও মানুষ নিজের ওজন অনুভব করেন না। ওয়েটলেস ভল্টেও ট্রেনিং চলে।
এছাড়াও স্পেস স্টেশনে কীভাবে থাকবে, কীভাবে ঘুমাবে, কীভাবে খাবে ইত্যাদি দৈনন্দিন নানা অপরিহার্য কাজ করার ট্রেনিংও দেওয়া হয়। সর্বোপরি স্পেস স্টেশন সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান থাকাও খুবই জরুরি। সবমিলিয়ে অত্যন্ত কঠিন ট্রেনিংয়ের মধ্যে দিয়ে মহাকাশচারী যান। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই মেলে রকেটে ওঠার ছাড়পত্র।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, মহাকাশে বাস করতে চাইলে বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে তোমাদের। তাই এখন থেকেই নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে তৈরি করো। মন দাও পড়াশোনায়। তবেই স্পেস স্টেশনে বসে নীচের নীল পৃথিবী দেখতে পাবে।
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে